শিক্ষা

পাঠ্যবইয়ে স্বমহিমায় জাতীয় বীরেরা, খুশি শিক্ষক-অভিভাবক

পাঠ্যবইয়ে দলীয় রাজনীতির প্রভাব দীর্ঘদিনের। যখন যে রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থেকেছে, তখন তারা নিজেদের গুণগানে ভরিয়ে ফেলেছে। বিএনপির শাসনামলে পাঠ্যপুস্তকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে দলটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি বীর উত্তম মেজর জিয়াউর রহমান। আবার আওয়ামী লীগ সরকারে থাকাকালে এককভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কৃতিত্ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল। সবশেষ আওয়ামী লীগের টানা ১৬ বছরের শাসনামলে সব জায়গায় ছিল শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার জয়গান।

Advertisement

পাঠ্যপুস্তক থেকে একেবারে মুছে ফেলা হয় জিয়াউর রহমান, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নাম। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা তাজউদ্দিন আহমেদের বিশেষ অবদানও ভুলতে বসেছিল শিক্ষার্থীরা। কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর অবদানকেও খাটো করা হয়েছিল। তাছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও ভাষা আন্দোলনে অবদান রাখা অনেক বীর ছিলেন অপাঙক্তেয়।

ক্ষমতার পালাবদলে বিগত ৪ দশকে পাঠ্যবইয়ে বহুবার পরিবর্তন এসেছে। সেখানে একপক্ষ খুশি হলেও অন্যপক্ষ সমালোচনায় মেতে উঠতো। এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। অন্তর্বর্তী সরকার বইয়ে জাতীয় সব বীরের অবদানই নির্মোহভাবে তুলে ধরার পথে হেঁটেছে। এতে খুশি অভিভাবক, শিক্ষকসহ সব পক্ষ।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, সময়ের স্বল্পতায় এবার কাজটি সুনিপুণভাবে করা পুরোপুরি সম্ভব হয়নি। আগামী বছর আরও ‘সত্যনির্ভর ইতিহাস’ পাঠ্যপুস্তকে তুলে আনতে বদ্ধপরিকর অন্তর্বর্তী সরকার।

Advertisement

ব্রিটিশ শাসন থেকে বাংলার নবজাগরণ

পাঠ্যবইয়ে এবার ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিয়ে প্রায় সব শ্রেণিতে ইতিহাস-নির্ভর গল্প-প্রবন্ধ রাখা হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইতে চতুর্থ থেকে নবম-দশম পর্যন্ত এ বিষয়টি ক্রমে বিস্তরভাবে আলোচনা করা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে দ্বিতীয় অধ্যায়ে ব্রিটিশ শাসন ও তৃতীয় অধ্যায়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ শিরোনামে দুটি প্রবন্ধ রয়েছে।

আরও পড়ুন: ছাপা পাঠ্যবইয়ে গণঅভ্যুত্থানে শহীদের ভুল নাম, অনলাইনে ‘ঠিক’নতুন পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-গল্পে যেসব পরিবর্তন এলোবছরজুড়ে শিক্ষায় অস্থিরতা, শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই ‘বিজয়’

ব্রিটিশ শাসনের পটভূমি ও শুরুর ইতিহাস তুলে ধরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার ঘটনা রাখা হয়েছে। বাংলায় ব্রিটিশ শাসন শুরুর পর যারা ব্রিটিশবিরোধী জাগরণ ও বিদ্রোহ করেন তাদের অবদান সুনিপুণভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, নবাব আব্দুল লতিফ, সৈয়দ আমীর আলীর কথা রয়েছে।

এ অধ্যায়ে বিশেষভাবে রাখা হয়েছে শহীদ তিতুমীর ও তার বাঁশের কেল্লা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। পরবর্তীতে ক্ষুদিরাম বসু, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, মাস্টারদা সূর্যসেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের অবদানগুলোও তুলে ধরা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ও স্বাধীনতা অর্জন

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ঘটনাবহুল বিষয়গুলো প্রাথমিকের দুটি ও মাধ্যমিকের সব শ্রেণির বইয়ে রাখা হয়েছে। তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) জনগণের ওপর জুলুম-নিপীড়নের চিত্র রয়েছে। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের নির্বাচন নিয়েও আলোচনা রয়েছে।

