দেশজুড়ে

যশোরে আজহারীর মাহফিলে পদদলিত হয়ে আহত ৩০

যশোরে ড. মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে পদদলিত হয়ে ৩০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে শহরতলীর পুলেরহাটের আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশ এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

Advertisement

আহতরা যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে ৫ জন হাসপাতালে ভর্তি থাকার তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার বজলুর রশিদ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, পুলেরহাট আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে ওয়াজ মাহফিল শুনতে এসে পদদলিত হয়ে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। এদের মধ্যে ১০ জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তারা হলেন, মইনুল ইসলাম (৩২), ওসমান গণী (১৮), জিয়ান (২১), মারজান (১৮), ইব্রাহীম (৪০), মাসুদ (২৬), সাইদুল (২৮), লাবলী (৩০) ও আফিফা (১৪)।

Advertisement

আহতরা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তারা সকালেই পুলেরহাটে মাহফিলে এসেছিলেন। মেইন গেটে তালা মারা থাকায় তারা সেখানে অপেক্ষা করছিলেন। হঠাৎ সেখানে ঠেলাঠেলি শুরু হয়। এক পর্যায়ে পেছনে অবস্থানকারীরা সামনে আসতে চেষ্টা করলে হট্টগোল শুরু হয়। এসময় পেছন থেকে ধাক্কায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকারা নিচে পড়ে গলে পদদলিত হন। এসময় কমপেক্ষ ৩০ জন আহত হন। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জুবাইদা ইসলাম জানান, আহতরা পদদলিত হয়ে কমবেশি আহত হয়েছেন। তাদের মহিলা ও পুরুষ সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে আফিফার অবস্থার গুরুতর। বাকিরা আশঙ্কামুক্ত।

আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় পাঁচজন যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এদিকে ঘটনার পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মাহফিলে দায়িত্বরত স্বেচ্ছাসেবীরা জানান, অন্তত ৩০ জন আহতের ঘটনা ঘটেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক মৃত্যুর খবরও রটেছে। যদিও এ বিষয়ে যশোর কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি।

Advertisement

যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার বজলুর রশিদ বলেন, যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঁচজন ভর্তি হয়েছেন।

আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিনে মুসল্লিদের ঢল নামে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর আসার খবরে মাহফিল প্রাঙ্গণে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। শুক্রবার সকাল থেকেই শীত উপেক্ষা করে মানুষ জমায়েত হয়। বিকেল থেকে মাহফিল স্থান ছাপিয়ে সড়ক, মহাসড়কে মানুষের ঢল নামে। সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসা শুরু করে। দুপুরের পর সড়কে যানজট দেখা দেয়। এজন্য অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছান। সব সড়কের ঢেউ গিয়ে মেশে পুলেরহাটে।

এদিন সন্ধ্যায় আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহও বক্তব্য রাখেন।

এদিন গোটা শহরতলীতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সন্ধ্যার পর পায়ে হাঁটা মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায়। অনেকেই মূল অনুষ্ঠানে স্থলে পৌঁছাতে পারেননি। দূর থেকেই বক্তব্য শুনতে হয়েছে।

শহরের নিউমার্কেট এলাকা থেকে আসা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গাড়ি পাচ্ছি না। তাই আমরা দল বেঁধে হাঁটা শুরু করেছি। ওয়াজ শুনতে যাচ্ছি। রাস্তায় প্রচণ্ড ভিড়। জানি না কতদূর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবো।

শহরের সার্কিট হাউজের সামনে মুজিব সড়কে পথচারী রহিমা বেগম বলেন, কোর্টের মোড় থেকে যানজট শুরু হয়েছে। সামনে যত যাচ্ছি, ততই ভিড়। পুলেরহাট এখনো অনেকদূর। মাহফিলের জায়গায় পৌঁছাতে পারবো কি না জানি না।

মনিরামপুর থেকে মাহফিল শুনতে আসা মিলন রহমান বলেন, গতকাল শহরে বোনের বাড়ি এসেছি মাহফিল শুনতে যাবো বলে। হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছি। ওদিকে গাড়ি যাচ্ছে না। আজহারীর ওয়াজ ইন্টারনেটে অনেক শুনেছি। সরাসরি একটু দেখার ইচ্ছা তাই যাচ্ছি।

শহর ও শহরতলীর প্রায় প্রত্যেকটি সড়ক মহাসড়কের চিত্র একই। শহরের চাঁচড়া মোড় থেকে পুলেরহাট অভিমুখে সবচেয়ে বেশি মানুষের ঢল নামে। এসব সড়কের মানুষের ভোগান্তিও ছিল চোখে পড়ার মতো।

মাহফিল উপলক্ষে চার দিনব্যাপী ইসলামী বই মেলা ও প্রদর্শনী করা হয়েছে। মেলায় ২২টি স্টল রয়েছে। একইসঙ্গে শিশুদের জন্য ‘কিডস জোন’ করা হয়েছে।

আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশনের মানবসম্পদ কর্মকর্তা জাহেদ হোসাইন জানান, আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন শুধু ওয়াজ মাহফিলের মধ্যে সীমাবদ্ধ করেনি। এখানে ইসলামী কৃষ্টিকালচার তুলে ধরা হচ্ছে। দেশের প্রখ্যাত লেখকদের বই পাওয়া যাচ্ছে বই মেলার স্টলে। গার্ডিয়ান, সত্যায়ন, বিন্দু, সিয়ামসহ ২২টি প্রকাশনী এখানে স্টল নিয়েছে। পড়াশোনার অভ্যাসের জন্য এ বই মেলার আয়োজন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখানে শুধু ওয়াজ মাহফিল নয়, এখানে হজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিনোদনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। শিশুদের জন্য ‘কিডস জোন’ রয়েছে।

মিলন রহমান/এফএ/এমএস