শিক্ষা

জুলাই বিপ্লব যুক্ত হবে রাবির ইসলামের ইতিহাস কারিকুলামে

১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১৯৫৪-৫৫ সেশনে মাত্র আটটি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিহাস বিভাগ এর মধ্যে একটি ছিল। ১৯৫৫-৫৬ সেশনে ইতিহাস বিভাগের অধীনে মাত্র চারজন ছাত্র নিয়ে মাস্টার্স প্রিভিয়াস লেভেলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি পড়ানো শুরু হয়। অতপর ১৯৫৬ সালের নভেম্বর মাসে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভাগটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিশিষ্ট পণ্ডিত এবং ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. এম.এ. বারী। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ১২টি বিভাগের মধ্যে অন্যতম বড় একটি বিভাগ ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি। এই বিভাগের কারিকুলাম, শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার ও এর সময়োপযোগীতা নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. ফজলুল হক।

Advertisement

ইসলামের ইতিহাসে শিক্ষার্থীদের মূলত কী শেখানো হয়?‘ইসলামের ইতিহাস’ নামকরণ দিয়ে এই বিভাগকে বিচার করলে একটু ভুল হবে। একটি বিভাগের পড়াশোনা বুঝতে হলে সেটার কারিকুলামের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। দেখতে হবে যে, আমরা সময়োপযোগী বিষয়গুলো পড়াচ্ছি কি না। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক হিসেবে আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে চাই, ইসলামের ইতিহাস এমন একটি কারিকুলাম, যেখানে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস আছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস আছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বহির্বিশ্বের যে সম্পর্ক, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স, সেটাও আছে। স্থাপত্য কলা, চিত্রকলাও পড়ানো হয় এখানে। অর্থাৎ সময়োপযোগী বিষয়গুলোই আমরা পড়িয়ে থাকি।

কোন বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে?আমরা অত্যন্ত গর্ব করে বলতে পারি যে, সদ্যসমাপ্ত জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে যাত্রা শুরু হলো, আমরা আগামী কারিকুলামে এটাকেও অন্তর্ভুক্ত করবো। আবার কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন হয়ে গেল, সেটাও কিন্তু মাস্টার্সে যুক্ত হয়ে গেল।

আরও পড়ুন:বায়োটেক পোশাকশিল্পকেও ছাড়িয়ে যেতে সক্ষমকেন পড়বেন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজিকেন পড়বেন সাংবাদিকতা

এই বিভাগে পড়াশোনার অনেকগুলো দৃষ্টিভঙ্গির কথা বললেন, কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বেছে নেওয়ার কোনো প্রক্রিয়া কি আছে? হ্যাঁ। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিভাগে অনার্স করার পর মাস্টার্স চারটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। উদাহরণ দিয়ে বলি। এই চার গ্রুপের মধ্যে অন্যতম ‘মিডলইস্ট ইন মডার্ন টাইমস্’। অর্থাৎ বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বের জিওপলিটিক্যাল যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোও আমাদের বিভাগের মাস্টার্সে বিস্তারিত পড়ানো হচ্ছে। এ রকম আরও উদাহরণ আছে। সুতরাং, এই বিভাগে যে শিক্ষার্থী পড়বে, সে আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে নিজেকে অত্যন্ত দক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে। দেশের ইতিহাস সম্পর্কেও তার বিস্তর জানাশোনা থাকবে।

Advertisement

এই বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স করে চাকরির বাজারে একজন শিক্ষার্থীর সুযোগ কেমন?জব সেক্টর বা চাকরির প্রতিযোগিতা ও পরীক্ষা হচ্ছে নিজের মেধাকে মূল্যায়ন করার একটা অন্যতম মাধ্যম। আর একজন শিক্ষার্থী কোন বিভাগে পড়লো, তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, সে কতখানি শিখলো। এখন এমন কোনো কলেজ নাই যেখানে এই বিষয়টি নাই। আমাদের শিক্ষার্থীরা পাশ করে শিক্ষকতায় যেতে পারবে। তারা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। ব্যাংকিং সেক্টর, ঐতিহাসিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রভৃতিতে তাদের চাকরির দরজা খোলা আছে।

উচ্চশিক্ষার সুযোগ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই বিষয়টির গুরুত্ব কেমন?আমার শিক্ষকতার অভিজ্ঞতায় আমি অন্তত ২০ থেকে ২২ জন শিক্ষার্থীকে অনার্সে পড়া অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ইসলামের ইতিহাস পড়তে চলে যেতে দেখেছি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিষয়টির গুরুত্ব না থাকলে তো তারা যাওয়ার সুযোগ পেতো না।

বিশেষ করে ইসলামী চিত্রকলা, ইসলামী আর্কিটেকচার বিষয়গুলোসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির ব্যাপক গুরুত্ব আছে।

আরও পড়ুন:বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির বিষয় নির্ধারণ করবেন কীভাবেপরিবেশবিজ্ঞান পড়া কেনো যুগোপযোগীকৃষিবিজ্ঞানে অনার্স, চাকরি কোথায়কী আশায় পড়বো আইন?

নৈতিক শিক্ষাও নিশ্চয়ই অন্যদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব সহকারে শেখেন এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা?এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। নৈতিকতা, সত্যবাদীতা, জাতীয়তাবাদ, মানবতাবাদ, এ বিষয়গুলোর প্রত্যেকটা মানুষের মধ্যে গড়ে তোলাই শিক্ষার উদ্দেশ্য। আমার বিশ্বাস, আমাদের দেশের এবং আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা এই বিষয়গুলোর গুরুত্ব বুঝে যেন নিজেকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের মাধ্যমে পরিচালিত করে। তাদের কৃতকর্ম যেন দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনে।

Advertisement

এই বিভাগটি শুরু করেছিলেন কে? রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক, অধ্যাপক ড. এবিএম হোসেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম প্রফেসর ইমেরিটাস, আমাদের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক আব্দুল বারি স্যার, তিনি অক্সফোর্ড হার্ভার্ড ক্যামব্রিজ এসব জায়গা থেকে ইসলামের ইতিহাসে তাদের যে জ্ঞান ও ধারণা, এবং সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলেন স্যার আজিজুল হক। তিনি লন্ডনে পড়ালেখা করা অবস্থায় সিদ্ধান্ত নেন যে, ইসলামের ইতিহাস সাবজেক্ট হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। লন্ডন থেকে ফিরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম শুরু করেন এবং তার মাধ্যমে প্রয়াত অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিভাগ প্রথম শুরু করেন। এরপর পর্যায়ক্রমে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এ বিভাগটি চালু হয়। আমরা আজিজুল হক স্যারকে শ্রদ্ধা জানাই যে, তার মাধ্যমে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিভাগ আমরা পেয়েছি।

এএমপি/আরএমডি/জেআইএম