নতুন বছরেই অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আশিয়ান) সভাপতির দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া। দেশটির প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম সংস্থাটির চেয়ারম্যানশিপ গ্রহণ করবেন। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের আশিয়ানে যোগ দেওয়ার বিষয়টি আলোর মুখ দেখতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
Advertisement
তাদের মতে, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম বাংলাদেশ সফর করেছেন। এই সফরের মধ্যদিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি মালয়েশিয়ার ইতিবাচক মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে। এই ইতিবাচক মনোভাবকে কাজ লাগিয়ে আশিয়ানভুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে পারে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে আশিয়ানভুক্ত করতে মালয়েশিয়ার সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির সাবেক পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনীতিবিদ তানশ্রী ড. সৈয়দ হামিদ আলবার। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালামপুরে জাগো নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দ হামিদ আলবার বলেন, আশিয়ানে সদস্যপদ পাওয়া একটা প্রক্রিয়াগত বিষয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশকেই উদ্যোগী হতে হবে। আশিয়ানের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ আলাপ-আলোচনা শুরু করতে পারে।
Advertisement
তিনি বলেন, আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে আশিয়ান ফোরামে এ সম্পর্কিত আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসলে সেই প্রস্তাবে মালয়েশিয়া সমর্থন জানাতে পারে।
আরও পড়ুন: আসিয়ান সেক্টরাল অংশীদার হতে মালয়েশিয়ার সমর্থন চায় বাংলাদেশগত ৫ অক্টোবর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতোশ্রী আনোয়ার ইব্রাহীম বাংলাদেশ সফরকালে অন্তবর্তীকালীন সরকারপ্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা ২০২৫ সালে আসিয়ানের আসন্ন সভাপতি পদে মালয়েশিয়াকে অভিনন্দন জানাই। আমরা আশিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আঞ্চলিক ফোরামে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির জন্য মালয়েশিয়ার সক্রিয় ভূমিকার অপেক্ষায় রয়েছি।’
নতুন বছরেই অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশনসের (আশিয়ান) সভাপতির দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে মালয়েশিয়া/ছবি- সংগৃহীত
Advertisement
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ওপর পূর্ণ আস্থার কথা জানিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, আমি বিশ্বাস করি বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং সর্বাত্মক সহযোগী হিসেবে আমরা পাশে থাকব। এ অঞ্চল শান্তিপূর্ণ রাখতে মালয়েশিয়া আসিয়ানকে আরও কার্যকর করতে চায়।
মুসলিম ওয়ার্ল্ড রিসার্চ সেন্টারের (এমডব্লিউআরসি) প্রেসিডেন্ট ও ওআইসি স্টাডি গ্রুপের (ওআইসএসজি) সেক্রেটারি জেনারেল, ড. ইশারফ হোসেন বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের ভাতৃ-প্রতিম বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে জাতীয় নিরাপত্তা ও যেকোনো ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত প্রয়োজনে আসিয়ান অবশ্যই বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি সদস্য দেশ নিয়ে গঠিত আশিয়ান বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
১৯৬৭ সালের ৮ আগস্ট গঠিত আশিয়ানে প্রাথমিক সদস্য ছিল ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড, ব্রুনেই, কম্বোডিয়া, লাওস, মিয়ানমার এবং ভিয়েতনাম সংস্থাটির সদস্যপদ লাভ করে।
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা সুরক্ষা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক অগ্রগতি, সাংস্কৃতিক বিবর্তন সদস্যদের মধ্যে ত্বরান্বিত করা এবং সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে মতপার্থক্য নিয়ে আলোচনা করার উদ্দেশ্যে আশিয়ান প্রতিষ্ঠা হয়।
এদিকে গত ৩ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত হেরু হরতান্তো সুবোলো।
রাজধানী কুয়ালামপুরে জাগো নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনীতিবিদ তানশ্রী ড. সৈয়দ হামিদ আলবার।
সাক্ষাৎকালে আশিয়ানে বাংলাদেশের সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়ে ইন্দোনেশিয়ার সমর্থন চান প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমি আশা করি ইন্দোনেশিয়া আমাদের আসিয়ানের সদস্যপদ পেতে সাহায্য করবে। এটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার দেশের সমর্থন জানান রাষ্ট্রদূত সুবোলো। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়া আসিয়ান সদস্য হওয়ার জন্য বাংলাদেশের আবেদন নিবিড়ভাবে অনুসরণ করবে।
দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা-সার্ক যখন নিষ্ক্রিয় তখন আশিয়ানভুক্ত হওয়াটা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। আশিয়ানভুক্ত হতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তৎপরতাও উল্লেখযোগ্য।
এমআরএম/এএসএম