নিয়ামুর রশিদ শিহাব
Advertisement
পৌষ মাস আসার সাথে সাথে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় উপকূলে এখন শীতের আমেজ চলছে। শীত মানেই খেজুরের রস, শীত মানেই পিঠা। তাই শীত মৌসুম আসার সাথে সাথে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন উপকূলীয় প্রত্যন্ত অঞ্চলের গাছিরা। শীত হলো খেজুর রস আহরণের মৌসুম। গাছিরা এখন খেজুর গাছ থেকে রস আহরণের যাবতীয় প্রস্তুতি ও সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত। এ মৌসুমে আবহমান বাংলায় খেজুর রস থেকে তৈরি পিঠার উৎসব আর নবান্নের উৎসব একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। খেজুর রসের পিঠা-পায়েস বাংলার উপাদেয় খাদ্যতালিকায় এখনও জনপ্রিয়।
গাছিরা জানান, বছরজুড়ে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকলেও শীতকালে উপকূলের চাষিদের কাছে খেজুর গাছের কদর বেড়ে যায়। কারণ এ গাছ দিচ্ছে শীত মৌসুমজুড়ে আহরিত সুমিষ্ট রস। আর এ রস জ্বাল দিয়ে ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। খেজুরের রস থেকে এক সময় বাদামি চিনিও তৈরি করা হতো। যার মৌতানো স্বাদ ও ঘ্রাণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। খেজুর গাছের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যত বেশি শীত পড়বে; তত বেশি মিষ্টি রস দেবে। শীতের সকালে খেজুর রস পান শরীর ও মনে প্রশান্তি এনে দেয়। খেজুর গুড় আবহমান বাংলার সংস্কৃতির অনুষঙ্গ। খেজুরের নলেন গুড় ছাড়া শীত মৌসুমের পিঠা খাওয়া জমে না। খেজুর রস গ্রামবাংলায় শীত উদযাপনের সাথে মিলেমিশে একাকার। খেজুর রস ছাড়া শীত জমে না।
আরও পড়ুনবীজ থেকে গাঁদা ফুল রোপণ করবেন যেভাবেসীতাকুণ্ডের বারৈয়াঢালার পানের কদর দেশজুড়েপটুয়াখালীর উপকূলে কৃষকেরা নতুন ধান সংগ্রহের পাশাপাশি গাছিরা খেজুর রস আহরণ করা শুরু করেছে। এখন চলছে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের পালা। তারা চাছা ডগায় বাঁশের তৈরি বিশেষ নল লাগিয়ে সংগ্রহ করে ফোটায় ফোটায় রস। মাটির হাঁড়িতে খেজুর রস সংগ্রহ করা হয়। তবে আজকাল প্লাস্টিকের বোতলেও খেজুর রস আহরণ করে চাষিরা। এসব রস বাজারে বিক্রি করা হয়। সেই রস থেকে হয় নানা ধরনের পিঠা। শীতের মৌসুমজুড়ে চলবে রস, গুড়, পিঠা-পুলি, পায়েস খাওয়ার পালা। নতুন গুড়ের মিষ্টি গন্ধে ধীরে ধীরে আমোদিত হয়ে উঠছে গ্রামবাংলা। গাছিরা জানান, গাছের ডগা চেছে বাঁশের খিল লাগানোর কাজ হয়ে গেছে, এখন রস আহরণ শুরু হয়েছে।
Advertisement
কৃষিবিদরা মনে করেন, খেজুর গাছ আমাদের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এর পরিকল্পিত আবাদ তেমন নেই। উপরন্তু নির্বিচারে খেজুর গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। যা পল্লিবাংলার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। খেজুর গাছ থেকে সুমিষ্ট রস, গুড় আহরণে কেবল আমদের রসনা তৃপ্তির জন্য নয়; আমাদের পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতির ভারসাম্য সুরক্ষায় খেজুর গাছের আবাদ সম্প্রসারণ জরুরি।
লেখক: সাংবাদিক ও কথাশিল্পী।
এসইউ/জেআইএম
Advertisement