মতামত

সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড-বিতর্ক

রাষ্ট্রযন্ত্র তথা প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়ের একটি ভবনে ‘লাগা’ অথবা ‘লাগিয়ে দেয়া’ আগুনে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র পুড়ে যাওয়ার পরে সেখানে সাধারণ মানুষ তো বটেই, সাংবাদিকদের প্রবেশেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে—যা অনেকটা নিষেধাজ্ঞার মতো। যদিও তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, সাংবাদিকরা অস্থায়ী পাস নিয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারবেন।

Advertisement

প্রশ্ন হলো, অগ্নিকাণ্ড এবং এর তদন্তের সঙ্গে সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের কী সম্পর্ক? সরকার কি মনে করছে যে, এই ঘটনার সঙ্গে সাংবাদিকদের কোনো একটি অংশের সম্পৃক্ততা রয়েছে বা সাংবাদিকরা তদন্তে ব্যাঘাত ঘটাবেন?

এর আগে তিন দফায় ১৬৭ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করে তথ্য অধিদপ্তর-পিআইডি। প্রথম ধাপে গত ২৮ অক্টোবর ২০ জন, দ্বিতীয় ধাপে ৫ নভেম্বর ২৯ জন এবং সবশেষ ৭ নভেম্বর ১১৮ জন সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল করা হয়—যাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান ও সিনিয়র সাংবাদিকও রয়েছেন। যেমন আবেদ খান, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আলমগীর হোসেন, শাইখ সিরাজ, যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, সংবাদের সম্পাদক আলতামাশ কবীর, সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ুন, কালবেলার সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, এপির ব্যুরো চিফ জুলহাস আলম, ইউএনবির উপদেষ্টা সম্পাদক এবং সাবেক ব্যুরো প্রধান ফরিদ হোসেন, ঢাকা জার্নালের সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, ইনডিপেনডেন্ট টিভির বার্তা প্রধান মামুন আব্দুল্লাহ, মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা প্রধান রেজোয়ানুল হক, সমকালের নগর সম্পাদক শাহেদ চৌধুরী, বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল প্রমুখ।

কেন তাদের কার্ড বাতিল করা হলো সেটি মন্ত্রণালয়ের আদেশে বলা না হলেও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেছেন, যাদের কার্ড বাতিল করা হয়েছে তারা সাংবাদিক নন। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সুবিধাভোগী এবং সরকারের অন্যায়ের সহযোগী। তবে তিনি এও বলেছিলেন যে, এই তালিকায় যদি পেশাদার কোনো সাংবাদিকের নাম থাকে, তাহলে সেটি পুনর্বিবেচনা করা হবে।

Advertisement

মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশে প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন নীতিমালা ২০২২ এর ৬.৯, ৬.১০, ৯.৫, ৯.৬ অনুচ্ছেদ এর আলোকে তাদের কার্ডগুলো বাতিল করার কথা বলা হয়েছে। প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. নিজামুল কবীরের বরাত দিয়ে একটি অনলাইন পোর্টালের খবরে বলা হয়, যাদের কার্ড বাতিল করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ সরকারের কাছে এসেছে। মূলত বিগত সরকারের প্রতি অতিমাত্রায় অনুগত্য এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিতর্কিত ভূমিকার কারণে তথ্য অধিদপ্তর নিজস্ব বিবেচনায় বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।

যাদের কার্ড বাতিল করা হয়েছে, তাদের একজন চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক রিজভী নেওয়াজ অবশ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তিনি তার স্থায়ী অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টের রিট করলে আদালত এ বিষয়ে একটি রুল জারি করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং কেন ওই কার্ড পুনর্বহালের নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে তথ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি এই রুল জারি করা হয়।

প্রসঙ্গত, প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড হচ্ছে একজন পেশাদার সাংবাদিকের জন্য সরকারের স্বীকৃতির সনদ। এ কার্ড দেখিয়েই সচিবালয়, সংসদসহ রাষ্ট্রীয় এমন সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সাংবাদিকরা প্রবেশ করতে পারেন, যেখানে সাধারণ মানুষকে বিশেষ অনুমতিপত্র বা পাস নিয়ে ঢুকতে হয়।

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের পরে সেখানে সাধারণ মানুষ তো বটেই, সাংবাদিকদের প্রবেশেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার ১০ ঘণ্টা পর তা নেভানো সম্ভব হয় ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিটের চেষ্টায়। এর দুদিন পর শুক্রবার সচিবালয়ের ‘নিরাপত্তা বৃদ্ধির স্বার্থে’ সব ধরনের অস্থায়ী প্রবেশ পাস বাতিল করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরমধ্যে সাংবাদিকদের প্রবেশের জন্য ইস্যু করা অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডও পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাতিল করা হলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। বিশেষ করে সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।

