আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দার কাছে এটাই প্রত্যাশা করেন যে, তারা যেন সহজ সরল জীবনযাপন করে। শুধু নিজের চিন্তা না করে অন্যের উপকারের কথা ভাবে এবং বান্দার অধিকার আদায় করে।
Advertisement
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের কোথাও অযথা সম্পদ নষ্ট করে বিলাসী জীবন-যাপনের কোনো শিক্ষা পাওয়া যায় না। আমরা জানি, এ পৃথিবীতে যত নবি-রাসুলগণ (আ.) এসেছেন তারা কতই না মিতব্যয়ী ছিলেন। তারা সহজ সরল, সাধারণ মানুষের ন্যায় জীবন অতিবাহিত করেছেন। নবি-রাসুলদের জীবন কত সহজ-সরল ছিল তা আমরা শ্রেষ্ঠনবি হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কর্মময় জীবন থেকে সহজেই জানতে পারি।
বাস গৃহের ব্যাপারে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদাসিধা থাকা পছন্দ করতেন। সাধারণত তার ঘরগুলো হত এক কামরার এবং তার সামনে ছোট আঙিনা। সেই কামরার মাঝখান দিয়ে টানানো থাকতো একটা রশি। সেই রশির ওপর কাপড় ঝুলিয়ে দিয়ে তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলাদা এক পাশে সাক্ষাৎ প্রার্থীদের সাথে কথাবার্তা বলতেন। তিনি চৌকি বা খাট ব্যবহার করতেন না। বরং, মাটির ওপরই বিছানা পেতে শুতেন। তিনি জীবন-যাপনের ক্ষেত্রে এত বেশী সাদাসিধে ছিলেন যে, হজরত আয়শা (রা.) মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওফাতের পর বলেছিলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবিতকালে আমাদেরকে কয়েকবার শুধু পানি আর খেজুর খেয়েই দিন কাটাতে হয়েছিল। এমনকি, যেদিন তার মৃত্যু হয় সেদিনও আমাদের ঘরে পানি ও খেজুর ছাড়া আর কিছুই ছিল না’ (বুখারি)।
হজরত রাসুল করিম (সা.)-এর বিছানা-পত্রও ছিল নিতান্ত অনাড়ম্বর। সাধারণত একটি চামড়া কিংবা উটের পশম দিয়ে তৈরি একটি কাপড়। হজরত আয়শা (রা.) বলেছেন, আমাদের বিছানা এত ছোট ছিল যে, যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) রাতে ইবাদত করার জন্য উঠতেন তখন আমি এক পাশে সরে গিয়ে জড়ো হয়ে থাকতাম। কারণ, বিছানা ছিল ছোট। যখন ইবাদতের সময় তিনি দাঁড়াতেন তখন আমি হাঁটু সোজা করতে পারতাম, আর যখন তিনি সিজদা করতেন তখন আমি হাঁটু জড়ো করে নিতাম। (বুখারি)।
Advertisement
পানাহারের ব্যাপারেও তিনি (সা.) সর্বদা অত্যন্ত সরল ছিলেন। খাবারের মধ্যে লবণ বেশি হলো বা কম হলো কিংবা রান্না খারাপ হল-এসব ব্যাপারে তিনি কখনই কিছু বলতেন না, বা অসন্তোষ প্রকাশ করতেন না। এ ধরনের খাবার যতটা সম্ভব খেয়ে নিয়ে তিনি রাঁধুনির মনঃকষ্ট দূর করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু তা যদি একেবারেই খাওয়ার অযোগ্য হয়, তাহলে তিনি হাত সরিয়ে রাখতেন এবং কখনোই বলতেন না যে, এই খাবার খেতে আমার অসুবিধা হচ্ছে’ (বুখারি)।
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও এক নাগাড়ে তিন দিন পেট ভরে খাবার খান নি এবং এই অবস্থা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাত পর্যন্ত চলেছিল’ (বুখারি)।
আজ আমরা যদি এই মহান ও শ্রেষ্ঠ রাসুলের জীবনাদর্শ অনুসরণ করে চলি তাহলে আমাদের প্রতিটি পরিবার জান্নাতে পরিণত হবে সেই সাথে দেশ থেকে মুছে যাবে সকল অশান্তি।
মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হলেন মানবজাতির জন্য অনুকরণীয়, সব জগতের জন্য রহমত এবং আল্লাহর প্রিয় সেই সত্তা যিনি আল্লাহতায়ালার সৃষ্টি (মানুষের) দুঃখ-কষ্ট লাঘব করার জন্য সারা রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন।
Advertisement
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর সৃষ্টিজীব মানুষকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য যে ব্যাকুলতার প্রদর্শন করেছেন এবং যে কষ্টে ও বেদনায় নিজেকে নিপতিত করেছেন তা দেখে আরশের অধিপতি স্বয়ং তাকে (সা.) সম্বোধন করে বললেন, ‘তারা মুমিন হচ্ছে না বলে তুমি কি নিজ প্রাণ বিনাশ করে ফেলবে?’ (সুরা আশ শোআরা, আয়াত: ৩)।
আমাদের সবার উচিত হবে, বিলাসী জীবন পরিহার করে শ্রেষ্ঠ রাসুলের জীবন অনুসরণ করে আল্লাহপাকের সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার সুখে-দুঃখে পাশে দাঁড়ানো, অসহায়দের সেবায় এগিয়ে যাওয়া, প্রতিবেশীর খোঁজ নেয়া, অনাহারীর মুখে খাবার তুলে দেয়া, বস্ত্রহীনদের গায়ে বস্ত্র পড়িয়ে দেয়া। আমরা যদি শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থকে না দেখে সবার কথা ভাবি তাহলে এদেশে যেমন থাকবে না কোনো অভাবী তেমনি দেশের সকল প্রকার অপরাধও অনেকটা কমে যাবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে মহানবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অতুলনীয় জীবনাদর্শ অনুসরণ করে চলার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: প্রাবন্ধিক, ইসলামী চিন্তাবিদ।masumon83@yahoo.com
এইচআর/এমএস