দেশজুড়ে

চাঁদপুরে নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে ব্যাহত পণ্য পরিবহন

চাঁদপুরের মেঘনা নদীর মাঝের চরে ৭ খুনের ঘটনায় দোষীদের শাস্তিসহ নানা দাবিতে পণ্যবাহী লাইটার জাহাজ শ্রমিকদের দুই দিনের ধর্মঘটে অচল হয়ে গেছে নৌপথ। পদ্মা-মেঘনার বিভিন্ন স্থানে নোঙর করে রাখা হয়েছে জাহাজগুলো।

Advertisement

শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌযান পরিবহনের চাঁদপুর নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের যুগ্ম পরিচালক শ. আ. মাহফুজ উল আলম মোল্লা। এর আগে শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই বন্ধ ছিল পণ্যবাহী নৌযান।

শ. আ. মাহফুজ উল আলম মোল্লা বলেন, শ্রমিকরা যে দাবি নিয়ে ধর্মঘটে নেমেছেন, এতে আমাদের ইজারাযুক্ত ঘাটগুলো অচলের মুখে রয়েছে। এভাবে চলতে পারে না। তাই আমরা রোববারের মধ্যেই আমাদের ঊর্ধ্বতনকে নিয়ে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে সমাধানে বসবো।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুরে পুরানবাজার, চৌধুরীঘাট, লঞ্চঘাট ও রঘুনাথপুর অর্থাৎ মাত্র চারটি ইজারাভুক্ত ঘাটে জাহাজ থেকে পণ্য লোড-আনলোড হয়ে থাকে। এরমধ্যে রঘুনাথপুর ঘাটটি ৪৪ হাজার টাকায় ইজারা হলেও বাকি ঘাটগুলোর ইজারা বছরে প্রায় ৪৪ লাখ টাকা। প্রতিটি ঘাটে দিনে গড়ে ৮০-৯০টি মালবাহী, তৈল-গ্যাসবাহী, বালুবাহীসহ সব প্রকার পণ্যবাহী নৌযানে লোড-আনলোড হয়। অর্থাৎ গড়ে জেলার ঘাটগুলোতে দিনে ৩০০-৪০০ পণ্যবাহী জাহাজে লোড-আনলোডের কাজ হয়। তাই এভাবে কর্মবিরতি চলতে থাকলে অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

কর্মবিরতিতে থাকা শ্রমিক কাসেম, আজাদ, হাবিবসহ অনেকে বলছেন, চাঁদপুরে ইজারাভুক্ত পণ্যবাহী ট্রলারঘাট ৪টি হলেও ইজারাবিহীন ঘাটের সংখ্যা ২০টিরও বেশি। কাজেই এতে পণ্যবাহী ট্রলারের সংখ্যা যেমন বাড়বে তেমনি আয়-ব্যয়ের হিসাবও বাড়বে। কোটি কোটি টাকার কাঁচামালের আমদানি-রপ্তানি কিন্তু এই নৌপথেই হয়ে থাকে। তাই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের নৌ ধর্মঘট চলবে।

এর আগে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, চাঁদপুরে মেঘনা নদীতে এম. ভি. আল-বাখেরা জাহাজের মাস্টারসহ ৭ শ্রমিক হত্যার ঘটনার কারণ উদ্ঘাটন, হত্যাকারীদের শনাক্ত করে গ্রেফতার, মৃত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য সরকারিভাবে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা, সব নৌপথে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি ডাকাতি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি। তাই ২৬ ডিসেম্বর রাত ১২টা থেকে সব প্রকার পণ্যবাহী নৌযানের শ্রমিকরা লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করে।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা হারুনুর রশীদ জানান, চাঁদপুরে জাহাজে ৭ খুনের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া রক্তমাখা চাইনিজ কুড়ালের ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং গ্রেফতার ইরফানের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলেছে কি না তা আমরা জানতে চাই। এছাড়া ইরফান একা জাহাজ চালাতে কতটা পারদর্শী সেটাও আমরা সরাসরি দেখতে চাই। আর তা না পারলে এ ঘটনায় ৮-১০ কে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে জাহাজ মালিক মাহাবুব মোর্শেদ যে মামলা করেছেন সে অনুযায়ী ঘটনায় জড়িত অন্যান্য আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারসহ আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হোক। তা না হলে ধর্মঘট চলবে।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মহসীন উদ্দিন বলেন, নৌযান শ্রমিক নেতাদের দাবি নিয়ে আলোচনার চেষ্টা চলছে। দ্রুতই সমাধান আসবে।

Advertisement

শরীফুল ইসলাম/জেডএইচ/এএসএম