Advertisement

যেকোনো স্থানে বড় দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রিত করার রেওয়াজ চালু আছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে সাংবাদিকরা যেতে পারবেন না, এমন ঘটনা বিরল। ফলে এই ঘটনাটি এর আগে ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলেরই ধারাবাহিকতা কি না— সাংবাদিকদের মধ্যে সেই প্রশ্নটিও আছে।

যেকোনো স্থানে বড় দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে সাধারণ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রিত করার রেওয়াজ চালু আছে। কিন্তু ঘটনাস্থলে সাংবাদিকরা যেতে পারবেন না, এমন ঘটনা বিরল। ফলে এই ঘটনাটি এর আগে ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলেরই ধারাবাহিকতা কি না— সাংবাদিকদের মধ্যে সেই প্রশ্নটিও আছে।

কেউ কেউ এমনও সন্দেহ করছেন যে, সবার কার্ড বাতিল করে এবার নতুন করে সবার কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করা হবে এবং সরকার যাদেরকে ‘নিরাপদ’ ও ‘নিজের লোক’ মনে করবে না, তাদেরকেই কার্ড দেয়া হবে না। কেননা এর আগে ১৬৭ জন সাংবাদিকের কার্ড বাতিলের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেছিলেন, ‘যাদের কার্ড বাতিল করা হয়েছে তারা সাংবাদিক নন। তারা স্বৈরাচারের দোসর।’ অথচ ওই তালিকায় পেশাদার এমনকি বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিকও ছিলেন।

প্রশ্ন হলো, যাদের কার্ড বাতিল করা হয়েছে তাদের সবাই কি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দালালি করেছেন বা জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সরকারের পক্ষে খোলাখুলিভাবে অবস্থান নিয়েছেন? এ নিয়ে নানা ফোরাম থেকে সমালোচনার মুখে সরকারের তরফে ঘোষণা দেয়া হয়েছিল যে, যাদের কার্ড বাতিল করা হয়েছে সেগুলো পুনর্বিবচনা করা হবে। অথচ দেখা গেলো, পুনর্বিবেচনার আগে একযোগে সব কার্ড বাতিল ঘোষণা করা হলো।

দ্বিতীয়ত, যে ভাষায় ও যে প্রক্রিয়ায় কার্ড বাতিল করা হলো সেটিও অসম্মানজনক। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দেয়া কার্ড বাতিল করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সেই বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন প্রধান উপদেষ্টার একজন বিশেষ সহকারী—যিনি একসময় পুলিশের আইজি ছিলেন। উপরন্তু সেই বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে: ‘এই আদেশ জারি করা হলো।’ অর্থাৎ আমলাতান্ত্রিক তথা কলোনিয়াল হ্যাংওভার এখনও কাটেনি। কে কাকে আদেশ দেন? আদেশের এখতিয়ার কাকে কে দিয়েছেন? একই কথা নানাভাবে, নানা তরিকায়, নানা ভাষায় ও ভঙ্গিতে বলা যায়। জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পেছনে যেসব কারণ দায়ী, তার অন্যতম হচ্ছে গণবিরোধী আমলাতন্ত্র। অথচ সেই আমলাতন্ত্রের ভুত যে অন্তর্বর্তী সরকারও তাড়াতে পারেনি বা পারছে না—এই ধরনের বিজ্ঞপ্তিতে সেটি স্পষ্ট।

নীতিমালা অনুযায়ী প্রধান তথ্য কর্মকর্তা কোনো ব্যক্তির অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল বা স্থগিত করতে পারেন। কিন্তু একযোগে সকলের কার্ড স্থগিত রাখার কোনো বিধি আছে কি না বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এরকম একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে সব সাংবাদিকের কার্ড বাতিল করতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

সাংবাদিক ও বিশ্লেষক মারুফ কামাল খান ফেসবুকে লিখেছেন: ‘আমলা ও ভূতপূর্ব আমলাদের মাইন্ডসেট একটুও বদলায়নি। পাব্লিক সার্ভেন্ট হয়েও ওরা এখনো হুকুম দিয়েই যাচ্ছে। জামানা যে বদলে গেছে সেটা ওরা এখনও বুঝতেই পারেনি। মানসিকতা না বদলানো পর্যন্ত এদের দিয়ে রাষ্ট্র কাঠামো বদলানো সত্যিই অসম্ভব।’

২.

