অমুসলিম বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী, সহকর্মীদের জন্য হেদায়াতের দোয়া করা অর্থাৎ তারা যেন হেদায়াত লাভ করে, ইসলাম গ্রহণ করে সেজন্য দোয়া করা জায়েজ এবং উত্তম কাজ। আল্লাহর রাসুলও (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অমুসলিমদের হেদায়াতের জন্য দোয়া করতেন। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, (হজরত ওমরের (রা.) ইসলাম গ্রহণের আগে) আল্লাহর রাসুল (সা.) দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আবু জাহল বা ওমর ইবনে খাত্তাব এ দুই ব্যক্তির মধ্যে যে ব্যক্তি আপনার কাছে বেশি প্রিয় তার মাধ্যমে আপনি ইসলামকে শক্তিশালী করুন। (সুনানে তিরমিজি: ৩৬৮১)
Advertisement
অমুসলিম বন্ধু-বান্ধব বা প্রতিবেশী অসুস্থ হলে তার সুস্থতার জন্য দোয়া করাও জায়েজ। অসুস্থ অবস্থায় তাদের দেখতে যাওয়াও উত্তম ও সওয়াবের কাজ। নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) অমুসলিমদের অসুস্থতায় তাদের দেখতে যেতেন। আনাস (রা.) বলেন, এক ইহুদি বালক আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) খেদমত করত। একবার সে অসুস্থ হলে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। (সহিহ বুখারি)
এ ছাড়া অমুসলিমদের দুনিয়ার অন্যান্য সুবিধা ও সুখ-শান্তির জন্যও দোয়া করা যাবে। যেমন দুনিয়াবি বিষয়ে তাদের সাথে সদাচরণ করা, বিপদ-আপদে তাদের সাহায্যে করা জায়েজ এবং সমীচীন। কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
لَا یَنۡهٰىكُمُ اللّٰهُ عَنِ الَّذِیۡنَ لَمۡ یُقَاتِلُوۡكُمۡ فِی الدِّیۡنِ وَ لَمۡ یُخۡرِجُوۡكُمۡ مِّنۡ دِیَارِكُمۡ اَنۡ تَبَرُّوۡهُمۡ وَ تُقۡسِطُوۡۤا اِلَیۡهِمۡ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُقۡسِطِیۡنَ
Advertisement
দীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ি-ঘর থেকে বের করে দেয়নি, তাদের প্রতি সদয় ব্যবহার করতে এবং তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়পরায়ণদের ভালোবাসেন। (সুরা মুমতাহিনা: ৮)
তবে অমুসলিম বন্ধু-বান্ধবের আখেরাতের শান্তি বা জান্নাত প্রাপ্তির জন্য দোয়া করা যাবে না। তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে না। কাফেরের জন্য আল্লাহর রহমত বা ক্ষমা প্রার্থনা করা কোরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশের ভিত্তিতে হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَا كَانَ لِلنَّبِیِّ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡ یَّسۡتَغۡفِرُوۡا لِلۡمُشۡرِكِیۡنَ وَ لَوۡ كَانُوۡۤا اُولِیۡ قُرۡبٰی مِنۡۢ بَعۡدِ مَا تَبَیَّنَ لَهُمۡ اَنَّهُمۡ اَصۡحٰبُ الۡجَحِیۡمِ
নবি ও মুমিনদের জন্য শোভনীয় নয় মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তারা আত্মীয়-স্বজন হলেও, যখন এটা তাদের কাছে সুস্পষ্ট যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী। (সুরা তাওবা: ১১৩)
Advertisement
বিশেষত কাফের অবস্থায় যখন কারো মৃত্যু হয়ে যায়, তখন তার জন্য জাহান্নাম সুনিশ্চিত হয়ে যায়। তাই তখন তার জন্য আর দোয়া করা সমীচীন নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا وَ مَاتُوۡا وَ هُمۡ كُفَّارٌ اُولٰٓئِكَ عَلَیۡهِمۡ لَعۡنَۃُ اللّٰهِ وَ الۡمَلٰٓئِكَۃِ وَ النَّاسِ اَجۡمَعِیۡنَ
নিশ্চয় যারা কুফরি করেছে এবং কাফের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে, তাদের উপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ ও সকল মানুষের লানত। (সুরা বাকারা: ১৬১)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ كَفَرُوۡا وَ مَاتُوۡا وَ هُمۡ كُفَّارٌ فَلَنۡ یُّقۡبَلَ مِنۡ اَحَدِهِمۡ مِّلۡءُ الۡاَرۡضِ ذَهَبًا وَّلَوِ افۡتَدٰی بِهٖ اُولٰٓئِكَ لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ وَّ مَا لَهُمۡ مِّنۡ نّٰصِرِیۡنَ
নিশ্চয় যারা কুফরি করেছে এবং কাফের অবস্থায় মারা গেছে, তাদের কারো কাছ থেকে জমিন ভরা স্বর্ণ বিনিময়স্বরূপ প্রদান করলেও গ্রহণ করা হবে না, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আজাব আর তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী নেই। (সুরা আলে ইমরান: ৯১)
ওএফএফ/এমএস