সময় তখন ৫টা ১৭ মিনিট। শীতের হিমেল হওয়ায় চারপাশ কুয়াশাচ্ছন্ন। ঢেউয়ের মিষ্টি গর্জন। এমনই পরিবেশে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে গেলো কক্সবাজার সৈকতের ২০২৪ সালের শেষ সূর্য। ‘বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’ গঠনের স্বপ্ন জাগিয়ে কালের গহ্বরে হারিয়ে গেলো ২০২৪ সাল। নানা ঘটন আর অঘটনকে মাড়িয়ে অনেক প্রাপ্তি-হতাশা-ক্লান্তিতে শেষ হলো আরও একটি বছর।
Advertisement
নানা কারণে এবারও থার্টি ফার্স্ট নাইটের উন্মুক্ত আয়োজন বন্ধ। এরপরও কক্সবাজারে উল্লেখ করার মতো পর্যটক উপস্থিতি রয়েছে। বছরের শেষ সূর্য ডোবা দেখতে সৈকতে হাজির হন প্রকৃতিপ্রমীরা।
সরকারি নির্দেশনায় এবারও কক্সবাজারে উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফার্স্টের সব ধরনের আয়োজন বন্ধ। তবে, অতীতের মতো তারকা হোটেলগুলো নিজ উদ্যোগে ঘরোয়া আয়োজন করছে। হোটেলে অবস্থান করা অতিথিদের জন্য রয়েছে আয়োজন। কিন্তু বহিরাগতদের জন্য সাশ্রয়ী দামে গালা ডিনারের আয়োজন রেখেছে তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেড। আর প্যাকেজে আসা অতিথিদের জন্য রাখা হয়েছে ডিজে, ব্যান্ডসহ সংগীতের আয়োজন। একই ধরনের আয়োজন রেখেছে মারমেইড বিচ রিসোর্ট, হোটেল রামাদা, সায়মন বিচ রিসোর্ট, সি পার্ল হোটেল অ্যান্ড স্পা, বেস্ট ওয়েস্টার্ন এবং দ্য কক্স-টু-ডে।
আরও পড়ুন: বছরের প্রথম দিন যেমন থাকবে দেশের আবহাওয়াকক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বছরের শেষ সময় হিসেবে পর্যটকরা ঘুরতে কক্সবাজারকেই প্রাধান্য দেন। আর কক্সবাজার আসা পর্যটকদের ৭০-৭৫ শতাংশ এক থেকে দুদিনের ট্যুরে সেন্টমার্টিন যান। এ বছর সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত সীমিত। এরপরও খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ২০২৫-কে স্বাগত জানাতে লাখো পর্যটকের মিলন ঘটেছে কক্সবাজারে। প্রায় হোটেলে ৮০-৮৫ শতাংশ বুকিং আগাম ছিল। এ ধারাবাহিকতা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকবে বলে আশা করা যায়।
Advertisement
বাড়তি পর্যটক মাথায় রেখে সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশসহ অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রেখেছেন বলে জানান কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ।
হোয়াইট অর্কিড হোটেলের মহাব্যবস্থাপক রিয়াদ ইফতেখার বলেন, ‘দেড় দশক ধরে বছরের শেষ দিন সারাদেশ থেকে লোকজন কক্সবাজারে ছুটে আসছেন। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। অনুষ্ঠান না থাকলেও বিগত সময়ের মতো থার্টি ফার্স্ট উদযাপনে সৈকতে লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। যোগ দিয়েছেন স্থানীয়রাও।’
বিকেলে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় বিপুল দর্শনার্থী বেলাভূমিতে। শীতের মাঝেও অনেকে সমুদ্রে গোসল করছিলেন। তবে বেশিরভাগই বালুচরে দাঁড়িয়ে সাগরের গর্জন আর সূর্যাস্ত উপভোগ করছেন।
আরও পড়ুন: হাঁসের ব্যাপক চাহিদা, কেজিতে দাম বেড়েছে ৫০০-৯০০ টাকাচাকরির সুবাদে কক্সবাজারে অবস্থান করেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা সমীর রঞ্জন সাহা। বেলাভূমিতে এসে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বছরের শেষ সূর্যাস্তের সাক্ষী হন।
Advertisement
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজারে থার্টি ফার্স্ট নাইটে সৈকতে উন্মুক্ত অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা যুক্তিযুক্ত নয়। সবাই মিলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থার্টি ফার্স্টের অনুষ্ঠান করা গেলে পর্যটনের বিভিন্ন সেক্টরে কয়েকশ কোটি টাকা বাণিজ্য হতো।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত মতে কক্সবাজারের নাজিরারটেক থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত ১২০ কিলোমিটার সৈকতের কোথাও আতশবাজি, ফটকা ফোটানোসহ গান-বাজনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিংবা ব্যান্ড সংগীতের আয়োজন নিষিদ্ধ। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় বালুচরে দাঁড়িয়ে সমুদ্র উপভোগ করা যাবে। বিধিনিষেধ পালনে টুরিস্ট পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) তানভীর হোসেন বলেন, থার্টি ফার্স্টে দেশের বৃহৎ মিলনমেলা বসে কক্সবাজার সৈকতে। উন্মুক্ত অনুষ্ঠান না থাকলেও নতুন বছর বরণ ও বিদায়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস আলোকিত করা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, অনুষ্ঠান না থাকলেও পর্যটন এলাকার সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকেও দায়িত্ব পালন করছেন। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সায়ীদ আলমগীর/এসআর/এএসএম