আন্তর্জাতিক

বিশ্বজুড়ে রেকর্ডভাঙা দুর্যোগে অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি

পৃথিবীর ইতিহাসে উষ্ণতম বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ২০২৪ সাল। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এ বছর ভয়াবহ আকারে দেখা দিয়েছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ছোট্ট এবং দরিদ্র মায়োত্তে থেকে শুরু করে তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরব, সমৃদ্ধ ইউরোপীয় শহর থেকে জনবহুল আফ্রিকার বস্তি— সব জায়গায়ই এই বিপর্যয়ের প্রভাব ছিল ধ্বংসাত্মক।

Advertisement

রেকর্ড তাপপ্রবাহ

এ বছরের জুন মাসে সৌদি আরবে হজ পালনের সময় তাপমাত্রা ৫১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। এতে সেখানে ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে।

আরও পড়ুন>>

পাকিস্তানে তীব্র তাপপ্রবাহ, ছয় দিনে পাঁচ শতাধিক মৃত্যু জাপানে ১২৬ বছরের রেকর্ড ভাঙলো অক্টোবরের তাপমাত্রা

থাইল্যান্ড, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রেও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছিল তাপপ্রবাহ। এমনকি, মেক্সিকোতে গরমের কারণে গাছ থেকে পড়ে মারা যায় বহু বানর। পাকিস্তানে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার কারণে লাখ লাখ শিশু বাড়িতে থাকতে বাধ্য হয়।

Advertisement

গ্রিসে তাপপ্রবাহের কারণে আকরোপলিস বন্ধ করে দিতে হয়। ইউরোপে এবার ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ গ্রীষ্ম।

ভয়াবহ বন্যা

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের ধরন পাল্টে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এ বছর ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। গত এপ্রিল মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে মাত্র এক দিনে দুই বছরের সমপরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়।

গত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ভয়ংকর বন্যার মুখে পড়ে বাংলাদেশ। তলিয়ে যায় বিশাল এলাকা।

এ বছর কেনিয়া যখন এক দশকে একবার ঘটে এমন খরার কবল থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিল, তখনই ভয়াবহ বন্যা দেশটির জন্য নতুন বিপর্যয় ডেকে আনে।

Advertisement

আরও পড়ুন>>

বন্যা মোকাবিলায় ব্যর্থতা/ স্পেনে রাজা-রানির গায়ে কাদা ছুড়লো ক্ষুব্ধ জনতা দক্ষিণ সুদানে বন্যায় ১০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত

পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় ঐতিহাসিক বন্যায় দেড় হাজারের বেশি মানুষ মারা যায় এবং ৪০ লাখের বেশি মানুষ ত্রাণ-সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয় দক্ষিণ ইউরোপের দেশগুলো, বিশেষ করে স্পেন।

২০২৪ সালে বন্যার কবলে পড়া অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, চীন, রাশিয়া, ব্রাজিল, উগান্ডা, সোমালিয়া, বুরুন্ডি, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি।

ঝড়ের তাণ্ডব

উষ্ণ মহাসাগরের কারণে এ বছর ঝড়গুলো আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে বড় ধরনের হারিকেন আঘাত হেনেছে। ফিলিপাইনে গত নভেম্বরে তাণ্ডব চালিয়েছে ছয়টি বড় ঝড়।

আরও পড়ুন>>

প্রশান্ত মহাসাগরে একসঙ্গে ৪ ঘূর্ণিঝড়, ফিলিপাইনে বড় বিপদের শঙ্কা উড়িষ্যায় আঘাত হেনে শক্তি হারালো ঘূর্ণিঝড় দানা

ডিসেম্বরে মায়োত্তেতে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় চিডো। এতে বিধ্বস্ত হয় ফ্রান্সের দরিদ্রতম অঞ্চলটি।

খরা-দাবানল

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় তীব্র খরা দেখা দেয় এবং দাবানলে লাখ লাখ হেক্টর জমি পুড়ে যায়।

আরও পড়ুন>>

ক্যালিফোর্নিয়ায় দাবানল, ঘর ছেড়ে পালাচ্ছে মানুষ গ্রিসে ভয়াবহ দাবানল, আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন

দক্ষিণ আমেরিকায় এ বছর নয় মাসে চার লাখের বেশি দাবানল রেকর্ড করা হয়েছে।

অর্থনৈতিক ক্ষতি

সুইস পুনর্বিমা কোম্পানি সুইস রি জানিয়েছে, ২০২৪ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।

বিশ্ব আবহাওয়া বিশ্লেষণ সংস্থার বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এই বিপর্যয়ের পেছনে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রভাব স্পষ্ট। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।

সূত্র: এএফপিকেএএ/