দেশজুড়ে

উপহার দিতে গিয়ে ‘অপরাধী’ সাংবাদিকপুত্র, ডিসি বললেন ভুল বোঝাবুঝি

কুমিল্লায় জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সারের বাংলোতে প্রবেশ করায় এক শিক্ষার্থী ও তার সাংবাদিক বাবাকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

সোমবার (৬ জানুয়ারি) কুমিল্লা নগরীর ছোটরা এলাকার ডিসির বাংলোতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন কুমিল্লায় কর্মরত সাংবাদিকরা।

হেনস্থার শিকার মোবারক হোসেন সাপ্তাহিক ‘গোমতী সংবাদ’র সম্পাদক। তিনি কুমিল্লা নগরীর রেইসকোর্স এলাকার বাসিন্দা। তার ছেলে তাহসিন রাহমান নগরীর মডার্ন হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।

মোবারক হোসেন বলেন, ছেলে তাহসিন রাহমান সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। ২০০২ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ইনকিলাবের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। তার আগে স্থানীয় পত্রিকায় কাজ করেছি। একযুগ যাবত সাপ্তাহিক গোমতী সংবাদ পত্রিকাটি প্রকাশ করছি। সেই পত্রিকা থেকে সবজি বীজ, চারা বিতরণ করছি। অনেকটা শখ, আবার সোয়াবের আশাতেও। সেটা দেখে তাহসিনও আমার সহযোগী হয়ে ওঠে। পত্রিকার কাজে সহযোগিতা করে। সম্প্রতি চোখে স্ট্রোকজনিত সমস্যার কারণে আরও বেশি সহযোগিতা করছে। সে নিজেই গাছ বিতরণ করছে। আমার পত্রিকাটি বিলির দায়িত্বও সে নিয়েছে। প্রতি সোমবার ফজরের নামাজ পড়েই প্রেস থেকে পত্রিকা আনা, ভাজ করা আর বিলি করা তার রুটিন হয়ে গেছে।

Advertisement

গত ৫ মাস যাবত ডিসির বাসভবন এবং দফতরে সে-ই পত্রিকা বিলি করছে। সেখান থেকে হয়ত তার ইচ্ছা জাগলো তাকে (ডিসি) একটি ইনডোর প্লান্ট উপহার দেবে। আমাকে বলেছিল। আমি বলেছি তুমি পারবে কি না? সে দু’দিন গিয়েছিল। তাকে পায়নি। পত্রিকা দিয়ে চলে এসেছে। সোমবার সকালেও সে পত্রিকা এবং গাছ নিয়ে গিয়েছিল। আমার মোবাইল ফোনে কল এলো। তাহসিন জানালো- বাবা তুমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের বাসভবনে আসো। আমি ভাবলাম কী না কী। অন্য একজন ফোন নিয়ে বললো, সে কি আপনার সন্তান? আপনাকে আসতে হবে। আমি দ্রুত গেলাম। সেখানে গিয়ে প্রবেশ করে তাহসিনের চোখে অশ্রু দেখলাম।

ভাবতে থাকলাম কী হলো। সেখানে অবস্থানরত সবাই তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। শুধু কাঁদছে। আমিও অশ্রুশিক্ত হলাম। জানতে পারলাম আমার ছেলে অপরাধ করেছে, না বলে প্রবেশ করেছে। ডিসি ক্ষুব্ধ হয়ে কর্মচারীদের তিরস্কার করেছেন।

এরইমধ্যে আমাকে ফোন ধরিয়ে দেওয়া হলো। এনডিসি মহোদয় আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কেন পাঠালেন? আমি বার বার প্রতিউত্তর না দিয়ে সরি বললাম, কয়েকবার বললাম। আমার পরিচয় জানতে চাইলো। আমি জানালাম। তারপর সেখানে কর্মরতরা নাম ঠিকানা মোবাইল ফোন নম্বর লিখে রাখলেন। বললেন, কিছু মনে করবেন না। স্যার আপনাদের ছবি তুলে রাখতে বলেছেন। আমি সহাস্যে রাজি হলাম।

এ বিষয়ে কুমিল্লা সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহাজাদা এমরান বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কীভাবে নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলবেন তা প্রজাতন্ত্রের দায়িত্বশীলদের আরও ভালোভাবে খেয়াল রাখা উচিত।

Advertisement

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সার বলেন, আমি বিষয়টি জানতাম না। আমাকে জানিয়ে আসলে না হয় আমি তার সঙ্গে দেখা করতাম। কিন্তু আমি না চেনায় বের হয়ে চলে এসেছি। পরে শুনলাম আমার স্টাফরা তার ছবি তুলে রেখেছেন। এই ঘটনায় মোবারক সাহেব কষ্ট পেয়েছেন। বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। রাতে মোবারক সাহেবকে ডেকে বিষয়টির সুন্দরভাবে সমাধান করেছি।

জাহিদ পাটোয়ারী/এফএ/জেআইএম