২০০৮ সালের মার্চ মাসে এক হত্যা মামলায় বিতর্কিতভাবে ভারতীয় নাগরিক বাদল সিংয়ের পরিবর্তে আসামি করা হয় বাদল ফরাজী নামের এক বাংলাদেশিকে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার পরিবর্তে বন্দি বিনিময় চুক্তির অধীনে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে এনেও কারাগারে রাখা হয় তাকে। এ ঘটনায় ক্ষতিপূরণ চেয়ে বাদল ফরাজীর মায়ের হয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এবং মহিউদ্দিন জুয়েল।
Advertisement
জুলাই মাসে ফরাজীর ভারতে ঘুরতে যাওয়ার কথা থাকলেও মার্চ মাসে দায়ের করা মামলায় ভারতীয় অভিযুক্তের পরিবর্তে তাকে শাস্তি দেওয়ায় বিতর্কের ঝড় ওঠে। এখন পর্যন্ত মোট ১৬ বছর ধরে জেলে আছেন বাদল ফরাজী।
ভারতের সঙ্গে থাকা প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের জেলে বন্দি বাদল ফরাজীকে অবিলম্বে মুক্তিদান ও ভারত সরকারের কাছ থেকে ১ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছে। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়।
লিগ্যাল নোটিশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব প্রিজন, সুপারিনটেনডেন্ট ও কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলারকে বিবাদী করা হয়েছে। এছাড়া, ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী যেহেতু মামলার বিষয়বস্তুর সঙ্গে ভারত জড়িত, তাই ভারতীয় সরকারের পক্ষে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনারকে মোকাবিলা বিবাদী করা হয়েছে।
Advertisement
নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের নাগরিক বাদল ফরাজী বাংলাদেশের বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনে আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে বিগত ২০০৮ সালের ৯ জুলাই ভারতীয় হাইকমিশন কর্তৃক ১ (এক) মাস মেয়াদি ট্যুরিস্ট ভিসা পান ফরাজী।
এরপর বাদল ফরাজী বৈধ ভিসা নিয়ে ভারতের হরিদাসপুর (বাংলাদেশের বেনাপোল স্থলবন্দর) দিয়ে ভারতে যান। পরে একই বছরের ২১ জুলাই ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাদল ফরাজীকে গ্রেফতার করে তার বিরুদ্ধে ডাকাতি ও খুনের মামলা দায়ের করে। ২০০৮ সলের ৫ মার্চ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে সংঘটিত একটি ডাকাতি ও খুনের মামলায় আসামি ‘বাদল সিং’ নামে এক ভারতীয় নাগরিকের জায়গায় বাংলাদেশি নাগরিক ‘বাদল ফরাজীকে’ গ্রেফতার দেখায় তারা। যদিও বাদল সিং ও বাদল ফরাজী সম্পূর্ণ আলাদা ব্যক্তি ও দুইটি ভিন্ন দেশের নাগরিক। তাছাড়া বাদল সিং যখন ভারতে ডাকাতি ও খুন সংঘটিত করেন তখন বাংলাদেশের নাগরিক বাদল ফরাজী বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাংলাদেশের নাগরিক বাদল ফরাজীকে ২০০৮ সালের ২১ জুলাই গ্রেফতার করার পরে ব্যাপক নির্যাতন করে তাকে ওই ডাকাতি ও খুনের মামলায় স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে।
অন্যদিকে বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন বাদল ফরাজীর ব্যাপারে ভারত সরকারকে যথাযথ তথ্য প্রদানে অবহেলা করে। এছাড়া, ভারতের নয়াদিল্লিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন বাদল ফরাজীর ন্যায়বিচার ও মুক্তির জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। ফলশ্রুতিতে ২০১৫ সালের ২২ আগস্ট ভারতের আদালত বাংলাদেশি নাগরিক বাদল ফরাজীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন।
Advertisement
পরবর্তীতে ভারত সরকার বাদল ফরাজীর নির্দোষ হওয়ার বিষয়টি অনুধাবন করে বিগত ২০১৮ সালের ৮ জুলাই ভারত-বাংলাদেশ বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী বাদল ফরাজীকে বাংলাদেশের নিকট প্রত্যর্পণ করে।
এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ভারতের দিল্লির কারা নীতিমালা অনুযায়ী কোনো সাজাপ্রাপ্ত বন্দি ১৪ বছর জেল খাটলে তাকে ‘সেন্টেন্স রিভিউ বোর্ড’ এর সিদ্ধান্তে মুক্তি দেওয়া হয়। সেই হিসেবে বাদল ফরাজী জেল থেকে এতদিনে মুক্তি পাওয়ার কথা। যেহেতু প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় বাদল ফরাজীকে বাংলাদেশের জেলে রাখা হয়েছে তাই বাংলাদেশের জেল কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ সরকারকে ওই ‘সেন্টেন্স রিভিউ বোর্ডের’ কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের জেল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের চরম অবহেলার কারণে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠানো হচ্ছে না। ফলশ্রুতিতে ১৬ বছরেরও অধিক সময় কারাভোগ করার পরও বাদল ফরাজীকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না।
লিগ্যাল নোটিশ পাওয়ার ০৭ (সাত) দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে বাদল ফরাজীকে মুক্তিদানের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে এবং ভারত সরকারের কাছ থেকে ১ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় এই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে।
এফএইচ/এএমএ/জিকেএস