প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, বিচার ব্যবস্থায় এখনও কিছু অসুবিধা এবং দুর্নীতি থাকতে পারে। তবে এগুলো মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি। দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে ভগ্নদশা থেকে বিচার বিভাগও মুক্ত নয়। তবে এই পর্যায়ে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, এই অবস্থা থেকে উত্তরণে বিচার বিভাগ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়ে এক নতুন যাত্রা শুরু করেছে। নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর এক সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর সদ্ব্যবহারে আমাদের সর্বদা খেয়াল রাখতে হবে।
Advertisement
রোববার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশ আয়োজিত ‘সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সুশাসনের আকাঙ্ক্ষার জন্য জনকেন্দ্রিক সংস্কার’ শীর্ষক নাগরিক কনফারেন্স-২০২৪ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), বাংলাদেশ এবং সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনের সহায়তায় দুই দিনব্যাপী আয়োজিত কনফারেন্সে সূচনা বক্তব্য দেনএসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক, সিপিডির ফেলো ও শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব এবং সঞ্চালনা করেন।
সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, এই মুহূর্তে আমরা এক ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে আছি। বিগত বছরগুলোতে বিচার প্রক্রিয়ায় আমাদের বিচারবোধ এবং ন্যায়বিচারের মূল্যবোধকে বিনষ্ট এবং বিকৃত করা হয়েছে। সততার বদলে অসততা অধিকারের বদলে বঞ্চনা বিচারের বদলে নিপীড়ন, আশ্রয়ের বদলে নির্যাতন স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত করা হয়েছে। অথচ এ রকম সমাজ এবং রাষ্ট্র আমরা চাইনি। এই ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে আমাদের নতুন করে যাত্রা শুরু করতে হবে। মূল্যবোধকে পুনরায় জাগ্রত করতে হবে। এই চ্যালেঞ্জ অনেক বড়। আজ থেকে প্রতিটি শ্রেয়, শুভ ও কল্যাণকর কর্মে সবাইকে গণমুখী, জনগণকেন্দ্রিক বিচার বিভাগকে আপনারা পাশে পাবেন।
Advertisement
কোনো ধরনের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রক্ষাকবজের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি। এই রক্ষা কবজকে কার্যকর এবং দক্ষ করার ক্ষেত্রে বিকল্প বিচার ব্যবস্থা, আইন সহায়তা, স্থানীয় পর্যায়ে সম্পৃক্ত হয়ে শক্তিশালী করা যায় তার পরিকল্পনা আছে। পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর নাগরিক অধিকার রক্ষিত না হলে নতুন স্বাধীনতার চেতনার সঙ্গে বৈপরীত্য হয়ে যাবে। সুশাসনের জন্য জনসম্পৃক্ত সংস্কারের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে বিচার ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে আগামীতে নাগরিকরা যেন সুবিচার পায় সেই সুযোগ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছি, তিনি বলেন।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের আজকের কনফারেন্সের উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতীয় নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে থাকা গোষ্ঠীগুলোর কণ্ঠস্বর, অংশগ্রহণ এবং সংস্থাকে শক্তিশালী করা, স্থানীয় সরকারের কার্যাবলিতে নাগরিকদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং জনসেবা উন্নতির জন্য একটি নাগরিক-নেতৃত্বাধীন তদারকি এবং জবাবদিহিতা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা। এটি করতে হলে আমাদের সবাইকে একত্রিত থাকতে হবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথা তুলে ধরতে হবে। সমাজে যারা ভালো অবস্থানে আছে তারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কথা বলবেন।
কোনো অবস্থায়ই ভীত সন্ত্রস্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা একসাথে থাকব, জোরে কথা বলব। কুণ্ঠাবোধ করব না। তাহলে তারা কথা শুনতে বাধ্য হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী (সিনিয়র সচিব) লামিয়া মোর্শেদ, বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স করিন হেনচোজ পিগনানি এবং ইউএনডিপি, বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার।
Advertisement
এসআরএস/এমআরএম/জিকেএস