পাহাড় ঘেঁষা সবুজের চাদরে আবৃত বিস্তৃত মাঠ। তারই কোল ঘেঁষে বয়ে যাচ্ছে ঝরনা। হালকা শীতের আবছা কুয়াশা মেখে সবুজ মাঠে কৃষকের শোর-সরাবৎ চলছে। শেষ রাতে কিংবা ভোরে শিশির ভেজা ক্ষেত থেকে কচি সতেজ ক্ষিরা তুলতে ব্যস্ত। বলছিলাম চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পূর্ব খৈয়াছড়া এলাকার কৃষকদের কথা।
Advertisement
শীত শুরুর আগেই ব্যস্ততা বেড়ে যায় এখানকার কৃষকদের। বাজারে খৈয়াছড়ার ক্ষিরার চাহিদাও খুব বেশি। খেতে হালকা মিষ্টি। অত্যন্ত সুস্বাদু। স্বাদে-গন্ধে অন্য এলাকার ক্ষিরার চেয়ে আলাদা। খৈয়াছড়ার ক্ষিরার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে পাশের কয়েকটি জেলায়। মূলত পাহাড় বেয়ে পড়া ঝরনার মিঠাপানি আর পলিযুক্ত উর্বরা শক্তির বালুমাটিতে চাষ হয় এই ক্ষিরা। ফলে অন্যান্য হাইব্রিড ক্ষিরার মতো পানসে বা তেঁতো নয় বলে জানান কৃষকেরা।
সরেজমিনে জানা গেছে, দলবেঁধে ক্ষেত থেকে ক্ষিরা তুলে ঝুড়িতে ভরে মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে বিক্রি করতে। পূর্ব খৈয়াছড়া রেলগেট এলাকায় বসে ক্ষিরা বিক্রির মৌসুমি পাইকারি বাজার। ক্ষিরা কিনতে সকাল থেকে ভিড় করতে দেখা যায় দূর থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীদের। সকাল সাতটা থেকে ক্ষিরা বেচা শুরু হয়ে আটটার মধ্যে গাড়ি বোঝাই করে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। পাইকারিতে প্রতি কেজি ক্ষিরা বিক্রি হতে দেখা যায় ৪০-৪৫ টাকায়।
খৈয়াছড়া এলাকার কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, এখানে তারা বংশপরম্পরায় মৌসুমি ফসল চাষের সঙ্গে যুক্ত। পাহাড়ি ছড়ার মিঠাপানি থাকায় এখানে ভালো ফলন হয়। প্রায় ২৫ বছর ধরে ক্ষিরা চাষ হয়। এ ছাড়া বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, লাউ, করলা, বরবটিসহ নানারকম শাক-সবজি চাষ হয়।
Advertisement
একই এলাকার কৃষক নুরুল আফছার বলেন, ‘অক্টোবরের শুরুতে আমি ৪ বিঘা জমিতে ক্ষিরা আবাদ করেছি। নভেম্বর মাসের মাঝামঝি ফলন দেওয়া শুরু করে। শুরুতে একবার পাইকারি ৬৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। এরপর প্রতিদিন ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাজারে ভালো মানের টিএসপি স্যারের সংকট আমাদের খুব ভোগাচ্ছে।’
জসিম উদ্দিন নামের এক কৃষক অনেকটা আক্ষেপ করে বলেন, ‘দিন দিন উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। টিএসপি, ইউরিয়া থেকে শুরু করে উৎপাদনের সব কৃষিপণ্য বাড়তি দামে কিনতে হয়। উৎপাদন ব্যয় বাড়ার কারণে লাভ হচ্ছে সীমিত। তার মধ্যে যারা স্বল্পজমিতে কৃষিকাজ করেন; তারা দোকান থেকে সার কিনতে পারেন না। অল্প পরিমাণ সার কেজিতে বিক্রি করে না। এমনটা কেন হচ্ছে, সেটাই আমাদের প্রশ্ন।’
স্থানীয় পাইকারি ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, ‘গত ৮ বছর ক্ষিরার মৌসুমে এখানকার ক্ষিরা কিনে ফেনী এবং সীতাকুণ্ডে বিক্রি করি। চট্টগ্রাম শহর, সীতাকুণ্ড, ফেনী ও নোয়াখালীর পাইকাররাও ক্ষিরা কিনতে আসেন। ভরা মৌসুমে প্রতিদিন ১২-১৫ টন ক্ষিরা যায় বিভিন্ন জেলায়। খৈয়াছড়ার ক্ষিরা বাজারের অন্য এলাকার ক্ষিরার চেয়ে মিষ্টি এবং স্বাদ বেশি। তাই এখানকার ক্ষিরার চাহিদা বেশি।’
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, ‘খৈয়াছড়া এলাকায় নওগাঁ গ্রিন ও হাতিয়া কিং নামের দুটি জাতের ক্ষিরার আবাদ বেশি। অনুকূল আবহাওয়া ও পাহাড়ি ঝরনা বেয়ে পড়া মিঠাপানি আর এ জাতের ক্ষিরায় সুক্রোজের পরিমাণ কিছুটা বেশি থাকায় একটু মিষ্টি হয়। ভিন্ন স্বাদের কারণে এখানকার ক্ষিরা এখন মিরসরাইয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে যাচ্ছে অন্য জেলা-উপজেলায়।’
Advertisement
কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বাজারে পর্যাপ্ত সার আছে। অন্য পণ্যের মতো কৃষিপণ্যের দামও সামান্য বেড়েছে। তবে কৃষকেরা ফসলের ভালো দাম পাচ্ছেন। এ ছাড়া বেশি পরিমাণ সার ব্যবহারে আমরা নিরুৎসাহিত করে আসছি।’
এসইউ/এএসএম