সুরা তওবা কোরআনের নবম সুরা। এই সুরাটি মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ১২৯, রুকু সংখ্যা ১৬। তওবা অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা বা ক্ষমা করা। এ সুরার নাম ‘তওবা’ হওয়ার কারণ এতে মুসলমানদের তওবা কবুল হওয়ার বর্ণনা এসেছে। এ সুরার আরেকটি নাম ‘বারাআত’ কারণ এতে কাফের বা অবিশ্বাসীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা এসেছে।
Advertisement
সুরা তওবার শুরুতে আল্লাহ তাআলা কাফেরদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে বলেন, আল্লাহ ও তার রাসুলের পক্ষ থেকে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা সে সব লোকের প্রতি মুশরিকদের মধ্য থেকে যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে। সুতরাং (হে কাফেররা) তোমরা জমিনে চলাফেরা করো চার মাস, আর জেনে রাখ, তোমরা আল্লাহকে অক্ষম করতে পারবে না, আর নিশ্চয় আল্লাহ কাফিরদেরকে অপদস্থ করবেন। (সুরা তওবা: ১, ২)
সুরা তওবার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো সুরা তওবার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লেখা হয় না। সুরা তওবা ছাড়া কোরআনের অন্যান্য সব সুরার শুরুতেই ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লেখা হয়। এ সুরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ না লেখার কারণ কী?
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি আলিকে (রা.) জিজ্ঞাসা করেছিলাম কেন সুরা তওবার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয় না? তিনি আমাকে বলেছেন, ‘বিসমিল্লাহ’র মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তার বার্তা আছে আর সুরা তওবায় চুক্তিভঙ্গকারী কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণেই এ সুরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয়নি।
Advertisement
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে আরও বর্ণিত রয়েছে, একবার তিনি ওসমানকে (রা.) জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কেন সুরা আনফাল এবং সুরা তওবা একসঙ্গে রাখা হলো এবং সুরা তওবার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ লেখা হলো না? ওসমান (রা.) উত্তর দিলেন যে, সুরা আনফাল ছিল মদিনায় অবতীর্ণ হওয়া প্রথম দিকের সুরাগুলোর একটি আর সুরা তওবা ছিল কোরআনের সর্বশেষ অবতীর্ণ সুরাগুলোর একটি। এই দুটি সুরার বিষয়বস্তু প্রায় একই রকম। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের কাছে স্পষ্ট করে যাননি যে এটি আলাদা সুরা কি না। তাই আমরা এ দুটি সুরা একসঙ্গে রেখেছি এবং মাঝে ‘বিসমিল্লাহ’ লিখিনি।
আরেকটি বর্ণনায় এসেছ, আরবদের রীতি ছিল তাদের ও কোনো জাতির মধ্যে যদি চুক্তি থাকতো এবং তারা সেই চুক্তি বাতিল করতে চাইতো, তাহলে তাদের কাছে চুক্তি বাতিল করার কথা জানিয়ে একটি পত্র পাঠাতো এবং সেই পত্রে ‘বিসমিল্লাহ’ লিখতো না। সুরা তওবার শুরুতে যেহেতু মুশরিকদের সঙ্গে মুসলমানদের কৃত চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, তাই এ সুরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা হয়নি।
সুরা তওবা পড়ার সময় ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পড়া হবে কি না এ ব্যাপারে ইসলামি আইনবিশারদগণ বলেন, কেউ যদি সুরা আনফাল তিলাওয়াত করে সুরা তওবা তিলাওয়াত করা শুরু করে, সে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া ছাড়াই সুরা তওবা তিলাওয়াত শুরু করবে। কিন্তু কেউ যদি সুরা তওবা থেকে কোরআন তিলাওয়াত শুরু করে, সে সাধারণ নিয়মে ‘আউজুবিল্লাহ’ ও ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে তিলাওয়াত শুরু করবে যেমন কোরআনের যে কোনো জায়গা থেকে তিলাওয়াত শুরু করার সময় করা হয়।
অনেকে মনে করে সুরা তওবা তিলাওয়াত করার সময় কোনো অবস্থাতেই ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করা যায় না। এ ধারণা সঠিক নয়।
Advertisement
ওএফএফ/জেআইএম