সাহিত্য

পঙ্কজ শীলের পাঁচটি কবিতা

নির্জনতার রং

নিঃসঙ্গতার গভীরতা খোঁজে চাঁদ,মাঝরাতে মন ছুটে যায় অজানা পথে।রাতের সেলাইয়ে জোড়া দেয় পুরোনো ক্ষত,মেঘের কান্না পড়ে পাথরের মুখে।

Advertisement

পৃথিবীর মাঝখানে একখণ্ড তুমুল শূন্যতা,বাঁশির সুরে হারায় সময়ের অস্তিত্ব।আকাশের অক্ষরগুলো মিলায় না কখনো,মাটি আর জল বিভ্রান্ত, সন্ধানী পথিক।

স্বপ্নের আলোর দূরত্ব বেড়ে যায়,জীবনের ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অতীত।মনে পড়ে না কোথায় হারিয়ে গেছে শূন্যতা,তবুও বুকের ভেতরে এক নদী বয়ে যায়,যার গতিপথ মুছে দেয় সব সীমা।

কোথাও যেন শেষ হয়নি আর কোথাও শুরু হয়নি,আমার প্রার্থনার ধূসরতা।তবে আমি জানি, এই ভাঙাচোরা পৃথিবীতেআছে একদিন ফিরে আসার আশা,যখন অন্ধকারে উজ্জ্বল হবে দৃষ্টি।

Advertisement

****

দীর্ঘশ্বাসের ছায়া

অস্তির অন্তর্গত যে স্ফুলিঙ্গ,বিশ্বের প্রান্তরে বিচ্ছিন্ন শূন্যতা জুড়ে।মনে আঁকা প্রলয়ের মুখ, গহীন অন্তরালের যন্ত্রণা,থামানো যায় না, চলতে থাকে সময়ের অবিরাম গতি।

অধরা এক বীণা, রাগিণী যেমন অভিমানী,সুরের বুনন খুঁজে পাই না, ছিঁড়ে গেছে সমস্ত সুতোর খেলা।পৃথিবীর যন্ত্রণায় হারিয়ে যায় স্বপ্নের রং...মুছে যায় মুখের স্মৃতি, চিরকালীন নিঃশব্দ অশ্রু।

ধ্বনিত হয় মিথ্যের এক গভীর বাণী,আলোহীন মেঘের তলায় এক দীর্ঘশ্বাসের ছায়া।সবকিছু শেষ, আবার কিছু শুরু হয়,এটাই তো পৃথিবী, রুদ্ধ কণ্ঠের অন্ধকার আলোর দিকে।

Advertisement

স্বপ্নহীন যাত্রায় পদচিহ্ন হারানো,সময়ের তলে আটকা পড়ে থাকে; কিছুই আর ধরা পড়ে না।যতই ছুটে চলি, দূরত্বটা বেড়ে যায়,জীবনের গন্তব্য আর কী? সেই নিরব প্রশ্ন—যা উত্তরহীন।

****

রাতের গাঢ় আঁধার

গভীর অন্ধকারে বুঁদ হয় চেতনা,অস্তিত্বের জটিলতা এক শূন্যতা।যাত্রা শুরু হয় কিন্তু পথ হারায়,কেউ বলে সত্য, কেউ বলে মিথ্যা সাগরের ঢেউ।

বাঁকা রোশনি সাপের মতো সোঁত দেয়,ভোরের হাওয়ায় হারিয়ে যায় রাতের গাঢ় আঁধার।আমরা কি শুধু এক পুতুলের মতো,যেভাবে চলে যায়, পুতুলের তারে বাঁধা?

হৃদয়ের ভেতর এক ভাঙাচোরা সেতু,একা একা চলতে চলতে গড়ে ওঠে অন্ধকার বাগান।বিশ্বাসের ধ্বংসাবশেষ, বেদনার সংগীত,অশ্রুর মতো ঝরতে থাকে, মাটি থেকে আকাশের দিকে।

বাঁধনহীন সেই মন, অবিরাম প্রলাপ,স্মৃতির ঝুলিতে শূন্যতা জমে।প্রকৃতি চুপচাপ ম্লান পৃথিবীর তলে,শব্দহীন ভাঙা সুরের মধ্যে বাঁধা থাকে মানবতা।

স্বপ্নের পিছু পিছু ছুটে চলা,এতটুকু বিশ্বাস নেই কিন্তু কিছু আশা!গহীন অরণ্যে রুদ্ধ চিৎকারের মতো,জন্মের তৃতীয় কবরের প্রহরে উঠে আসে মধুর নিঃসঙ্গতা।

****

বিভাজন

অন্তহীন পথে চলছি তবুও পথ হারাইপ্রশ্নের জটিলতা যেন সত্তার গভীরে।নীরবতার সুরে ভেসে যায় স্মৃতির রেশ,অজ্ঞাত এক অন্ধকারে, ভেঙে যায় দিনের আলোক।

মনের ভেতর এক বিভ্রান্তি, কোনো দৃশ্য নেই স্পষ্ট,আবছা ভাবনায় মিশে যায় সুখের অনল।স্বপ্নের ক্ষীণ আলো ছড়ায় এক নির্জন গভীরে,তবুও কিছুই স্পর্শ করা যায় না, ধরা দেয় না।

সময়ের ক্রমাগত স্রোতে ভাসতে ভাসতে,তলিয়ে যায় প্রতিটি মুহূর্তের এক তীব্র আওয়াজ।বেঁচে থাকা আর মরে যাওয়ার মাঝে বিভাজন,অস্তিত্বের অস্তিত্বই অবলুপ্ত হয়ে যায়।

যতই ছুটে চলি, অসীমের দিকে,বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের মাঝখানে।সকল খুঁজে ফিরে এক অমীমাংসিত প্রশ্ন,এই পৃথিবী, এই জীবন, সত্যি নাকি কেবল এক মিথ্যা?

****

অমাবস্যার নিঃসঙ্গতা

চাঁদের ছায়া মুছে গেছে অন্ধকারেনীরবতার সুরে বিলীন হলো রাত,বিশাল আকাশে নিঃস্ব অস্তিত্বের মতোহাওয়া যেন শূন্যের গোপন কথা বলে যেত।

পৃথিবী ঘুরে, কালের ধূসর চাকায়বয়ে যায় একেক ঝড়ের অনুভূতি।জীবনের নদী, গভীরতার আহ্বানেচলতে থাকে অগণিত জলবিলাপ, নীরবতা।

চোখে দেখতে চেয়েছিলাম অদৃশ্য কোনো আলো,কিন্তু বরফের নিচে চাপা পড়েছিল সবকিছু—একটি সময়ের হারানো বিশ্বাসের মতো,যা আর ফিরে আসেনি, কোনো দিন।

চলতে চলতে, আমি কি পেয়েছি?একটি অমাবস্যার ঝাপসা ছবি—এটা কি সত্যি, নাকি কেবলমনের গভীরতা থেকে উঠে আসা বিভ্রম?

এসইউ/জিকেএস