আরিফুল ইসলাম তামিম
Advertisement
চট্টগ্রামের সমুদ্রপ্রিয় পর্যটকদের কাছে সৈকত বলতে একসময় পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতই সুপরিচিত ও ভ্রমণ গন্তব্য ছিল। তবে সময়ের পরিবর্তনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন পয়েন্টে গড়ে উঠেছে সমুদ্র ভ্রমণের নতুন পর্যটন স্পট। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশের এমন এক সমুদ্রসৈকতের নাম আকিলপুর সমুদ্রসৈকত।
বর্তমানে পর্যটকদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে এই সৈকতের সৌন্দর্য ও প্রশান্তি। চট্টগ্রাম মহানগর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে ছোট কুমিরা বাজারের পশ্চিমে নূরীয়া মাদ্রাসা কিংবা নিমতলা রোড ঘেঁষে সোয়া কিলোমিটার এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে মনোরম আকিলপুর সমুদ্রসৈকত।
চট্টগ্রাম শহর থেকে বাসে চেপে ছোটকুমিরা নেমে জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়ায় লোকাল সিএনজি যোগে সোয়া কিলোমিটার সামনে আকিলপুর গ্রামে নামিয়ে দেব। সিএনজি থেকে নেমে ৫ মিনিট হেঁটে গেলেই পৌছে যাবেন এই সৈকতে।রিজার্ভ সিএনজি নিলে সরাসরি সৈকতের পয়েন্টেই নামিয়ে দেবে আপনাকে। সেক্ষেত্রে ভাড়া নিতে পারে ১০০ টাকা।
Advertisement
বর্তমানে ছোটকুমিরা থেকে আকিলপুর যাওয়ার সড়কটি বেশ সরু ও ভাঙাচোরা হওয়ায় গাড়ি চলাচল খানিকটা কষ্টসাধ্য। তবে চলতি পথে এই গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশ, পাখির কিচিরমিচির শব্দ, বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, গ্রামীণ জনজীবনের দৃশ্য আপনার সব কষ্টকে ভুলিয়ে দিবে। নয়নাভিরাম এসব দৃশ্য দেখতে দেখতে আপনি মুহুর্তেই পৌঁছে যাবেন এই সমুদ্রসৈকতে।
শুক্রবারে এই সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের আনাগোনা কিছুটা বেশি থাকে। তাছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিনগুলোতে নির্জন নিরিবিলি পরিবেশে প্রশান্তি নিতে চাইলে আপনাকে এই সমুদ্রসৈকতে আসতেই হবে।
একটা সময় এই সৈকতের বাঁধ ছিল না। ফলে গ্রামটি ঘুর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ডুবে যেত। পরে বাঁশবাড়িয়া পর্যন্ত ২ কিলোমিটার সমুদ্রপাড়ে বাঁধ নির্মাণ করে সরকার। সৌন্দর্য বর্ধনে বাঁধের আশপাশে লাগানো হয় সারি সারি নারিকেলসহ বিভিন্ন গাছ। সারি সারি এসব গাছের দৃশ্য আপনাকে বিমোহিত করবেই।
সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশ,নেই কোনো কৃত্রিমতার ছোয়া। বড় বড় পাথর,জোয়ারের সময় সমুদ্রের বিশাল জলরাশি, ঢেউ, সবুজ গাছপালা, পাখির ঝাঁক, হিমেল হাওয়া ইত্যাদি এখন দোলনায় দোল খেতে খেতেই উপভোগ করতে পারছেন পর্যটকরা। সমুদ্রপাড়ে পর্যটকদের সুবিধা বিবেচনায় বেশ কয়েকটি দোকানপাট গড়ে উঠেছে।
Advertisement
আরও পড়ুন
চট্টগ্রামের হালিশহর সমুদ্রসৈকত নাকি ‘বাংলার সুইজারল্যান্ড’ইতালির বিস্ময়কর গ্রাম রিওম্যাগিওরএসব দোকান মালিকরা সৌন্দর্য বর্ধনে দোলনার পাশাপাশি পর্যটকদের বসার স্থান নির্মাণ করেছে। সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি এখানে বসে পর্যটকরা কাঁকড়া ফ্রাই, পেঁয়াজু, নুডলস, মুড়িমাখাসহ বিভিন্ন খাবার কিনে খেতে পারছে।
সমুদ্রের জোয়ার ও ভাটায় ২ রকম সৌন্দর্য ফুটে ওঠে এই সৈকতে। চারপাশে সবুজের আবহ, জোয়ারের পানির ঢেউ, ঢেউয়ের শব্দ, নোনা জলের বাতাস, ইঞ্জিনচালিত বোটে জেলেদের মাছ ধরার তোরজোর, বড় বড় জাহাজ চলাচলের দৃশ্য অন্যরকমে সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। এ সময় সমুদ্রপাড়ের পাথরে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে পছন্দ করেন অধিকাংশ পর্যটক।
জোয়ার সময় সমুদ্রে হাঁটা-চলার সুযোগ না থাকলেও ভাটার সময় সমুদ্রে নামতে পারেন পর্যটকরা। গোধূলিতে এই সৈকতের সূর্যাস্ত পর্যটকদের একরাশ মুগ্ধতা এনে দিবে। এছাড়া এই সৈকতের পাশেই অবস্থিত কুমিরা ঘাট। এখান থেকেই মানুষ সন্দ্বীপে যায়। আকিলপুর সমুদ্রসৈকতে বসেই এই ঘাটের সৌন্দর্য ও সন্দ্বীপগামী স্পিড বোট চলাচলের দৃশ্য দেখা যায়।
বর্তমানে চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমণপিপাসুরা ছুটে আসছেন এই সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য। তবে পর্যটক বাড়ায় সমুদ্রসৈকতের পরিবেশে বেড়েছে আবর্জনার সংখ্যা। পর্যটকরা প্লাস্টিক-পলিথিন যেখানে সেখানে ফেলছে যা সমুদ্র ও এখানকার জীববৈচিত্র্যর জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। এক্ষেত্রে পর্যটকদের বেশ সচেতন হতে হবে।
অপার সৌন্দর্যের সম্ভাবনাময়ী এই আকিলপুর সমুদ্র সৈকতের যাতায়াত ব্যবস্থা,পর্যাপ্ত স্যানিটেশন ব্যবস্থা, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থায়ী ডাস্টবিন তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণকরলে এটি অন্যতম পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে উঠবে সেইসাথে অর্থনীতিতেও বিরাট অবদান রাখবে আকিলপুর সমুদ্র সৈকত।
জেএমএস/জেআইএম