Advertisement

১৯৭১ সালকে ইতিহাসের গৌরবময় ঘটনা উল্লেখ করে ২৫ মার্চের গণহত্যা, স্বাধীনতার ঘোষণা, ১০ এপ্রিলের অস্থায়ী সরকার গঠন এবং স্বাধীনতা অর্জনে বিশেষ অবদান রাখা সবার নাম রাখা হয়েছে।

পঞ্চম শ্রেণিতে ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইতে ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ’ অধ্যায়ে ছয়টি ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রথমে রাখা হয়েছে মজলুম জননেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ছবি। তার পাশে একই মাপে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি স্থান পেয়েছে। ভাসানী ও শেখ মুজিবের ছবির নিচে কিছুটা ছোট করে জাতীয় চার নেতা; সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামারুজ্জামানের ছবি রাখা হয়েছে। একই অধ্যায়ে জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর ছবিও রয়েছে। পুরোনো বইয়ে শুধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার ছবি রাখা হয়েছিল।

স্বাধীনতার ঘোষক ও অস্থায়ী সরকার

আওয়ামী লীগের আমলে পাঠ্যবইয়ে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখানো হয়েছিল। তাতে পরিবর্তন এসেছে। নতুন পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত সব অধ্যায়ে প্রায় একইভাবে বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে।

পঞ্চম থেকে নবম-দশম শ্রেণির বইয়ে উল্লেখ রয়েছে, ‘...২৫ শে মার্চ রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। ২৬ শে মার্চ তারিখে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। এরপর তিনি ২৭ শে মার্চ তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে আবারও স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ…।’

পুরোনো বই সব জায়গায় এ অংশে ছিল ‘২৫ শে মার্চ রাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ...।’

এদিকে, নবম-দশমের বইতে অস্থায়ী সরকার নিয়ে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে অস্থায়ী সরকারের কাঠামো ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের নাম উল্লেখ রয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম রাখা হয়েছে। তাছাড়া অস্থায়ী সরকারের উপদেষ্টাদের নাম তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে প্রথমেই মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাম রয়েছে। আর মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি হিসেবে কর্নেল (অব.) এম এ জি ওসমানীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

৭ মার্চ ও স্বাধীনতার ঘোষণার ছবি

চতুর্থ থেকে নবম-দশম পর্যন্ত সব শ্রেণির বইয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অধ্যায়ে ৭ মার্চকে ঐতিহাসিক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তাছাড়া ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির ইঙ্গিত করেছিল, তা বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি শ্রেণির বইয়ে ৭ মার্চে তর্জনী উঁচিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দেওয়ার মুহূর্তের ছবি রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে চতুর্থ ও ষষ্ঠ শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ পাঠ্যবইয়েও স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়টি রয়েছে। এ দুটি শ্রেণির বইয়ে মুক্তিযুদ্ধ শীর্ষক লেখায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা বীর উত্তম মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার ছবিও স্থান পেয়েছে।

নতুন সংযোজন ‘আমাদর চার নেতা’

তৃতীয় শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ে ‘আমাদের চার নেতা’ নামে নতুন একটি অধ্যায় যুক্ত করা হয়েছে। তাতে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের কর্মজীবন ও অবদান নির্মোহভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

পাঠ্যবইয়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান

পাঠ্যবইয়ে চব্বিশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান নিয়ে গল্প-কবিতা রাখা হয়েছে। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা বইয়ে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ নামে গল্প যুক্ত করা হয়েছে। সেখানে শহীদ তিতুমীর, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ভাষা সৈনিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের নাম রাখা হয়েছে। রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠদের নামও।

গল্পের শেষে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের নাম ও অবদান তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘অধিকারের দাবি ও বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে এ দেশের শিক্ষার্থীরা ২০২৪ সালে আবার রাস্তায় নামে। সরকারি বাহিনী নির্মমভাবে সেই আন্দোলন দমন করতে চায়। পুলিশের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রংপুরে ছাত্রনেতা আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ান। পুলিশ তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। এতে আন্দোলন সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সারাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। বিশাল এক গণঅভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়।’

