রাজশাহী শহর ও উপজেলা পর্যায়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে স্কুল। কিন্ডার গার্টেন হিসেবে পরিচিত এসব স্কুলের প্রায় সবগুলোই পাঠদানের অনুমোদনহীন। অনুমোদন ছাড়াই বছরের পর বছর চলছে এসব স্কুল। আর অনুমোদন না থাকলেও এসব স্কুলের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা। প্রতি বছরের শেষের দিকে চটকদার সব বিজ্ঞাপন ও সুনামের কথা বলে শিক্ষার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অঙ্কের টাকা।
Advertisement
তবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারীরা এগুলোর অনুমোদন চাইলেও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো এই প্রক্রিয়াগুলোকে এগিয়ে নিচ্ছে না। আর জেলা প্রশাসন বলছে, তারা তালিকা করছে। অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদন না থাকায় পার্শ্ববর্তী কোনো স্কুলের সঙ্গে তারা যৌথভাবে স্কুল পরিচালনা করে। সরকারি নিবন্ধন পাওয়া স্কুলের শিক্ষা তালিকায় অনুমোদনহীন স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের নাম দেখান। প্রাথমিক বা মাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষাতে তাদের স্কুলের শিক্ষার্থী হিসেবেই অংশ নেয় এসব শিক্ষার্থী। এমনকি সরকারি বই পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই তারা বই পেয়ে থাকে। এ কারণে নামিদামি স্কুলের শিক্ষার্থী হলেও বেশিরভাগ শিশুই জানে না তারা আসলে কোন স্কুলের নিবন্ধিত শিক্ষার্থী।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা, ২০২৩ এর বিধি ৪ এর উপবিধি (৫) এর অধীন প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য (১ এক বছর মেয়াদি) ‘পাঠদান অনুমতি’ ১১ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত রয়েছে মাত্র ২৬টি প্রতিষ্ঠানের। যদিও রাজশাহী কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশন নেতাদের তথ্যমতে, রাজশাহী জেলায় প্রাথমিকের বেসরকারি স্কুল আছে প্রায় ৩০০টি।
Advertisement
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের তথ্যমতে, মাধ্যমিক পর্যায়ে রাজশাহী জেলার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পাঠদানের অনুমতি নিয়েছে মাত্র ৪২টি। আর পাঠদান করছে প্রায় আড়াইশ স্কুল।
রাজশাহী নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে রয়েছে শিমুল মেমোরিয়াল নর্থ পয়েন্ট স্কুল। সেই স্কুলে পাঠদানের অনুমতির যথাযথ কাগজ নেই, কিন্তু ভর্তি চলছে। তবে স্কুলের চেয়ারম্যান এমএ মান্নান খাঁন অবশ্য দাবি করেন, তাদের অনুমোদন আছে। এজন্যই তারা ভর্তি করছেন। তার কাছে অনুমোদনের কাগজ দেখতে চাইলে কিছু কাগজও পাঠান তিনি। তবে তার দেওয়া কাগজে দেখা যায় তার স্কুলের অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৫ সালে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
স্কুলটির প্রধান শিক্ষক বিরাজ অহম্মেদ বলেন, এক বছরের জন্য আমরা আরও অনুমোদন নিয়েছি। আমাদের লটারির লিস্ট দেওয়া হয়েছে। অনুমোদন না থাকলে আমরা কীভাবে ভর্তি নিচ্ছি? তবে অনুমোদনের কাগজ পাঠানোর জন্য বললে তিনি বলেন, আপনি আসেন। সমানা সামনাসামনি আরও কাগজ দেখানো হবে।
তবে প্রতিষ্ঠানটির কাগজ সরবারহকারী শিক্ষক মো. অসলাম বলেন, আমরা আবারো অনুমোদনের জন্য অবেদন করেছি। এখন আমরা ভর্তি করছি সেই অবেদনের ওপরই।
Advertisement
রাজশাহী জেলা প্রিক্যাডেট ও কিন্ডার গার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রফিক অলম বলেন, রাজশাহী জেলায় প্রায় ৩০০ কিন্ডার গার্টেন রয়েছে। মহানগরে রয়েছে ৮৫টি। এদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানেরই পাঠদানের অনুমতি নেই। আমরা চাই এগুলো একটি নিয়মের মধ্যে আসুক। কারণ সকালে একটি জন্ম দেবে, বিকেলে আরেকটি জন্ম দেবে এমনটি ঠিক নয়। এটা থাকাও উচিত নয়।
তিনি আরাও বলেন, এরা ভর্তি করছে তাদের প্রতিষ্ঠানে, আর পরীক্ষা দেওয়ান অন্য প্রতিষ্ঠানে। এগুলো এক ধরনের প্রতারণা। আমরাও চাচ্ছি খুব দ্রুত এগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হোক। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মনিটরিং প্রচণ্ড স্লো। তারা যদি একটু দ্রুত না করেন তাহলে আরও নতুন প্রতিষ্ঠান হবে।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এ.কে.এম আনোয়ার হোসেন বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে আমরা সবার জন্য পাঠদানের অনুমতি প্রক্রিয়া সহজ করে দিয়েছি। তারা আমাদের শর্ত পূরণ করলেই এটি পেয়ে যাবে।
রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুল আজিজ সরদার বলেন, আমাদের মাধ্যমিকের পাঠদানের অনুমতি শিক্ষা বোর্ড থেকে নিতে হয়। কোনো স্কুল যদি সেটি না করে থাকে তাহলে আমরা তাদের বই দেবো না।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. অলীউল আলম বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠান যদি পাঠদানের অনুমতি না নেই, পাশাপাশি তারা যদি এখনো এই কার্যক্রম চালায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) টুকটুক তালুকদার বলেন, আমরা এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। একটি তালিকাও করেছি। এগুলোর বিরুদ্ধে আমরা জেলা প্রশাসককে জানাবো। তিনি আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
এফএ/জিকেএস