অর্থনীতি

প্রথমবারের মতো সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট প্রকাশ করলো প্রাণ-আরএফএল

শতভাগ প্লাস্টিক রিসাইক্লিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রথমবারের মতো সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্ট বা টেকসই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ প্রাণ-আরএফএল।

Advertisement

২০২৩ সালের কর্মকাণ্ডের ওপর প্রস্তুত এ প্রতিবেদনটিতে সবার জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বর্তমান সময়ে কল্যাণ বৃদ্ধিতে গ্রুপের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।

রোববার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত প্রতিবেদনটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম ও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস।

প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরীর সঙ্গে অতিথিরা

Advertisement

‘সমৃদ্ধ আগামীর লক্ষ্যে, জীবনের পরিচর্যা’ শীর্ষক প্রতিপাদ্যে রচিত প্রতিবেদনটি আটটি মৌলিক স্তম্ভের ওপর নির্মিত, যেখানে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের টেকসই ব্যবসা ও পরিবেশ রক্ষার কৌশল তুলে ধরা হয়েছে। আটটি মৌলিক স্তম্ভের মধ্যে রয়েছে সাসটেইনেবল পণ্য, সাসটেইনেবল প্যাকেজিং, কৃষি, পানি ও এনার্জি।

আরও পড়ুন বাংলাদেশ সি-স্যুট অ্যাওয়ার্ড পেলেন আহসান খান চৌধুরী সেন্টমার্টিনের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় কাজ করবে প্রাণ-আরএফএল আমরা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বাস করি: আহসান খান চৌধুরী

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের টেকসই কৌশলে বিশ্বকে সমৃদ্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্ভাবনের লক্ষ্যকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করে ভবিষ্যতের জন্য আরও ভালো, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করতে গ্রুপটি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সাসটেইনেবিলিটি সংক্রান্ত প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের লক্ষ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ১০০ শতাংশ বিনিয়োগ করা, ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করা, কৃষিপণ্য ও দুগ্ধজাতপণ্যের ৯০ শতাংশ কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা, সকল কারখানায় পানির ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমানো, জ্বালানির ব্যবহার ২০ শতাংশ কমানো এবং কারখানায় ব্যবহৃত মোট জ্বালানির ২৫ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদন করা।

প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম

Advertisement

অনুষ্ঠানে প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ৮০- ৯০ এর দশকের প্রাণ আর এখনকার প্রতিষ্ঠানের কথা চিন্তা করা যায় না, এ প্রতিষ্ঠানের প্রচুর সাসটেইনেবিলিটি। তাদের যে বড় জনশক্তি ও বিনিয়োগ সক্ষমতা আছে, সেটা কাজে লাগিয়ে দেশের ব্যবসা আরও টেকসই করা সম্ভব।

তিনি বলেন, এ অন্তর্বর্তী সরকারও সবক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। আমরা এমনভাবে কোনো কাজ করছি না যেটা ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি করে। অনেকে রাতারাতি প্লাস্টিক বন্ধ করতে চায়, কিন্তু তাতে অনেকের ক্ষতি হবে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী বলেন, আমাদের মতো এ দেশে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা সার্বিক সহায়তা পেলে গ্লোবাল কোম্পানি হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করলে এ দেশটাও সুন্দর ও টেকসই উন্নয়নের সহযাত্রী হবে, সেটাতে কোনো সন্দেহ নেই। উন্নত বিশ্ব যদি সেটা পারে, আমরাও পারবো।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী

তিনি বলেন, আমাদের ব্যবসায় সাসটেইনেবিলিটির জন্য আমরা প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছি। তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করছি। তাদের ভালো প্রযুক্তিসহ অন্যান্য সহায়তা দিচ্ছি। তারাও আমাদের সঙ্গে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন করতে পারছেন। আমরা দেশের বৃহত্তম কোম্পানি গড়ে তুলেছি, যেখানে দেড় লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। আমরা এই পরিবারকে ১০ লাখে নিতে চাই।

আরও পড়ুন এএমসিএলসহ ৪৬ প্রতিষ্ঠান পেলো আইসিএমএবি পুরস্কার দ্রুত বর্ধমান ভোগ্যপণ্যে প্রাণ-আরএফএলের বড় বিনিয়োগ সর্বাধুনিক মেশিনে আটা-ময়দা-সুজি উৎপাদন শুরু করলো প্রাণ

আহসান খান চৌধুরী আরও বলেন, আজ প্রকাশিত সাসটেইনেবিলিটি প্রতিবেদনটি সাসটেইনেবিলিটির প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। এই প্রতিবেদনটি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের টেকসই যাত্রায় একটি যুগান্তকারী মুহূর্তকে নির্দেশ করে। পুরো প্রতিবেদনজুড়ে ‘সমৃদ্ধ আগামীর লক্ষ্যে, জীবনের পরিচর্যা’ প্রতিপাদ্যের প্রতিফলন ঘটেছে, যেখানে ব্যাপকভাবে জীবিকা বৃদ্ধির জন্য এবং একটি পরিচ্ছন্ন ও সবুজ বিশ্বে অবদান রাখার জন্য আমরা যে পথগুলো নির্ধারণ করেছি সেগুলো চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (কর্পোরেট ফাইন্যান্স) উজমা চৌধুরী

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিবেশগত এবং সামাজিক দায়বদ্ধতার এ যাত্রার গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক উদযাপন অনুষ্ঠানে সরকারের নীতিনির্ধারক, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ অংশীজনরা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে ‘টেকসই কৃষি: চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ এবং ‘সাসটেইনেবিলিটি অর্জনে কর্পোরেট নেতৃত্বের ভূমিকা’ শীর্ষক দুটি প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া সেন্টমার্টিন সুরক্ষায় যৌথভাবে শুরু করা কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা হয়। পাশাপাশি সাসটেইনেবল প্যাকেজিংয়ের অংশ হিসেবে পাটের ব্যাগে প্রাণ চিনিগুড়া চাল কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।

এনএইচ/বিএ