‘ঢাকার উত্তরায় শিক্ষার্থী মীর মুগ্ধ আন্দোলনরত সবাইকে পানি বিতরণ করতে করতে নিহত হন। নিহত হন (গোলাম) নাফিজ, নাফিসা, আনাসসহ অগণিত প্রাণ। মায়ের কোলের শিশু, বাবার সাথে খেলতে থাকা শিশু, রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, কৃষক, ফেরিওয়ালা, চাকরিজীবী, মা, পথচারী কেউ বাদ যায় না। সারা দেশে হত্যা করা হয় হাজারো মানুষকে।’

তাছাড়া গণঅভ্যুত্থান নিয়ে হাসান রোবায়েতের লেখা আলোচিত ‘সিঁথি’ কবিতাটি পাঠ্যবইয়ে স্থান পেয়েছে।

পুরোনো পাঠ্যবইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে ছিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও তার উদ্ধৃতি। সেগুলো বাদ দিয়ে পাঠ্যবইয়ের মলাটে স্থান পেয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানের আলোচিত গ্রাফিতি। পাশাপাশি আগের মতো চিরন্তন বাণীও বইয়ের পেছনের পৃষ্ঠায় রাখা হয়েছে। প্রথম শ্রেণির বাংলা বইয়ে গ্রাফিতির পাশাপাশি আগের মতো ‘বড়দের সম্মান করো’ বাণী রাখা হয়েছে।

খুশি অভিভাবক-শিক্ষকরা

দলীয় রাজনীতি এড়িয়ে পাঠ্যবইয়ে বাংলা ও বাংলাদেশের জাতীয় অর্জনে সবার অবদান নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরার বিষয়টি নিয়ে সন্তুষ্ট অভিভাবকরা। পাশাপাশি শিক্ষকরাও ইতিহাস পড়াতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন বলে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন:নতুন পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-গল্পে যেসব পরিবর্তন এলোপাঠ্যবই ছাপাটা এবার যুদ্ধের মতো, কবে সব দিতে পারবো জানি নাঅনলাইন ভার্সন উদ্বোধন, পাঠ্যবই মিলছে ওয়েবসাইটে

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল শাখার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নূর ফাইজা মিষ্টির মা জান্নাত আরা বেগম বলেন, ‘বই এখনো হাতে পায়নি। তবে অনলাইন থেকে আমি পিডিএফ কপি ডাউনলোড করে দিয়েছি। সেখানে দেখলাম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসগুলো। আমার কাছে মনে হয়েছে, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবার নিরপেক্ষভাবে গল্প-প্রবন্ধে ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। একপাক্ষিক বর্ণনা চোখে পড়েনি। বিষয়টি ভালো লেগেছে।’

রাজধানীর গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণিতে বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ের ক্লাস নেন সহকারী শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিক্ষকজীবনে আমি তিন ধরনের ইতিহাস সংবলিত বই পড়িয়েছি। বিএনপি আমলের বই, এক-এগারোর সময়ের বই এবং আওয়ামী লীগের আমলের বই। তিন বইয়ে তিন রকম ইতিহাস। যখন ক্লাসে আমরা পড়াতে যাই, তখন এটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে হীনমন্যতায় ভুগি। এবারের ইতিহাসের ধারাক্রম বর্ণনাটা বেশ নিরপেক্ষ ও সত্যনির্ভর মনে হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ।’

নিরপেক্ষ ধারা টিকিয়ে রাখাই চ্যালেঞ্জ

পাঠ্যবইয়ে বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দলীয় রাজনীতি-নিরপেক্ষ যে ইতিহাস তুলে আনছে, ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসীন হলে তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদরা।

জাতীয় অর্জনের ইতিহাস নিয়ে একটি বন্দোবস্ত হওয়া উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিএনপি এক রকমভাবে ইতিহাস বর্ণনা করে, আওয়ামী লীগ আরেক রকম। তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে হয়তো তা আরেক রূপ দেখা যাবে। দফায় দফায় এ পরিবর্তন জাতীয় অর্জনকে, অর্জনে ভূমিকা রাখাদের হেয় করে। সেজন্য আমি মনে করি, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, সবকটি গণঅভ্যুত্থানসহ সব জাতীয় অর্জনের ইতিহাস নিয়ে একটি বন্দোবস্ত করা জরুরি। সেটা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের করে যাওয়ার মোক্ষম সুযোগ রয়েছে। আশা করি, তারা এ নিয়ে পদক্ষেপ নেবেন।’

এএএইচ/এমআরএম/জেআইএম