সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে মাদারীপুরের কালকিনির প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো জমিদার বাড়ি। এক সময় শতশত লোকের কোলাহল থাকলেও কালের বিবর্তনে আজ নিস্তব্ধ। পুরোনো ও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে বাড়িটি। কোথাও কোথাও খসে পড়েছে দেওয়ালের পলেস্তরা, ভেঙে পড়েছে ছাদও। এ ছাড়া দেওয়ালে জন্মেছে পরগাছা। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে বাড়িটি।
Advertisement
বহু আগেই জমিদার বাড়ির মঠগুলো ও প্রধান ফটকের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। এখনো যা কিছু আছে, তার নিদর্শন ও ঐতিহ্য বহন করলেও যেন কেউ দেখার নেই। তাই স্থানীয়রা ঐতিহ্য বাঁচিয়ে রাখতে প্রশাসনের কাছে দাবি তুলেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্বে সিডি খান ইউনিয়নের ঢাঁকি কান্দি গ্রামে এ জমিদার বাড়ি অবস্থিত। প্রায় ২০০ বছর আগে তৎকালীন জমিদার রামমোহন মন্ডলের আমলে বাড়িটি নির্মিত হয়। ধারণা করা হয়, প্রায় ১৫ একর জমির ওপর জমিদার রামমোহন মন্ডল বাড়িটি র্নিমাণ করেন। বাড়ির চারদিকে ছিল দেওয়ালে ঘেরা। তার মধ্যে বেশ কয়েকটি মঠও ছিল। বাড়ির ভেতরে প্রবেশের জন্য ছিল প্রধান ফটক। ছিল বিচারালয়, কাচারিঘর ও জলসাঘর। বর্তমানে বাড়িটি ছাড়া সব বিলীন হয়ে গেছে অনেক আগেই।
পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি আজ সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে ধ্বংসের মুখে এসে পড়েছে। এখনই যদি এর রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার না হয়, তাহলে যে কোনো সময় ধসে পড়তে পারে। এতে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যেতে পারে ইতিহাস-ঐতিহ্য বহন করা জমিদার বাড়িটি। তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে কালের নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরার জন্য দ্রুত সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন জমিদারের বংশধর ও স্থানীয়রা। জমিদারের বংশধর পলাশ মন্ডল ও রমেশ মন্ডল জানান, এখানে জলসাঘর, কাচারিঘর এবং বিচারঘর ছিল। আজ সব হারিয়ে গেছে। এখন শুধু বাড়িটিই আছে। প্রতি বছর এখানে দোল উৎসব হতো। তবে এখন আর তেমন একটা হয় না। তাই ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য বাড়িটি সংস্কারের দাবি জানান তারা।
Advertisement
স্থানীয় পুলিন, কাওসার হোসেন ও রাধা রাণীসহ একাধিক ব্যক্তি বলেন, ‘জমিদার বাড়িটি আমাদের এলাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এটা সরকারি বা বেসরকারি যেভাবেই হোক রক্ষা করার দাবি জানাই। বাড়িটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটা আমাদের সম্পদ। এটা আমাদের ঐহিত্য।’
মাদারীপুরের ইতিহাস গবেষক সুবল বিশ্বাস বলেন, ‘ধীরে ধীরে আমাদের জেলা থেকে অনেক ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে গেছে। এগুলো রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। এগুলো একবার হারিয়ে গেলে আর কোনোদিন ফিরে পাওয়া যাবে না। তাই কালকিনির দুইশ বছরের পুরোনো জমিদার বাড়িটি সংস্কারের পাশাপাশি রক্ষার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
কালকিনির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘বাড়িটির ইতিহাস-ঐতিহ্য ও নিদর্শন ধরে রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। যেন বাড়িটির ইতিহাস-ঐতিহ্য নতুন প্রজন্ম জানতে পারে।’
আরও পড়ুন ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ সেলের পেছনের করুণ ইতিহাস জানেন কি? লাল চন্দনের দাম কেন আকাশছোঁয়া?কেএসকে/এসইউ/এএসএম
Advertisement