নতুন বছরে গ্রাহকের আস্থা আর ব্যাংকের সোনালি অতীত ফিরিয়ে আনাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুস সাদাত। চোখ রাঙানো খেলাপি ঋণকে গুরুত্ব দিয়ে আদায়ের পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি।
Advertisement
ব্যাংকটির বর্তমান অবস্থা ও নতুন বছরের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন নাজমুস সাদাত। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইয়াসির আরাফাত রিপন।
জাগো নিউজ: এসআইবিএলের সার্বিক অবস্থা এখন কেমন?
নাজমুস সাদাত: মাঝে একটা সময় এমন হয়েছিল যে, ব্যাংক থেকে টাকা যেত কিন্তু আসতো না। সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এখন আমানত আসছে, টাকা (বিনিয়োগ) যাচ্ছে। লেনদেনের ক্ষেত্রেও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এসেছে। গ্রাহক তার চাহিদা মতোই টাকা তুলতে পারছেন। এটিই গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। এখন তারা (গ্রাহক) আবার আগের মতোই টাকা রাখছেন ব্যাংকে। সব এটিএম বুথ চালু রয়েছে, অনলাইন সব সেবা চালু করেছি।
Advertisement
আমরা চেষ্টা করছি যাদের আদায়যোগ্য তাদেরটা আদায় করতে। তবে খেলাপি ঋণ কিছু বাড়বে। কারণ আগে তো এস আলমের ঋণের তথ্য গোপন করা হয়েছিল, সেসব তথ্য আমরা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। নতুন কার্যক্রমের জন্য খেলাপি বাড়বে না, বরং পুরোনো লুকানো তথ্যের কারণে এটা বাড়বে
জাগো নিউজ: তারল্য সংকট কতটা কেটেছে আপনার ব্যাংকে?
নাজমুস সাদাত: আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাপোর্ট পাওয়ার পর শুরুতেই এলসি নিষ্পত্তি করেছি। এখন আগের মতো অবস্থা চলছে, তারল্য সংকট নেই। আশা করছি আর আমাদের সাপোর্ট (তারল্য সহায়তা) প্রয়োজন হবে না। এসআইবিএল আগে সংকটে ছিল না, ভালো অবস্থানেই ছিল। আমাদের ব্যাংক এখন সেই ভালো অবস্থানের দিকে রয়েছে।
আরও পড়ুন প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি নজর দিতে হবে স্থিতিশীলতার দিকে অর্থপাচারকারীরা নিজেরাই পাচার হয়ে গেছে অর্থপাচার ও খেলাপির ব্যাপারে জরুরি অধ্যাদেশ করতে হবে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের শর্ত মানতে গিয়ে যেন শিল্পের ক্ষতি না হয়জাগো নিউজ: গ্রাহকের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল, সেটা কেটেছে কি?
Advertisement
নাজমুস সাদাত: ব্যবসায়ীরা আমাদের সঙ্গে আছেন। কেউ ব্যাংক ছেড়ে যাননি। ডিপোজিট নেই আবার ব্যবসায়ীদের কাছে বিনিয়োগ করি। যাদের বিনিয়োগ করেছি তারা আমাদের সঙ্গে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা ভালো সময়ে ছিলেন, সংকটে ছিলেন, এখন ভালোর দিকে আছি এখনো তারা সঙ্গে আছেন।
জাগো নিউজ: খেলাপি ঋণ চোখ রাঙাচ্ছে, আদায় নিয়ে আপনাদের উদ্যোগ কী?
নাজমুস সাদাত: খেলাপি ঋণ আদায়ে আমাদের নানান উদ্যোগ রয়েছে। যারা খারাপ গ্রাহক বা খেলাপির দিকে যাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে আমরা কিছু মামলার মধ্যে চলে যাচ্ছি। আবার আদায়ের জন্য চেষ্টা চলছে। এক্ষেত্রে দুটি দিক রয়েছে। লিগ্যাল অ্যাকশনে যাওয়ার পরিকল্পনা, আবার আলোচনার দরজাও খোলা। যারা ভালো গ্রাহক আছেন তাদের দুর্দিনেও আমরা সাপোর্ট দিয়েছি, এখনো দিয়ে যাচ্ছি।
আমরা চেষ্টা করছি যাদের আদায়যোগ্য তাদেরটা আদায় করতে। তবে খেলাপি ঋণ কিছু বাড়বে। কারণ আগে তো এস আলমের ঋণের তথ্য গোপন করা হয়েছিল, সেসব তথ্য আমরা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। নতুন কার্যক্রমের জন্য খেলাপি বাড়বে না, বরং পুরোনো লুকানো তথ্যের কারণে এটা বাড়বে।
গ্রাহকের চাহিদা মতো যে কোনো অ্যামাউন্ট আমরা দিচ্ছি। তারল্য সংকটে প্রয়োজন মতো না পেলেও একেবারেই টাকা পাননি এমন ঘটনা কিন্তু ছিল না আমাদের। এতে আস্থা তৈরি হয়েছে। এখন তো গ্রাহকের চাহিদা মতোই আমরা দিয়ে যাচ্ছি, গ্রাহক তুলছেন আবার রাখছেন
এস আলম গ্রুপ মালিকানায় থাকাকালীন খেলাপির তথ্য লুকানোর প্রবণতা ছিল। এগুলো শতভাগ প্রকাশ করবো। আর খেলাপি আদায়ে অ্যাসেটগুলো চিহ্নিত করতে কাজ চলছে। এস আলম গ্রুপের যে লোন রয়েছে সেগুলো বেনামি ছিল না। তাই সম্পদ খুঁজে সেগুলো অ্যাটাস্ট করছি। অন্য খেলাপির বেলায়ও একই পদ্ধতি।
জাগো নিউজ: নতুন বছরের পরিকল্পনা কী?
