মো. মাহিদুজ্জামান সিয়াম
Advertisement
খ্রিস্টীয় নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে থার্টি ফার্স্ট নাইট বর্তমান প্রজন্মের কাছে যেন এক উন্মাদনার নাম। নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে মানুষের উৎসব-উদ্দীপনার শেষ নেই। তবে রাজধানীসহ দেশের বড় শহরে থার্টি ফার্স্ট নাইটে আতশবাজি, পটকা ফুটানো ও ফানুস উড়ানোসহ নানা বাঁধভাঙা আনন্দের প্রতিফলন যেন কাল হয়ে দাঁড়ায় প্রাণিকূল; যেমন: কুকুর, বিড়াল, নবজাতক শিশু বিশেষ করে পাখিদের জন্য।
কুকুরের শ্রবণশক্তি স্বভাবতই খুব সংবেদনশীল আতশবাজির বিকট শব্দ তার জন্য অনেক ক্ষতিকর। ২০২৩ এর বর্ষবরণের আনন্দে ফাটানো আতশবাজির বিকট শব্দে আতঙ্কিত হয়ে ড্রেনে পড়ে মৃত্যু হয় এক কুকুরের। আবার আতশবাজির শব্দে ভয়ে হার্ট অ্যাটাকে বিড়ালের মৃত্যুর নজিরও রয়েছে।
জন্ম থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত শিশু তানজিম উমায়ের। আমরা কি ভুলে যাবো তার কথা? ২০২২ সালের পহেলা জানুয়ারি আতশবাজির বিকট শব্দে অসুস্থ হয়ে মারা যায় শিশুটি। এছাড়াও হাসপাতালের বেডে কত হৃদরোগী কাতরাচ্ছে তা দেখার সময় বোধহয় আমাদের হয় না।
Advertisement
বলা হয়ে থাকে ‘পাখির কলতান প্রকৃতির প্রাণ’ তবে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আতশবাজির ঝলকানি ও বিকট শব্দে যেন পাখিদের কলতানকে গলা টিপে হত্যা করে। ভয়ে দিশেহারা হয়ে যায় পাখিরা। বৈদ্যুতিক তার, জানালা বা বিল্ডিংয়ে বাড়ি খেয়ে মৃত্যু হয় অনেক পাখির। আবার ফানুসের আগুনে ঝলসে যায় অনেকের দেহ। ফ্রন্টিয়ারস ইন ইকোলজি অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা পত্র বলছে, নববর্ষে আতশবাজিতে আক্রান্ত হয় লাখ লাখ পাখি।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের গত বছরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বর্ষবরণের রাতে শুধু রাজধানীতে চার প্রজাতির শতাধিক পাখি মারা যায় এবং কমপক্ষে চার প্রজাতির পাখি ভয় ও আতঙ্কে বাসা থেকে উড়ে যায়। যেমন: টিয়া, লক্ষ্মীপ্যাঁচা, খঞ্জন ও শালিক পাখি ইত্যাদি। অনেক পাখি অসুস্থ হওয়ার পাশাপাশি রাজধানীর প্রায় আটটি জায়গায় শতাধিক পাখির মৃত্যু হয়েছে। পাখিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছিল চড়ুই। কাক, বাতাসী ও ঘরবাতাসী পাখির মৃত্যুর সংখ্যাও কম ছিল না।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী মিরপুর-১৪ নম্বর, বোটানিক্যাল গার্ডেন ও জাতীয় চিড়িয়াখানা, তেজগাঁও সাতরাস্তা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া, ওয়ারী ও সদরঘাট এলাকায় পাখির মৃত্যুর হার বেশি।
বর্ষবরণের মানুষের এত আনন্দের ভিড়ে প্রাণিকূলের একটি ছোট্ট অংশ যেন মিনতি করে বলে, ‘তোমাদের উৎসবের কারণে বছরের শেষ দিনটি যেন আমাদের জীবনের শেষ দিন না হয়!’
Advertisement
লেখক: সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়
কেএসকে/জিকেএস