কিংবদন্তিতুল্য অভিনেতা প্রবীর মিত্রর মৃত্যুতে শোকাতুর তার সহকর্মীরা। গতকাল রাতে মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ অভিনেতার সহকর্মীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশ করছেন। অনেকই তার সঙ্গে নানান ধরনের স্মৃতির কথা লিখছেন।
Advertisement
প্রবীর মিত্রর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে এক সময়ের ঢাকাই সিনেমার নন্দিত নায়িকা শাবনূর তার সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দিয়েছেন। এতে তিনি লিখেছেন, ‘গতরাতে বর্ষীয়ান কিংবদন্তি অভিনেতা প্রবীর মিত্র মারা গেছেন। এই কিছুদিনের মধ্যে আমাদের চলচ্চিত্রের অনেক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব পরপারে চলে গেলেন। এটা সত্যিই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না। চলচ্চিত্রের এই সংকটকালে তাদের শূন্যস্থান সহজে পূরণ হবার নয়।’
প্রবীর মিত্রর সঙ্গে স্মৃতির কথা উল্লেখ করে শাবনূর আরও লেখেন, ‘বর্ষীয়ান অভিনেতা প্রবীর মিত্রের সাথে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। আমরা একসঙ্গে বহু জনপ্রিয় ও ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রে কাজ করেছি। তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। পরপারে ভালো থাকবেন প্রিয় অভিনেতা।’
দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন প্রবীর মিত্র। তিনি ১৯৪১ সালে চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জের শাক্তায়। তবে ঢাকাতেই তার শৈশব জীবন কেটেছে। ঢাকার কোতোয়ালি থানার হরিপ্রসন্ন মিত্র রাস্তাটি প্রবীর মিত্রের দাদার নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে। তিনি বিএসসি পাস করার পরে লেখাপড়ার যবনিকা টানেন।
Advertisement
১৯৬৮ সাল থেকে প্রবীর মিত্রের চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু হয়েছিল। স্কুলে পড়া অবস্থায় জীবনে প্রথমবারের মতো নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি। এটি ছিল রবীন্দ্রনাথের ‘ডাকঘর’। এতে তার তিনি প্রহরী চরিত্রে অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে ছিলেন। এরপর পুরনো ঢাকার লালকুঠিতে শুরু হয় তার নাট্যচর্চা। পরিচালক এইচ আকবরের হাত ধরে ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। ছবির গল্প ও সংলাপ লিখেছিলেন আরেক শক্তিমান অভিনেতা তারই স্কুল জীবনের বন্ধু এটিএম শামসুজ্জামান।
প্রবীর মিত্র তার বর্ণাঢ্য অভিনয় জীবনে নায়ক হিসেবে হাতেগোনা কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকায় প্রথম ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ নির্মিত হয়। সেটি ছিল সাদাকালো ছবি। সেই ছবিতে আনোয়ার হোসেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা চরিত্রে অভিনয় করেন। পরবর্তী সময়ে দেশ স্বাধীন হওয়ার বেশ কয়েক বছর পরে রঙিন ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’ নির্মিত হয় আর এই ছবিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করার সুযোগ পান প্রবীর মিত্র। অসাধারণ অভিনয়ের জন্য দেশজুড়ে তিনি প্রশংসিত হয়েছিলেন।
১৯৭০ থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে ‘জীবন তৃষ্ণা’, ‘জলছবি’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘সেয়ানা’, ‘জালিয়াত’, ‘রক্তের ডাক’, ‘ফরিয়াদ’, ‘রক্ত শপথ’, ‘চরিত্রহীন’, ‘জয়পরাজয়’, ‘অঙ্গার’, ‘মিন্টু আমার নাম’, ‘ফকির মজনু শাহ’, ‘মধুমিতা’, ‘অশান্ত ঢেউ’, ‘অলঙ্কার’, ‘অনুরাগ’, ‘প্রতিজ্ঞা’, ‘তরুলতা’, ‘গায়ের ছেলে’, ‘পুত্রবধূ’ প্রভৃতি।
১৯৮০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত প্রবীর মিত্র অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির তালিকায় রয়েছে ‘নৌ চোর’, ‘সুখে থাকো’, ‘ঝুমকা’, ‘সোনারতরী’, ‘সুখের সংসার’, ‘প্রতিহিংসা’, ‘আরশীনগর’, ‘মানসম্মান’, ‘চেনামুখ’, ‘অপমান’, ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘ফেরারী বসন্ত’, ‘আঁখি মিলন’, ‘রসের বাইদানী’, ‘নয়নের আলো’, ‘মন পাগলা’, ‘জিপসি সর্দার’, ‘দহন’, ‘মায়ের দাবি’, ‘ঘর ভাঙা ঘর’, ‘রানী কেন ডাকাত’, ‘বেদেনীর প্রেম’ প্রভৃতি।
Advertisement
প্রবীর মিত্র ‘বড় ভালো লোক ছিল’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ১৯৮৩ সালে প্রথমবাররে মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার র্অজন করেন।
এমএমএফ/জিকেএস