তালিকাভুক্ত ১১টি কোম্পানির কারখানা, অফিস, আর্থিক হিসাব এবং ব্যবসায়িকসহ অন্যান্য কার্যক্রম তদন্ত করবে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পাশাপাশি এই ১১ কোম্পানির মধ্যে ৯টির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও), একটির পুনঃপ্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আরপিও) এবং একটির রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে উত্তোলন করা অর্থের ব্যবহার খতিয়ে দেখা হবে।
Advertisement
এই ১১ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- আমরা নেটওয়ার্ক লিমিটেড, বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেড, ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড, লুব-রেফ বাংলাদেশ লিমিটেড, নাভানা ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড, রিং সাইন টেক্সটাইলস লিমিটেড, বাংলাদেশ শপিং কর্পোরেশন লিমিটেড, শিকদার ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড, সিলভা ফার্মাসিটিক্যালস লিমিটেড এবং একটিভ ফাইন কেমিক্যালস লিমিটেড।
এ লক্ষ্যে সম্প্রতি বিএসইসি থেকে কোম্পানিগুলোর প্রতিটির জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব তদন্ত কমিটিকে ৩০ ও ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক কার্যক্রমে কোনো অসঙ্গতি করেছে কি না তা খতিয়ে দেখবে। এ বিষয়ে বিএসইসির জারি করা আদেশ কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) বরাবর পাঠানো হয়েছে।
বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন মনে করে যে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে কোম্পানিগুলোর কারখানা, প্রধান অফিস, আর্থিক হিসাব বই ও রেকর্ড এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক নথিপত্র পরিদর্শন সাপেক্ষে যাচাই করা প্রয়োজন।
Advertisement
তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর রুল ১৭ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন কোম্পানিগুলোর জন্য পৃথক পৃথক তিনজন করে কর্মকর্তাকে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হলো। পরিদর্শক কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন এবং পরিদর্শন প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেবেন।
আমরা নেটওয়ার্কআমরা নেটওয়ার্কের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিএসইসির উপ-পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী হাসান রনি ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মিনহাজ বিন সেলিম।
বেস্ট হোল্ডিংবেস্ট হোল্ডিংসের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন অতিরিক্ত পরিচালক ফারুক হোসেন, সহকারী পরিচালক আরাফুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক আব্দুল বাতেন।
ইনডেক্স এগ্রোইনডেক্স এগ্রোর তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন যুগ্ম পরিচালক রাশিদুল আলম, সহকারী পরিচালক ইব্রাহিম আলী ও সহকারী পরিচালক রায়হান কবির।
Advertisement
জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিটের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল, সহকারী পরিচালক ফারজানা ওয়ালিয়া ও সহকারী পরিচালক আসমাউল হুসনা।
লুব-রেফ বাংলাদেশলুব-রেফ বাংলাদেশের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন অতিরিক্ত পরিচালক সাইফুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক তন্ময় কুমার ঘোষ ও সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ রুমান হোসেন
নাভানা ফার্মাসিটিক্যালসনাভানা ফার্মাসিটিক্যালসের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন উপ- পরিচালক জিয়াউর রহমান, সহকারী পরিচালক রুবেল হোসেন ও সহকারী পরিচালক শাকিল আহমেদ।
রিং সাইনরিং সাইনের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক তারিকুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক অমিত অধিকারী।
বাংলাদেশ শপিং কর্পোরেশনবাংলাদেশ শপিং কর্পোরেশনের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আল মাসুম মৃধা, সহকারী পরিচালক মোসাব্বির আল আসিক ও সহকারী পরিচালক মেহরান আলী।
