দীর্ঘ ১৮ বছর পর মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটের রবিউল করিম। দেশে ফিরে তিন সন্তানকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দেশে ফেরেন রবিউল করিম। তার দেশে ফেরার কথা জানিয়েছেন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম।
রবিউল করিম যখন মালয়েশিয়া পাড়ি দেন তখন তার সন্তান ডলার মাহমুদের বয়স মাত্র ১০ বছর। মেয়ে ডলির বয়স ৬, ছোট ছেলে হানিফের বয়স এক মাস মাত্র।
তিনি দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি যে স্বপ্নের খোঁজে, স্বাচ্ছন্দ্যের আশায় মালয়েশিয়ায় পাড়ি দিচ্ছেন, সেই স্বপ্নই তার ছোট্ট পরিবারকে ১৮ বছরের জন্য দ্বিখণ্ডিত করে দেবে। ভিজিট ভিসায় মালয়েশিয়া পৌঁছে দেখেন, তিনি দালালের প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর ভুগেছেন ভিসা ও পাসপোর্টের নানা জটিলতায়। আর দেশে ফিরে আসতে পারেননি। পরে তো পাসপোর্টই হারিয়ে ফেলেন। বারবার দেশে ফেরার চেষ্টা করে ব্যর্থ রবিউল আটকে যান প্রবাসেই।
Advertisement
এদিকে তিন সন্তানের মনে সারাক্ষণ ঘুরতো একটাই প্রশ্ন, বাবা কি সত্যিই আর ফিরে আসবেন? এভাবে পার হয়ে গেছে ১৮টি বছর। বাবাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বড় ছেলে ডলার মাহমুদ সরকারের নানা দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু আইনি জটিলতায় বাবাকে ফিরিয়ে আনতে পারছিলেন না।
আরও পড়ুন সৌদিতে নির্যাতনের শিকার বাংলাদেশি রাবেয়া এখন মানসিক অসুস্থমাস তিনেক আগে ডলার মাহমুদ খোঁজ পান ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের। আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন সেন্টার। তার বাবার প্রত্যাবাসনের কোনো সুযোগ আছে কি না- তা জানতে তিনি ছুটে যান আশকোনায়।
এ বিষয়ে ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন অ্যান্ড ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান জানান, মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের কর্মীরা ডলারের কাছ থেকে বিস্তারিত সব তথ্য জানার পর শুরু হয় রবিউল করিমকে দেশে ফিরিয়ে আনার জটিল প্রক্রিয়া। এ কাজে সহযোগিতা নেওয়া হয় মালয়েশিয়া-প্রবাসী সাংবাদিক বাপ্পি কুমার দাসের। রবিউল করিমকে দেশে ফেরানোর জন্য দূতাবাস, ইমিগ্রেশনসহ সেদেশের নানা দপ্তরে যোগাযোগ করেন তিনি।
বাবাকে ১৮ বছর পর ফিরে পেয়ে আপ্লুত ডলার মাহমুদ বিমানবন্দরে বলেন, মনে পড়ে না বাবাকে শেষ কবে বা কীভাবে জড়িয়ে ধরেছি। একসময় ধরেই নিয়েছিলাম, বাবা হয়তো আর আমাদের মাঝে ফিরবেন না। কিন্তু আজ ব্র্যাক এবং বাপ্পি দাদার সহযোগিতায় সেই দিনটি এসেছে। আমরা তিন ভাই-বোন বাবার পাশে বসে আছি, তাকে ছুঁয়ে দেখছি। এ এক অন্যরকম অনুভূতি, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
Advertisement
জানা গেছে, ২০১৭ সাল থেকে এমন ১৩৮টি পরিবারকে পুনর্মিলিত করতে সহায়তা করেছে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম। ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার ও মানবপাচারবিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকা রেখে যুক্তরাষ্ট্রের টিআইপি হিরো-২০২৪ পুরস্কারে ভূষিত হন আল-আমিন নয়ন।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা কারণে বাংলাদেশিরা আটকে পড়েন। আমরা বিপদে থাকা এই মানুষদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছে থেকেই উদ্ধার করার কাজটা শুরু করেছি। এ কাজে নানা ব্যক্তি ও সংগঠন আমাদের পাশে থেকে সহায়তা করছে।
রবিউল করিমের দেশে ফেরা শুধু একটি পরিবারের পুনর্মিলন নয়, তা ডলার-ডলি আর হানিফের মতো তিন সন্তানের অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর ভালোবাসার প্রমাণও।
আরএএস/এসআইটি/জিকেএস