বিমান ভ্রমণ, সিগারেট, এলপিজি, পোশাক, রেস্তোরাঁর খাবারসহ একাধিক পণ্য ও সেবায় কর বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে সরকার। ফলে দেশে এরই মধ্যে ১১ শতাংশ ছাড়ানো মূল্যস্ফীতি আরও তীব্র হতে পারে। সরকারের পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর উদ্যোগে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
ব্যবসায়ীরা বলছেন, জুলাই- আগস্টের আন্দোলন ঘিরে প্রায় ৪-৫ মাস ধরে ব্যবসায় মন্দা ভাব দেখা গেছে। ব্যবসা বাণিজ্য যখন স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে তখনই কর বাড়ানোর মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সরকার।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রেস্তোরাঁয় ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা করেছে। নন-এসি হোটেলের ভ্যাট ৭.৫ শতাংশ থেকে দ্বিগুণ করে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
এছাড়া অভ্যন্তরীণ, সার্কভুক্ত দেশে এবং আন্তর্জাতিক গন্তব্যে বিমান ভাড়াও বাড়তে পারে। বিমান টিকিটে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে। স্থানীয় ফ্লাইটে শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা, সার্ক দেশগুলোর ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা থেকে ১,০০০ টাকা এবং আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে ৩,০০০ টাকা থেকে ৪,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে এনবিআর ৩০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য স্থির করেছে।
Advertisement
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান জাগো নিউজকে বলেন, তারা যদি রাষ্ট্র পরিচালনা না করতে পারে; তাহলে দায়িত্ব অন্য কাউকে দেওয়া হোক। এভাবে মানুষের ওপর জুলুম করার মানে হয় না। দেশটাকে খাদের কিনারে নিয়ে যাবে? ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্দোলন, মূল্যস্ফীতি মিলিয়ে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। এই করের বোঝা বাড়িয়ে আমলাদের চুরি করার একটা ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা স্ট্রাইকে চলে যাব। সব বন্ধ করে দেব। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলছি। নিজেরা বসে বাদবাকি সিদ্ধান্ত নেব।
অরুনিমা রিসোর্টের চেয়ারম্যান ও ট্যুরিজম রিসোর্ট ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট কবির উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, এমনিতেই পর্যটন খাতের ১২টা বেজে রয়েছে। তারপর উড়োজাহাজের টিকিটের দাম বাড়লে আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ খাত সংশ্লিষ্টরা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। আমরা সবার সঙ্গে বসে করণীয় ঠিক করবো।
বর্তমানে তৈরি পোশাকের আউটলেটের বিলের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। এটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মিষ্টি কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
Advertisement
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইনে কিছু সংশোধন আনতে যাচ্ছে সরকার। যেন ওষুধ, গুঁড়াদুধ, সিগারেট, বিমানের টিকিটসহ ৬৫ ধরনের পণ্য ও সেবার ওপর বাড়তি মূসক ও শুল্ক আরোপ হতে পারে। ফলে বাজেটের আগেই এসব পণ্য ও সেবার দাম এক দফা বাড়তে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইনে কিছু সংশোধন আনা হয়েছে। এসব সংশোধনীসহ মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ২০২৫ এর খসড়া সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে গতকাল বুধবার (১ জানুয়ারি) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
এসএম/এমআরএম/জেআইএম