গণমাধ্যম

গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে হবে

সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও এবং অনলাইন নিউজ পোর্টালকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে জনগণের স্বার্থে কাজ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ।

Advertisement

মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর সার্কিট হাউজ রোডের তথ্য ভবনে নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) সভাপতি এবং সদস্যদের সঙ্গে গণমাধ্যমের সংস্কার কমিশনের এক মতবিনিময় সভায় কমিশন প্রধান এ কথা বলেন।

বিগত আন্দোলনে সংবাদ মাধ্যমের ব্যর্থতা ও বির্তকিত ভূমিকার কারণে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে, তার পটভূমিতে গণমাধ্যমকে কীভাবে জনগণের স্বার্থে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে মতামত প্রদানের আহ্বান জানান কামাল আহমেদ।

সভায় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার প্রকাশক মাহফুজ আনাম বলেন, গণমাধ্যমের আইনগত কাঠামো ও পরিবেশ সবকিছু মিলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিবেশ আমাদের নেই।

Advertisement

দৈনিক প্রথম আলোর প্রকাশক ও সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, বিশ্বজুড়ে সংবাদপত্র এখন আর সংবাদপত্র নেই। ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে ছাপা সংবাদপত্র এমনিতেই রুগ্ন শিল্পে পরিণত হয়েছে। করোনা মহামারিতে ব্যাপকভাবে সার্কুলেশন ও বিজ্ঞাপন আয় কমে গেছে। বিগত ১৫ বছর ও তার আগের সরকার সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। অতীতের কোনো সরকার সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দিতে পারেনি। সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেননি। বিগত সরকার সংবাদপত্রকে শত্রু হিসেবে দেখেছে।

আরও পড়ুনভারতের গণমাধ্যম সত্য বলায় বিশ্বাসী না, সেখানে মিথ্যা চলে ভালোইআরএফ-প্রাণ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড পেলেন জাগো নিউজের ইব্রাহীম হুসাইন

নিউ এজের প্রকাশক শহিদুল্লাহ খান বলেন, পত্রিকার মিডিয়া তালিকাভুক্তি পদ্ধতি রাখার প্রয়োজন আছে কি না সে বিষয়ে ভেবে দেখা দরকার। প্রেস কাউন্সিলকে আধুনিকায়ন করা দরকার এবং এটিকে নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে হবে।

দৈনিক বণিক বার্তার প্রকাশক হানিফ মাহমুদ বলেন, গণমাধ্যমে সংস্কার কমিশনকে অন্য কোনো স্বার্থান্বেষী গ্রুপ ব্যবহার করতে না পারে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণে বহু সম্পাদক এখন মামলার শিকার, পলাতক এবং তাদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে।

দৈনিক সংবাদের প্রকাশক আলতামাস কবির বলেন, রাজনৈতিক পক্ষপাত থাকলেও স্বাধীন সাংবাদিকতা সম্ভব এবং তা নিশ্চিত করতে হবে।

Advertisement

দৈনিক দ্য ফিনান্সিয়াল হেরাল্ড এর প্রকাশক মাসরুর রেজা বলেন, সংবাদপত্র প্রকাশ ও অনুমতি প্রদানের ব্যবস্থাপনায় ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হয়েছে, যা ভবিষ্যতে বন্ধ করার সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করার জন্য তিনি কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।

নোয়াবের সভাপতি সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ বলেন, প্রকাশক হিসেবে আমাদেরও হুমকি ও ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে। করোনার সময় সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে প্রণোদনা দেওয়া হলেও সংবাদপত্রকে কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয়নি। কমিশন সম্পাদকদের স্বাধীনতার জন্য সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

কমিশন প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, কমিশনের কোনো স্বার্থন্বেষী দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অংশীজনের সুনির্দিষ্ট মতামতের ভিত্তিতে কমিশন তার সুপারিশমালা তৈরি করবে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার স্বায়ত্বশাসন নীতিমালা প্রণয়নেও কমিশন সব মহলের মতামত গ্রহণ করবে।

সভায় গণমাধ্যম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক গীতিআরা নাসরীন, শামসুল হক জাহিদ, আখতার হোসেন খান, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ফাহিম আহমেদ, জিমি আমির, মোস্তফা সবুজ, টিটু দত্ত গুপ্ত, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও বেগম কামরুন্নেসা হাসান উপস্থিতি ছিলেন।

ইএ/জেআইএম