বিনোদন

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার অনুষ্ঠান বর্জনের হুমকি

রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার অনুষ্ঠান বর্জনের হুমকি দিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যমগ্ৰাম নাগরিকবৃন্দ নামের একটি সংগঠন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত হামলা ও চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ "অন্য" সন্ন্যাসীদের মুক্তির দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গজুড়ে উত্তেজনা চলছে। কলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে স্মারকলিপি প্রদান, বাংলাদেশকে চিকিৎসা না দেওয়া, হোটেল পরিসেবা না দেওয়াসহ নানান রকম হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে তারা রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গানের অনুষ্ঠানও বর্জনের হুমকি দিয়েছে।

Advertisement

জানা গেছে, আগামী ২৮ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মধ্যমগ্রাম পৌরসভার আয়োজনে ১৯তম পরিবেশ মেলায় রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। সেই অনুষ্ঠান বর্জনের হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি।

ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট করে মধ্যমগ্ৰাম নাগরিকবৃন্দের মুখপাত্র রূপক দে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ভারতের জাতীয় পতাকা নিয়ে যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা হয়েছে, সেটাকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে মানতে পারিনি। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার অনুষ্ঠান বয়কট করব। রূপক দে আরও বলেন, ভবিষ্যতে মধ্যমগ্ৰাম অঞ্চলে বাংলাদেশের কোন শিল্পী প্রবেশ না করেন সেদিকেও তাদের নজর থাকবে।

যদিও পরিবেশ মেলার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার অনুষ্ঠান ঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হবে।

Advertisement

মধ্যমগ্ৰাম পরিবেশ মেলার কর্মকর্তা অরবিন্দ মিত্র জানিয়েছেন, আমি অনুরোধ করব যারা বয়কটের কথা বলছেন তারা যেন মেলায় এসে গান শুনে দেখেন যে সেই গানে কোনোরকম উদ্বেগজনক কথা আছে কি না।

তিনি আরও বলেন, শিল্পীর কোনো জাত হয় না। তিনি ভালো শিল্পী, তাই আমারা সবাই চাই তিনি আমাদের এখানে এসে গান পরিবেশন করুন। অনুষ্ঠান কেউ বানচাল করতে এলে প্রশাসন এবং আইন অনুযায়ী তাদের মোকাবেলা করা হবে।

আরও পড়ুন: রাজশাহীতে শুটিং হওয়া ফারুকীর ‘৮৪০’ আসছে খিলক্ষেতে জুমা পড়েছেন আতিফ আসলাম, জানিয়েছেন আসবেন আবারও

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কারপ্রাপ্ত। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী হিসেবে বেশ জনপ্রিয় তিনি।

কয়েকদিন আগে বাংলাদেশি নাগরিকদের ওপর ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার হোটেল ও রেস্টুরেন্ট মালিকরা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। পরে তা শিথিলের ঘোষণা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এক বিবৃতিতে অল ত্রিপুরা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (এটিএইচআরওএ) নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ঘোষণা দিয়েছে।

Advertisement

ত্রিপুরা ও কলকাতার বেশিরভাগ হোটেল ও রেস্তোরাঁর ব্যবসার প্রধান গ্রাহক বাংলাদেশি পর্যটকরা। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে এটিএইচআরওএ বলেছে, মেডিকেল ভিসাধারী বাংলাদেশি নাগরিকদের ত্রিপুরার হোটেল ও রেস্টুরেন্টে আতিথেয়তা দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এর আগে, সোমবার (২ ডিসেম্বর) বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কথিত নিপীড়ন ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারসহ ভারতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে ত্রিপুরায় বিক্ষোভ করেন ভারতের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিভিন্ন সংগঠনের কর্মী-সমর্থকরা।

এমনকি, ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হামলা-ভাঙচুর ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনা ঘটে। সেদিনই বাংলাদেশি নাগরিকদের ত্রিপুরার কোনো হোটেল ও রেস্তোরাঁয় জায়গা দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেয় এটিএইচআরওএ।

ত্রিপুরায় বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে কোনো ধরনের দুর্ব্যবহারের ঘটনা ঘটেনি জানিয়ে এটিএইচআরওএ বলেছে, জাতীয় সংবেদনশীলতা ও আতিথেয়তার নীতির মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখার স্বার্থে আমাদের ঘোষিত নিষেধাজ্ঞা সংশোধন করা হয়েছে। আমরা মেডিকেল ভিসাধারী বাংলাদেশি অতিথিদের স্বাগত জানাবো ও ত্রিপুরায় তাদের যথাযথ আবাসনসহ সেবা নিশ্চিত করবো।

এর আগে, চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া বাংলাদেশি রোগীদের বয়কট না করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে দেশটির চিকিৎসকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএম)। বুধবার (৪ ডিসেম্বর) কলকাতায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটির পশ্চিমবঙ্গ শাখা।

সংবাদ সম্মেলনে আইএমএর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সদস্য ও চিকিৎসক এন কাঞ্জিলাল ও কৌশিক চৌধুরী বলেন, চিকিৎসা নিতে পশ্চিমবঙ্গে আসা রোগীদের দেশের জাতীয় পতাকা প্রণাম করে ঢোকা ও রোগী না দেখা চিকিৎসা নিয়মের পরিপন্থি। চিকিৎসকদের কাছে সব রোগী রোগীই। চিকিৎসকদের কাছে রোগীদের কোনো জাত, ধর্ম ও দেশ হয় না। ভারতে আসা বাংলাদেশি রোগীদের কোনোভাবেই চিকিৎসা বন্ধ কিংবা হয়রানি করা যাবে না। বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা দিতেই হবে।

ডিডি/এমএমএফ/আরএমডি/এএসএম