জাতীয় পার্টির (জাপা) ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ১ জানুয়ারি। ১৯৮৬ সালের এই দিনে সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
Advertisement
অনেকটা খাদের কিনারে থেকে জাতীয় পার্টি তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবি, দলীয় কোন্দল, সাংগঠনিক দুর্বলতা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ না নেওয়ার গ্লানি, স্বৈরাচারের দোসরসহ নানান অভিযোগে বিপর্যস্ত দলটির হাইকমান্ড। দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, এমন অবস্থায় জনগণের আস্থা ও নতুন বছরে সাংগঠনিক শক্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ করবে দলটি।
দলের নেতারা বলছেন, জাপা আওয়ামী লীগের বলয় কিংবা চাপে থাকে, এটা এখন আর বলার সুযোগ নেই। জনগণের মধ্যে জাতীয় পার্টির জন্য যে আস্থার সংকট আছে তা কাটিয়ে উঠতে হবে। এ জন্য সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে হবে। সেই লক্ষ্যে নতুন বছরে কাউন্সিল করতে চায় দলটি।
দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, দলকে সুসংগঠিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। জাপা থেকে চলে যাওয়া কিছু ব্যক্তিকে ফের দলে ফিরিয়ে নিতে পারে। তবে ঘোষণা দিয়ে দলছুট সব নেতাকর্মীকে মূল দলের সঙ্গে একীভূত করা হবে না।
Advertisement
জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া জাগো নিউজকে বলেন, কিছুদিনের মধ্যে আমরা কেন্দ্রীয় সম্মেলন করবো। ১০ম সম্মেলকে কেন্দ্র করে আমরা জেলা-উপজেলার সম্মেলন ও সম্পন্ন করবো।
তিনি বলেন, এই মুহুর্তে কর্মসূচিভিত্তিক আন্দোলন নেই আমাদের। সাংগঠনিক অবস্থান শক্তিশালী করার কাজ আমরা করবো।
নতুন নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচন ২৫ এ হোক বা ২৬ এ হোক কিংবা ২৭ এ হোক না কেনো আমরা তাতে অংশ নেবো। এ জন্য আমরা সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী হতে চাই।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়ে জাতীয় পার্টির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় পার্টির সঙ্গে বৈষম্য করছে: মোস্তফাদলীয় সূত্রে জানা গেছে, শিগগির দলটির অতিরিক্ত মহাসচিবরা বিভাগীয় শহরে সফর করবেন। তারা জাতীয় পার্টিকে সুসংগঠিত করতে বর্ধিত সভাসহ নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীদেরও খুঁজে নেবেন। দলটির নীতি নির্ধারকদের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হবে।
Advertisement
জাতীয় পার্টির দাবি তারা জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জাপাও অন্তর্বর্তী সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় পরামর্শের জন্য সেনাবাহিনীর ডাক পায়। তবে ছাত্র নেতাদের দাবি জাতীয় পার্টির সমর্থনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আরও শক্তিশালী হয়েছে। এর জেরে গত ৩১ অক্টোবর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। তবে সব বিভেদ ও সংকট ভুলে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দল গোছাতে মাঠে নেমেছে জাপা।
নব্বই দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর থেকেই জাপায় নানান সংকট চলছে। কয়েকভাগে বিভক্ত হয়েছে দলটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দলটি হয় আওয়ামী লীগ, নয়তো বিএনপি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে আসছে। আর এর মধ্য দিয়ে দলটি প্রায় সবসময়ই ক্ষমতার বলয়ে অবস্থান করেছে।
দলটির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সংসদের সাবেক বিরোধী দল জাপা স্বাধীনভাবে রাজনীতি করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের মদদে পার্টিতে ভাঙন ধরা হয়েছে। জাতীয় পার্টিকে স্বাভাবিক রাজনীতি করতে দেওয়া হয়নি। দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব-সংঘাতে চলছে জাতীয় পার্টি। যে কারণে গত ১৫ বছর জাপা ভোটের মাঠে তাদের নিজস্ব শক্তি দেখাতে পারেনি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে দলটির।
জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বলেন, তরুণদের চিন্তা-ভাবনার ও জনগণের আকাঙ্ক্ষার নিরিখে আমরা রাজনীতির কৌশল ঠিক করছি। দলকে সুসংগঠিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
এসএম/এসএনআর/এএসএম