২০২৪ সালে দেশের সীমান্তে গুলিতে নিহত হয়েছেন ৩১ জন এবং কারা হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ১০৮ জনের। এছাড়াও এই সময়ে সারাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় ৮৯ জন নিহত এবং ৪৮৩০ জন আহত হয়েছেন।
Advertisement
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করেছে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
এমএসএফ মনে করে, মানবাধিকার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিলে ২০২৪ সাল ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের এক স্মরণীয় বছর। এ বছর বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদমুক্ত একটি দেশ পেয়েছে। কিন্তু এর জন্য দেশের ছাত্র-জনতাকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের হাতে জীবন দিতে হয়েছে, অন্ধত্ব বরণ করতে হয়েছে, পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে এবং চিরস্থায়ী কষ্ট বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ২০২৪ সালে মানবাধিকার পরিস্থিতির বিশ্লেষণে অন্যতম উদ্বেগের বিষয় ছিল রাজনৈতিক সহিংসতা, গায়েবি মামলা, গণগ্রেফতার এবং নির্বাচনী সহিংসতা। এ ধরনের গায়েবি মামলার শিকার হয়েছেন বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা। গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপির মহাসচিবসহ উচ্চ পর্যায়ের অনেক নেতা। জুলাই মাস পর্যন্ত গ্রেফতার অব্যাহত ছিল। পুরোনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রাতারাতি বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সাজা দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে অনেককে।
Advertisement
এর ফলে নাগরিকের গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা ও রাজনীতিতে নিজস্ব মতপ্রকাশ করার অধিকার খর্ব হয়। অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশসহ শান্তিপূর্ণ নানা কর্মসূচি পালন করে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে দমন করার লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন দলের কিছু দায়িত্বশীল নেতার উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। ফলশ্রুতিতে ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগের কর্মীরা বহিরাগতদের নিয়ে প্রকাশ্যে লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্রসহ আন্দোলনকারী নারী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ও তাদেরকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করে।
আরও পড়ুন
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৭০৭ ও নির্যাতনে ১১৩ শ্রমিক নিহতবছরের প্রথম দিন যেমন থাকবে দেশের আবহাওয়াপ্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতীত বলপ্রয়োগ, শিক্ষার্থীসহ সাধারণ নাগরিকদের ওপর আক্রমণের পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় অনেক সম্পদও ধ্বংস করা হয়। ফলে কল্পনাতীত হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
Advertisement
এসময় রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধি ছাড়াও বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধা প্রদান ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক আক্রমণের ঘটনার তীব্রতা পরিলক্ষিত হয়। জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচন ও নির্বাচনোত্তর সহিংসতা, হানাহানি ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ১৬ টি, কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ৮টি এবং পুলিশ হেফাজতে ৯ মৃত্যু হয়েছে। আলোচ্য সময়ে ২৬৪ টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গণপিটুনিতে ১৪৬ মৃত্যু হয়েছে। ১৫২০টি রাজনৈতিক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ১৩ হাজার ৪৬৮ জন। এছাড়া ২০২৪ সালে সহিংসতায় ৫ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৩৮ মামলাত গ্রেফতার হয়েছেন ২৪ জন। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার হয়েছে ৫০৪টি। এছাড়াও ৩৩১ টি শিশু ধর্ষণ ও ২৮১ টি নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।
এসএম/এএমএ