কৃষি ও প্রকৃতি

বিদেশি মুরগি পালনে অন্তরের সফলতা

লাল, সাদা আর বাহারি রঙের পালকে ঢাকা মুরগিগুলোর শরীর। দেখলে মনে হবে, এ যেন চিত্রশিল্পীর আল্পনা আঁকা। কোনোটার মাথা দেখতে সিংহের কেশরের মতো, কোনটাবা সাদা কদম ফুল। এমন বিদেশি নানা জাতের মুরগি পালনে সফলতার মুখ দেখেছেন শরীয়তপুরের অন্তর গোড়াপী নামের এক কলেজ শিক্ষার্থী। বর্তমানে এ থেকে তার মাসিক আয় অন্তত ৩০ হাজার টাকা।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের মোকলেস গোড়াপী ও মাকসুদা খানম দম্পতির ছোট ছেলে অন্তর গোড়াপী (২৪)। বর্তমানে তিনি স্থানীয় উপসী তারাপ্রসন্ন ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। তার মুরগি পালনের শুরুটা বছরখানেক আগে। একটি ফেসবুক পেজ থেকে ইউরোপিয়ান শর্ট সিল্কি জাতের মুরগি দেখে আকৃষ্ট হন তিনি। মায়ের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে পাশের জেলা চাঁদপুর থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় এক জোড়া মুরগি কিনে নিয়ে আসেন। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এক জোড়া মুরগি থেকে ডিম সংগ্রহ করে নিজে তা ব্রিড করিয়ে বাচ্চা বিক্রি করতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে সেই টাকায় গড়ে তোলেন এক বিদেশি মুরগির খামার।

বর্তমানে তার খামারে ইউরোপিয়ান সিল্কি, ইন্ডিয়ান সুলতান, কলোম্বিয়ান লাইট ব্রাহ্মা, গোল্ডেন স্রেফ ব্রাইট, বাফ পলিশক্যাপ, ফাউমি, টাইগারসহ ৮ প্রজাতির অন্তত ১০০টি মুরগি আছে। যার আনুমানিক মূল্য লাখ টাকা। মুরগিগুলোর মধ্যে এক এক জোড়ার দাম ১০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তার এ মুরগির ডিম থেকে বাচ্চাগুলো ফুটলে চলে যায় রাজশাহী, দিনাজপুর, শেরপুর, ফরিদপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায়। এ থেকে তার মাসিক আয় অন্তত ৩০ হাজার টাকা। মুরগি বিক্রির টাকায় চলছে তার পড়াশোনা ও হাতখরচ। পাশাপাশি মা-বাবাকে মাঝেমধ্যে উপহার দিয়ে থাকেন। এতে খুশি তার পরিবার। পাশাপাশি প্রতিবেশীরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন নানা জাতের মুরগি পালনে।

আরও পড়ুন

Advertisement

বার্ড ফ্লু থেকে খামারকে নিরাপদ রাখার উপায় পোল্ট্রির খামার কোথায় করবেন?

অন্তর গোড়াপীর মা মাকসুদা খানম বলেন, ‘প্রথম প্রথম ছেলের মুরগি পালনে বিরক্ত হতাম। এখন খারাপ আড্ডা না দিয়ে মুরগি পালনে সময় দেয়। এ থেকে ওর নিজের হাতখরচের টাকা আয় করছে। কিছু একটা করে নিজে স্বাবলম্বী হচ্ছে, এটা খারাপ কিছু না।’

প্রতিবেশী নারগিস আক্তার বলেন, ‘অন্তর আমাদের প্রতিবেশী। ও যে এত সুন্দর সুন্দর মুরগি পালন করে, এটা আমারও খুব ভালো লাগে। আমার বাড়িতে অনেক জায়গা পড়ে আছে। আমার ইচ্ছা আছে, ওর থেকে বিদেশি মুরগি সংগ্রহ করে পালন করবো।’

অন্তর গোড়াপী বলেন, ‘ফেসবুকে একটি পশুপাখির গ্রুপে যুক্ত হওয়ার পর বিদেশি জাতের মুরগি পালনের শখ জাগে। পরে কিছু জমানো টাকা আর মায়ের থেকে কিছু নিয়ে এক জোড়া ইউরোপিয়ান সিল্কি জাতের মুরগি নিয়ে আসি। সেই মুরগির ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা তৈরি করে বিক্রি শুরু করি। সেই মুরগির টাকায় নানা জাতের মুরগি সংগ্রহ করি। এখন আমার প্রতি মাসে আয় ৩০ হাজার টাকা।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘বিভিন্ন জাতের বিদেশি মুরগি পালনে তরুণ ও কিশোররা উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। যে বাড়তি আয় হচ্ছে; সেই টাকায় নিজের পড়াশোনার খরচ বহন করছেন। পাশাপাশি পরিবারকে সহযোগিতা করছেন। আমরা সব সময় তাদের পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবো।’

Advertisement

এসইউ/এমএস