রাজনীতি

ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। শিক্ষা, ঐক্য, প্রগতি স্লোগান নিয়ে এই সংগঠনটি ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এই ছাত্রদল প্রতিষ্ঠা করেন।

Advertisement

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রদল। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সব জেলা ও মহানগর ইউনিট কার্যালয়ে জাতীয় পতাকাসহ দলীয় পতাকা উত্তোলন। বেলা ১১টায় শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন ও মোনাজাত, দুপুর ১২টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অডিটোরিয়ামের সামনে রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বিকেলে সেখানে আলোচনা সভা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার হলগুলোর মধ্যে সন্ধ্যা থেকে রাত অব্দি আন্তঃহল ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশে সব জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌর শাখায় বর্ণাঢ্য র্যালি হবে।

এছাড়াও আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত গুলিস্তান স্টেডিয়ামে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের ৮টি টিমের মধ্যে ফুটবল প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। সারাদেশের সব জেলা, মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, উপজেলা ও পৌর ইউনিটের উদ্যোগে ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, দাবা- যেকোনো একটি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

আশির দশকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্র সংসদে উল্লেখযোগ্য অবস্থান ছিল ছাত্রদলের। নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন কিংবা এর পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামেও সামনের সারিতে দেখা গেছে ছাত্রদলকে। ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ২৪ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বেশি নিপীড়ন নির্যাতনের শিকার হয়েছে বিএনপির এই সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

Advertisement

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর নতুন পরিবেশে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। দীর্ঘ দেড় দশক সাংগঠনিকভাবে কোণঠাসায় থাকা ছাত্রদল শেখ হাসিনার পতনের পর সারাদেশে ব্যাপকভাবে সক্রিয় হয়েছে। ছাত্রসমাজের আস্থা ধরে রাখতে তৎপরতা চালাচ্ছে সংগঠনটি। প্রতিষ্ঠার সাড়ে চার দশকে এসে অতীতের সোনালী গৌরব পুনরুদ্ধারে সক্রিয় এখন ছাত্রদল। তবে কমিটিতে আধিপত্য বিস্তার, দীর্ঘদিন কমিটি পুনর্গঠন ও হালনাগাদ না করার কারণে অভ্যন্তরীণ কিছু সংকটও রয়েছে ছাত্রদলের।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভক্ষণে ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াইয়ের বিজয়ী হিসেবে ছাত্রসমাজসহ দলীয় নেতাকর্মীদের সংগ্রামী শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন সংগঠেনের বর্তমান সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।

গত ১ মার্চ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান ও সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলের নেতৃত্বাধীন কমিটি বিলুপ্ত করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাত সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি অনুমোদন করা হয়। সেসময় আংশিক কমিটিতে রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সভাপতি ও নাসির উদ্দীন নাছিরকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। একইদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলেরও নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। পরে কমিটি গঠনের তিন মাসের মধ্যে গত ১৫ জুন ছাত্রদলের ২৬০ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে কাছের ব্যক্তিদের বেশি প্রাধান্য দিয়ে কমিটি হওয়ায় সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝেই সমালোচনা শুরু হয়। বিশেষ করে বৃহত্তর উত্তরাঞ্চলের নেতৃত্ব সংখ্যা একেবারেই নাম মাত্র। তাছাড়া বেশি ত্যাগী নেতাকর্মীকে কাঙিক্ষত পদ না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অনেকে।

রাকিব-নাছিরের নেতৃত্বাধীন কমিটি দায়িত্ব নেওয়ার ৫ মাসের মাথায় সৃষ্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সক্রিয় ভূমিকা রাখে ছাত্রদল। একপর্যায়ে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন ঘটলে সারাদেশে কর্মীসভা শুরু করে সংগঠনটি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রণীত রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা নিয়ে প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়, কর্মীসভাসহ নানামুখী ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ছাত্রসমাজের আস্থা ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালায় ছাত্রদল।

Advertisement

আরও পড়ুন: নববর্ষ উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানালেন তারেক রহমান ভিন্নরূপে ক্ষমতায় থাকার পায়চারি করবেন না: আমীর খসরু রাজধানীতে ছাত্রদলের পদবঞ্চিতদের মশাল মিছিল

এদিকে, আন্দোলন সংগ্রামের মূখ্য ভূমিকায় থাকা ঢাকা মহানগর, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শাখায় ছাত্রদলের দীর্ঘদিন কমিটি না থাকা ও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়। সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীতে ১১টি ইউনিটে নতুন কমিটি ঘোষণা করে ছাত্রদল। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির এই কমিটি অনুমোদন করেন। ইউনিটগুলো হলো-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, সরকারি কবি নজরুল কলেজ, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ, ঢাকা মহানগর উত্তর, ঢাকা মহানগর পূর্ব এবং ঢাকা মহানগর পশ্চিম শাখা।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, গেলো বছরে আমাদেরকে দুটি আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হয়েছি ২৩ সালের ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু করে ২৪ জানুয়ারির অবৈধ নির্বাচন যেটা ছিল, নির্বাচনী বাস্তবতায় সেটা আমাদেরকে বেশি পীড়া দিয়েছে, মামলা হামলা ব্যাপক নির্যাতন হয়েছে। ২৪ সালের জুলাই আগস্টের আন্দোলনে আমরা আমাদের ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছি। তারপর পরবর্তী বাস্তব নতুন ধারার ছাত্র রাজনীতির ওপর দিয়ে আমরা যাচ্ছি। কোন প্রকারের নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোনো ধরনের সমস্যা হয় এটি আমরা করবো না, সেই ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। রানিং স্টুডেন্টদের হাতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এবং তরুণ প্রজন্মকে, তরুণ প্রজন্ম আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে, যারা মাদক সন্ত্রাস থেকে দূরে থাকবে, ছাত্র রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করা , সেই ধরনের সচেতনমূলক কর্মকাণ্ড নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদল অগ্র-সৈনিকের ভূমিকা পালন করেছে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ছাত্রদলের ত্যাগ ছিল নজিরবিহীন। শুরু থেকেই ছাত্রদল পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আন্দোলনকে বেগবান করেছে। বর্তমানে গণতন্ত্র উত্তরণের জন্য ছাত্রদল ছাত্র-তরুণদের মাঝে তারেক রহমান প্রণীত রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা প্রস্তাবনার পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করছে। আমরা সারাদেশ থেকে তরুণদের ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।

তিনি বলেন, ছাত্রদল একুশ শতকের উপযোগী মেধাভিত্তিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ছাত্র-রাজনীতি চর্চায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নেতাকর্মীরা যাতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখে আমাদের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করছি। মেধাবী তরুণদেরকে নিজ নিজ প্রতিভা বিকাশের সুযোগ প্রদান এবং ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত সব দাবির পক্ষে আমরা কাজ করছি। সাম্য ও মানবিক মর্যাদার ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা আমাদের লক্ষ্য।

কেএইচ/এসএনআর/এএসএম