জাতীয়

ফের আন্দোলনের আভাস, ভোগান্তিতে পড়তে পারেন ট্রেনযাত্রীরা

বাংলাদেশ রেলওয়ের লোকোমাস্টারদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক প্রদানের দাবির বিষয়ে কোনো সুরাহা না হওয়ায় আবারও নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টায় ফিরতে চাচ্ছেন তারা। এতে ৮ ঘন্টার বেশি কাজ করবেন না তারা। লোকোমাস্টারের সংকট থাকায় দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলা ট্রেনগুলো আবারও বিলম্বের শিকার হবে। এতে আবারও চরম ভোগান্তিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে যাত্রীদের।

Advertisement

আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে মাইলেজ প্রদানের দাবি পূরণ না হলে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান।

গণমাধ্যমকে তিনি জানান, আমাদের সিদ্ধান্ত ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আমাদের মাইলেজ প্রদানের দাবি পূরণ না হলে আন্দোলনে যাবো। অনেক চিঠিপত্র, আবেদন করেও কোনো সাড়া পাচ্ছি না। তাই ১ জানুয়ারি থেকে আমাদের সংগঠন সদস্যরা নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার বেশি কাজ করবে না। আমরা যারা ২০২২ সালের আগে রানিং স্টাফ হিসেবে যোগ দিয়েছি, তারা ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত ডিউটি করবো না। রেলওয়ের লোকোমাস্টার (এলএম), সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) ও সাব-লোকোমাস্টার (এসএলএম) সবাই এই সিদ্ধান্তে একমত।

রেলের কর্মীরা বলছেন, আইন অনুযায়ী হেডকোয়ার্টারে তাদের ৮ ঘণ্টার ডিউটি শেষে ১২ ঘণ্টা বিশ্রাম করার কথা। কিন্তু রেলওয়ের কর্মী সংকট থাকায় তারা ৫/৬ ঘণ্টা বিশ্রাম করার পর আবার কাজে নেমে যান। রেলের কর্মীরা রেলের স্বার্থে কাজ করতে চান। কিন্তু রেলওয়ে তাদের স্বার্থের বিষয়ে আন্তরিক নয়। দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসলেও কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে আন্তরিক নয়। তাই বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছেন তারা।

Advertisement

আরও পড়ুন>>>

সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকা: এ যেন খুলনাবাসীর কাছে আলাদিনের চেরাগ

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ (চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকিট চেকার) ট্রেনে দায়িত্ব পালন শেষে তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার) হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তার বিশ্রামের সময়ে কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা-সুবিধা দেওয়া হয়। যা রেলওয়েতে ‘মাইলেজ’ সুবিধা হিসেবে পরিচিত।

মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে গত ৩ বছর ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। কয়েক দফায় অতিরিক্ত কাজ থেকে বিরত থাকা এবং ধর্মঘট পালন করেছেন তারা। তবে বিভিন্ন সময়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলপথ সচিব, রেলমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে আসেন তারা।

২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় মাইলেজ সুবিধা সীমিত করতে রেল মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে আনলিমিটেড মাইলেজ সুবিধা বাদ দিয়ে তা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করার কথা জানানো হয়। এছাড়া বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক ভাতায় মূল বেতনের সঙ্গে পাওয়া কোনো ভাতা যোগ করার বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রানিং স্টাফরা।

Advertisement

এ বিষয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন জানান, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নবনিযুক্ত এএলএম গ্রেড-২ এবং গার্ড গ্রেড-২ এর রানিং স্টাফদের নিয়োগপত্রের যে শর্ত ছিল তা প্রত্যাহার করা হবে। তার মানে তারা রেলের নানা সুযোগ সুবিধা পাবেন। শর্ত প্রত্যাহারের আগ পর্যন্ত তারা কর্মঘণ্টার ভিত্তিতে যে মাইলেজ অর্জন করবেন তা বকেয়া হিসেবে পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

তিনি বলেন, বিভাগীয় পদোন্নতিপ্রাপ্ত রানিং স্টাফদের আইবাস সিস্টেমে বেতন ভাতাদি ও মাইলেজ যথানিয়মে পরিশোধের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রানিং স্টাফদের মাইলেজ ও পেনশনের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

 

এনএস/এসআইটি