দেশজুড়ে

কিশোরগঞ্জে ঘোড়দৌড় দেখতে হাজারো মানুষের ঢল

বিজয় দিবস উপলক্ষে কিশোরগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেলে অনুষ্ঠিত এ ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে হাজারো মানুষের ঢল নামে সদর উপজেলার বিন্নাটি ইউনিয়ন পরিষদের সামনের বিস্তীর্ণ ফসলের প্রান্তরে। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ঘোড়ার চালক ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী দুরন্ত শিশুরাও ছিল দর্শকদের বিশেষ আকর্ষণ।

Advertisement

তিনটি গ্রুপে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন অঞ্চলের ৪০টি ঘোড়া অংশ নেয়। বিজয়ী ঘোড়ার মালিকদের রেফ্রিজারেটর, এলইডি টেলিভিশন ও মোবাইল ফোনসহ আকর্ষণীয় সব পুরস্কার দেওয়া হয়।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার ফসলের মাঠে এ ঘোড়দৌড়ের আয়োজন করা হয়। এ প্রতিযোগিতা দেখতে আশপাশের উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার বিভিন্ন বয়সী লোকজন দুপুর থেকে ভিড় করেন।

তিনটি গ্রুপে প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন অঞ্চলের ৪০টি ঘোড়া অংশ নেয়। বড় গ্রুপে টাঙ্গাইল জেলার সিয়ামের ঘোড়া প্রথম, একই জেলার আবুলের ঘোড়া দ্বিতীয় ও কিশোরগঞ্জের লাবলুর ঘোড়া তৃতীয় স্থান লাভ করে। মাঝারি গ্রুপে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রামের মাসুদের ঘোড়া প্রথম, বাজিতপুর উপজেলার পিরোজপুরের রাজীবের ঘোড়া দ্বিতীয় ও হবিগঞ্জ জেলার বাবুলের ঘোড়া তৃতীয় স্থান লাভ করে। ছোট গ্রুপে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার বনগ্রামের আব্দুর রাশিদের ঘোড়া প্রথম, বাজিতপুর উপজেলার হালিমপুরের মানিকের ঘোড়া দ্বিতীয় ও একই এলাকার সম্রাটের ঘোড়া তৃতীয় স্থান লাভ করে।

Advertisement

এক সময় ঘোড়াই ছিল গ্রাম-বাংলার পরিবহন কাজের একমাত্র মাধ্যম। তখন প্রায় প্রতিটি গ্রামেই ঘোড়ার দেখা মিলতো। আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার ক্রমবর্ধমান বিকাশের কারণে দিনে দিনে ঘোড়া বিলুপ্ত হতে চলেছে। কিন্তু কিছু শৌখিন লোক এখনো ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে ঘোড়া সংগ্রহ করে যত্নের সঙ্গে পোষেন।

ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ ইসরাঈল মিঞা, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. মারুফ মিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ নেভিন প্রমুখ।

নাতিকে কাঁধে নিয়ে আসা বৃদ্ধ কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন প্রতি বছরই বিভিন্ন এলাকায় এই সময় ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা হতো। এখন এই খেলা বিলুপ্তির পথে। আজকে ঘোড়দৌড় দেখতে নাতিকে নিয়ে এসেছি। অনেক মানুষ হয়েছে, খুবই ভালো লাগছে।

প্রতিযোগিতা আয়োজক কমিটির সভাপতি লুতফুর রহমান টিটু জানান, তাদের পূর্ব পুরুষের আমল থেকেই আমন ধান কাটার পর প্রতি বছর এমন সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের সামনের ফসলের মাঠে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বিগত কয়েক বছর এই প্রতিযোগিতা বন্ধ ছিল। ২৪’র নতুন বাংলাদেশে বিজয় দিবস উপলক্ষে আবারো এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে। আগামীতেও এই ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ধারাবাহিকভাবে বজায় থাকবে।

Advertisement

এসকে রাসেল/এফএ/জেআইএম