শিকদার ইন্স্যুরেন্সশিকদার ইন্সুরেন্সের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন অতিরিক্ত পরিচালক ইউসুফ ভুইয়া, সহকারী পরিচালক শারিফুল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক আনোয়ারুল আজিম।
সিলভা ফার্মাসিটিক্যালসসিলভা ফার্মাসিটিক্যালসের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন উপ-পরিচালক আব্দুস সেলিম, সহকারী পরিচালক আজিজুর রহমান ও সহকারী পরিচালক বিনয় দে।
একটিভ ফাইনএকটিভ ফাইন কেমিক্যালসের তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আল মাসুম মির্ধা, উপ-পরিচালক মো. নানু ভূঁইয়া এবং সহকারী পরিচালক এ কে এম ফারুক আলম।
তদন্ত কমিটি যেসব বিষয় খতিয়ে দেখবে• সঠিক নথির মাধ্যমে এবং কমিশনের বিধান অনুসারে আয় ও ব্যয় নিশ্চিত করা হয়েছে কি না।
• যাদের সঙ্গে লেনদেন হয়েছে সেগুলো চিহ্নিত ও লেনদেনের নগদ প্রবাহ এবং সেই বিনিয়োগগুলোর ন্যায্য মূল্যায়ন করা।
• ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন যাচাই করা।
• আইএএস ২৪ অনুযায়ী কোনো সংশ্লিষ্ট পক্ষের সঙ্গে লেনদেন থাকলে চিহ্নিত করা।
• আইপিও বা আরপিও বা রাইট শেয়ারের অর্থের কোনো নয়-ছয় হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করা।
• রাইট শেয়ারের অর্থ যে খাতে ব্যবহার করার কথা ছিল সেখানে ব্যবহার হয়েছে কি না এবং কমিশনের কাছে সময় সময় জানানোর বিষয়ে আর্থিক প্রতিবেদন যাচাই করা।
• সব ধরনের লেনদেনের মধ্যে ছোট নগদ খরচ ব্যতীত অন্যান্য চেক বা ব্যাংকে স্থানান্তরের মাধ্যমে করা হয়েছে কি না তা যাচাই করা।
• অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক সমস্যা থাকলে তা যাচাই করা।
এসব তথ্য খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি একটিভ ফাইন কেমিক্যালসের বিষয়ে আরও বেশকিছু তথ্য যাচাই করতে বলা হয়েছে তদন্ত কমিটিকে। এর মধ্যে রয়েছে-
• সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে কোম্পানিটির কর্পোরেট গভর্নেন্স কোডের অধীনে বাধ্যতামূলকভাবে সেই নীতি মেনে চলেছে কি না তা যাচাই করা।
• কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ, অডিট কমিটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা সিইও, সিএফও এবং কোম্পানি সচিবসহ শীর্ষ ব্যবস্থাপনার ভূমিকা যাচাই করা।
• কোম্পানিটির পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ নিশ্চিত করেছে কি না।
• কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনগুলো মূল্যায়ন করা।
• কোম্পানি এতদিন কর্মক্ষমতা এবং আর্থিক অবস্থান সম্পর্কে সত্য তথ্য দিয়েছে কি না।
• কোম্পানির রাজস্ব আয়, মুনাফা এবং ব্যয়ের প্রতিবেদনে কোনো অসংগতি আছে কি না তা যাচাই করা।
• গত পাঁচ বছরে ইপিএস এবং লভ্যাংশ প্রদান যে কমেছে তা তদন্ত করবে এবং কারণ জানতে চাইবে।
• কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডারদের গত পাঁচ বছর যে লভ্যাংশ দিয়েছে তা ঠিকভাবে বিতরণ হয়েছে কি না এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার নীতি মেনে হয়েছে কি না তা যাচাই করা
• মুনাফার অপব্যবহার বা অন্যত্র ব্যয় করা হয়েছে কি না তা যাচাই করা।
• কোম্পানিটির বিগত পাঁচ বছরে সংশ্লিষ্ট পক্ষের মধ্যে সমস্ত লেনদেন চিহ্নিত করবে এবং যাচাই করা।
• কোম্পানি সময়সীমার মধ্যে এজিএম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণ এবং শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থে এর প্রভাব তদন্ত করা।
• তদন্ত কমিটি আর্থিক ব্যবস্থাপনা, কার্যক্রম পরিচালনায় দক্ষতা এবং নিয়ন্ত্রকের অন্যান্য নীতি পালন মূল্যায়ন করবে।
• কোম্পানিটিকে কর্পোরেট গভর্ন্যান্স কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট প্রদানকারীসহ বাহিরের নিরীক্ষকদের কর্মক্ষমতা পর্যালোচনা করা।
• বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কোম্পানির উদ্যোগ এবং বিএসইসির প্রবিধান মেনে চলা মূল্যায়ন করা।
• কোম্পানির সুশাসন এবং আর্থিক প্রতিবেদনের ঘাটতিগুলোর বিষয়ে কার্যকর সুপারিশ প্রদান করা।
এমএএস/ইএ