কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা জল্পনার ইতি টেনে অবশেষে গত ৬ জানুয়ারি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ২০১৫ সাল থেকে লিবারেল পার্টির নেতা হিসেবে টানা তিনটি নির্বাচন জিতলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, আবাসন সংকট এবং অভিবাসনের চাপ মোকাবিলায় ব্যর্থতার অভিযোগে দ্রুত সমর্থন হারাচ্ছিলেন এ কানাডীয় নেতা।
Advertisement
ট্রুডো পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ায় ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি এখন নেতৃত্ব সংকটে পড়েছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার বাধ্যবাধকতার কারণে দলটিকে দ্রুত নতুন নেতৃত্ব ঠিক করতে হবে। ট্রুডোর বিতর্কিত রাজনৈতিক উত্তরাধিকার এবং কানাডার সামনে থাকা বাণিজ্য যুদ্ধ, ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি ও মন্দাপ্রবণ অর্থনীতি মোকাবিলার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করবে এই নির্বাচনের ফলাফল।
পদত্যাগের সময় ট্রুডো বলেছেন, পরবর্তী নির্বাচনে এই দেশের একজন সত্যিকারের বিকল্প পাওয়া উচিত। অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে আমি আর সেরা বিকল্প হতে পারছি না।
আরও পড়ুন>>
Advertisement
ট্রুডোর নেতৃত্বাধীন লিবারেল পার্টির বর্তমান অবস্থাকে ‘ধ্বংসস্তূপ’ বলা হচ্ছে। প্রায় এক দশকের শাসনের পর ভোটারদের সমর্থন কমে যাওয়ায় দলটি এখন গভীর সংকটের মুখে। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ১৬ শতাংশ ভোটার লিবারেলদের সমর্থন করছেন। বিপরীতে, পিয়েরে পয়লিয়েভের কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ৪৫ শতাংশ জনসমর্থন।
এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জও লিবারেল পার্টির জন্য একটি বড় বাধা। ২০২৪ সালের প্রথম নয় মাসে কনজারভেটিভরা সাড়ে ২৯ মিলিয়ন কানাডীয় ডলার তহবিল সংগ্রহ করলেও লিবারেলরা এর মাত্র এক-তৃতীয়াংশ সংগ্রহ করতে পেরেছে।
নতুন নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জট্রুডোর উত্তরসূরি মাত্র কয়েক সপ্তাহ সময় পাবেন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি এবং লিবারেল মন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড এই প্রতিযোগিতায় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে উঠে এসেছেন।
কিন্তু আসন্ন নির্বাচনে দলের জন্য মূল চ্যালেঞ্জ হবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি। ট্রাম্প আগামী ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তিনি এরই মধ্যে কানাডার ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।
Advertisement
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালগারির অর্থনীতিবিদ ট্রেভর টম্বের মতে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কানাডার জিডিপি ২ দশমিক ৬ শতাংশ কমে যেতে পারে, দেখা দিতে পারে অর্থনৈতিক মন্দাও।
সেক্ষেত্রে, আসন্ন নির্বাচন কেবল লিবারেল পার্টির ভবিষ্যতের ওপর নয়, বরং কানাডার জাতীয় পরিচয়ের ওপরও গভীর প্রভাব ফেলবে। প্রগতিশীল রাজনীতির এক দশক পর দেশটি এখন এক নতুন অধ্যায়ের সন্ধিক্ষণে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্টকেএএ/