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শনিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তথা কী পয়েন্ট ইনস্টলেশন (কেপিআই) সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের নিরাপত্তা বিবেচনায় অন্যান্য সকল বেসরকারি পাসের পাশাপাশি বর্তমান অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নিয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশও সীমিত করা হয়েছে। সরকার শীঘ্রই বিদ্যমান প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডগুলি পর্যালোচনা করবে এবং নতুন অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ইস্যু করার জন্য তথ্য অধিদপ্তরের (পিআইডি) মাধ্যমে সকল স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে নতুন অ্যাক্রিডিটেশনের আবেদন আহ্বান করবে। এই সময়ে, যেকোনো ইভেন্টের জন্য সাংবাদিকরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত অস্থায়ী অ্যাক্সেস কার্ড পাবেন। সাংবাদিকদের সাময়িক এই অসুবিধার জন্য সরকার আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে।

এই বিবৃতিতে দুটি বিষয় স্পষ্ট। ১. সাংবাদিকদের বিদ্যমান অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল এবং নতুন করে কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে; ২. নতুন কার্ড না পাওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে নিয়মিত অস্থায়ী অ্যাক্সেস কার্ড নিতে হবে।

এদিনই উপ-প্রেসসচিব আজাদ মজুমদার নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন: কোনো সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বাতিল করা হয়নি। কেবল সচিবালয়ের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে। তা-ও খুবই অল্প সময়ের জন্য। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অস্থায়ী পাস ইস্যু করা হবে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শীঘ্রই বিদ্যমান সব প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডই পর্যালোচনা করা হবে এবং নতুন অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যু করার জন্য সমস্ত স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের কাছে আবেদন চাওয়া হবে।

তিনি আরও লিখেছেন: এটা এখন ওপেন সিক্রেট, বাংলাদেশ সচিবালয়কে দালালদের হাটবাজার বানিয়ে ফেলা হয়েছিলো। সরকারের সর্বশেষ এই সিদ্ধান্তে দালাল ছাড়া কারো শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা মনে করি, এটা সাংবাদিকদের কাজ আরো সহজ করবে। এখন সাময়িক অসুবিধা হলেও চূড়ান্ত বিচারে এটা সবাইকে সহযোগিতা করবে। এজন্যই সবার সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে।

অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয় তথ্য অধিদপ্তর। এই কার্ড পাওয়া বেশ জটিল একটা প্রক্রিয়া। এই কার্ড লাগে মূলত সচিবালয়, সংসদসহ রাষ্ট্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভবনে ঢুকতে। অর্থাৎ এটি একটি বিশেষ প্রবেশাধিকার- যা সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের জন্য জরুরি। কিন্তু এই অভিযোগও বেশ পুরোনো যে, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয়ার নামে অতীতে ব্যাপক হারে দলবাজি ও দুই নম্বরি হয়েছে; যথাযথভাবে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি; বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত সংখ্যায় দেয়া হয়েছে; পেশাদার সাংবাদিক নন এমন ভুইফোঁড় পত্রিকা ও অনলাইনের কথিত সাংবাদিকরা এই কার্ড পেয়েছেন, এমনকি দলীয় কর্মীরাও এই কার্ড বাগিয়ে নিয়ে সচিবালয়ে নানাবিধ তদবির বাণিজ্য করেছেন। কেননা তদবির ও ধান্দাবাজির মূল জায়গা হলো সচিবালয়। সুতরাং যাদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই যে এরকম টাউট বাটপাড় আছেন, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, টাউট বাটপাড় সব পেশাতেই আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও চিকিৎসকদের মধ্যেও আছে। এমনকি বইয়ের প্রকাশক, লেখক ও বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও আছে। যিনি টাউট তিনি শিক্ষক হলেও টাউট, মসজিদের ইমাম হলেও টাউট। সুতরাং অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের মধ্য দিয়ে যদি সত্যিই জঞ্জাল পরিষ্কারের চেষ্টা করা হয়, সেটা সাধুবাদযোগ্য। প্রশংসনীয়। বিভিন্ন সময়ে প্রচুর জাল কার্ড দেওয়া হয়েছে বলেও শোনা যায়। ফলে সেগুলো পর্যালোচনা করে নতুন অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়ার জন্য যদি এই উদ্যোগ হয়ে থাকে, সেটিও সমর্থনযোগ্য।

কিন্তু এইধরনের পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যদি প্রকারান্তরে গণমাধ্যম ও গণমাধ্যমকর্মীদের ভয় দেখানো তথা চাপে রাখার চেষ্টা করা হয়; যদি সবার কার্ড বাতিল করে নতুন করে আবেদন নিয়ে সেই আবেদন যাচাই বাছাইয়ের নামে ‘নিজস্ব লোকদেরকেই’ কেবল এই কার্ড দেয়া হয় এবং নতুন করে পুলিশি ভেরিফিকেশনের নামে হয়রানি করা হয়; কালক্ষেপণ করা হয়—তাহলে সেটি আরেকটি খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।লেখক: সাংবাদিক ও লেখক।

এইচআর/জেআইএম