নাজমুস সাদাত: পুরোনো বছরে আমাদের যত ঘাটতি ছিল, সেখান থেকে নতুন বছরেই ব্যাংকটাকে একটা ক্লিন অবস্থায় নিয়ে যেতে চাই। আমরা ক্লিন অবস্থায় চালু করবো যাতে ভবিষ্যতে লুটপাট না হয়। ব্যাংকটা আগের ভালো ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। ক্লিনিং অপারেশন চলছে আমাদের, নিজেরাই আমরা এটা করছি। ক্ল্যাসিফিকেশন বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে আমাদের ডেফারেল সুবিধা দিতো বা দেবে, আমরা নিজেদের থেকে ক্ল্যাসিফিকেশন লুকাবো না। ডেফারেল পাঁচ বছরের জন্য নেওয়া আছে, প্রতি বছরের মার্চে যে মিটিং হয়, সেখানে রিভিউ (ডেফারেল) করা হয়।
জাগো নিউজ: গ্রাহকদের শাখা থেকে কী পরিমাণ অর্থ দিতে পারছেন?
নাজমুস সাদাত: গ্রাহকের চাহিদা মতো যে কোনো অ্যামাউন্ট আমরা দিচ্ছি। তারল্য সংকটে প্রয়োজন মতো না পেলেও একেবারেই টাকা পাননি এমন ঘটনা কিন্তু ছিল না আমাদের। এতে আস্থা তৈরি হয়েছে। এখন তো গ্রাহকের চাহিদা মতোই আমরা দিয়ে যাচ্ছি, গ্রাহক তুলছেন আবার রাখছেন।
জাগো নিউজ: ব্যবসায়ীদের ফেরাতে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি না?
নাজমুস সাদাত: এখন আমাদের ব্যবসায়ী গ্রাহকের মধ্যেও আস্থা ফিরেছে বহুগুণে। একটা সময় তারা টাকা জমা না দিয়ে তুলতে আসতো। যখন তারা দেখছেন যে, আমরা টাকা দিতে পারছি তখন তারা নতুন করে টাকা জমা রাখতে শুরু করেন। এখন লেনদেন স্বাভাবিক হয়েছে। নতুন গ্রাহক টানতে আমরা মৌলভীবাজারসহ অন্য স্থানেও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসছি, কাজ করছি।
জাগো নিউজ: গ্রাহকের জন্য আপনার বার্তা কী থাকবে?
নাজমুস সাদাত: গ্রাহকের আস্থাই আমাদের ভরসা। তারল্য সংকট চলাকালীনও অনেক পুরোনো গ্রাহক ছিলেন যারা ব্যাংক ছেড়ে চলে যাননি। অনেক গ্রাহক বেশি টাকা দিয়ে সাপোর্ট দিয়েছেন, টাকার প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও তারা টাকা তুলতে আসেননি, এমন ঘটনাও রয়েছে আমাদের শাখায়। আবার তারা আতঙ্কিতও ছিলেন না। অন্য গ্রাহকদের সাপোর্ট দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ফান্ড তারা জমা রেখেছিলেন। কোনো গ্রাহকের অতিরিক্ত টাকার প্রয়োজন হলে অন্য গ্রাহক সেই সাপোর্ট দিয়েছেন।
ব্যাংকও তাদের (গ্রাহক) কারণে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আশা করছি এবছরই সেই স্বাভাবিক অবস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারবো। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক সহযোগিতা পাচ্ছি, ভবিষ্যতেও পাবো। গ্রাহকদের প্রতি জানাতে চাই, আপনারা আস্থায় রাখুন, আগের মতোই সেবা চলমান থাকবে।
ইএআর/এএসএ/এএসএম