মনের আঁধার তাড়িয়ে প্রকৃত মানুষ তৈরি করে শিক্ষা। মানুষ বিভিন্নভাবে শিক্ষাগ্রহণ করে—এসবের মধ্যে রয়েছে উপদেশমূলক কবিতার বই। আবহমানকাল ধরে শিক্ষার্থীদের মানস গঠন ও পরিপূর্ণ শিক্ষা দিতে এ ধরনের কবিতার অপরিসীম গুরুত্ব রয়েছে। ফলে পরিণত বয়সে এসেও মানুষের মুখে মুখে এসব উপদেশমূলক কবিতা শোনা যায়। বিভিন্ন ধরনের আলাপ-আলোচনায়, রাজনৈতিক বক্তৃতায় কিংবা বন্ধুদের আড্ডায় এগুলো উঠে আসে।
Advertisement
বাংলা ভাষার এমন অনেক উপদেশমূলক অসংখ্য কবিতার মধ্য থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু কবিতা সংগ্রহ করে পাঠকের জন্য বই আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। বইটির নাম ‘বাংলা ভাষার চিরায়ত উপদেশমূলক কবিতা’। এটি সংকলন ও সম্পদনা করেছেন কবি ও গীতিকার নুরুল ইসলাম মানিক। বইটিতে হেয়াত মামুদ, রামনিধিগুপ্ত, ঈশ্বরচন্দ্রগুপ্ত, মদন মোহন তর্কালঙ্কার, মাইকেলে মধুসূদন দত্ত, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র, হরিনাথ মজুমদার, কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কামিনী রায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সুকুমার রায়, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীম উদ্দীন, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ প্রমুখের কবিতা স্থান পেয়েছে। বইটিতে প্রায় ২০০ ছড়া-কবিতা রয়েছে।
‘বাংলা ভাষার চিরায়ত উপদেশমূলক কবিতা’ বইটির সূচিপত্র মধ্যযুগের কবি হেয়াত মামুদের (১৬৯৩-১৭৬০) কবিতা দিয়ে শুরু হয়েছে। বইটি থেকে দুয়েকটি কবিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। হেয়াত মামুদের ‘বিদ্যার মাহাত্ম’ কবিতার কয়েকটি চরণ হচ্ছে— ‘যার বিদ্যা নাই সে না জানে ভালোমন্দ।শিরে দুই চক্ষু আছে তথাপি সে অন্ধ।।সে চক্ষু বিদ্যার বিনে আর কারো নয়।বিদ্যা বড় ধন নাহি শুন মহাশয়।।’
রামনিধি গুপ্তের ‘স্বদেশীয় ভাষা’ কবিতাটি হচ্ছে—‘নানান দেশের নানান ভাষা,বিনা স্বদেশীয় ভাষা,পূরে কি আশা?কত নদী সরোবর,কিবা ফল চাতকীর,ধারাজল বিনে কভুঘুচে কি তৃষা?’
Advertisement
আরও পড়ুন
পরিচয়: মঞ্চনাটকের বাক বদলে মুকিদ চৌধুরী ভূমিহীনরাই যে গল্পে ভূমিপুত্র‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি,/ সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।’ মাদনমোহন তর্কালঙ্কারের লেখা বহুল পঠিত ‘আমার পণ’ কবিতাটিও রয়েছে বইটিতে। সেই সঙ্গে সুনির্মল বসুর ‘সবার আমি ছাত্র’, পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের ‘প্রতিদান’, আবদুল কাদিরের ‘মানুষের সেবা’, সুফী মোতাহার হোসেনের ‘মানব ধর্ম’, কাজী কাদের নওয়াজের ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’, বেগম সুফিয়া কামালের ‘আজিকার শিশু’, আহসান হাবীবের ‘মাটি থেকেই সোনা’, ফররুখ আহমদের ‘শ্রেষ্ঠবন্ধু’, শামসুর রাহমানের ‘পণ্ডশ্রম’ কবিতাটিও রাখা হয়েছে।
ব্রিটিশ আমল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আমাদের দেশের পাঠ্যপুস্তকে যেসব উপদেশমূলক কবিতা সংযুক্ত করা হয়েছে, তা বইটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। তবে জীবিত কোনো লেখকের লেখা বইটিতে রাখা হয়নি। আমাদের দেশে উপদেশমূলক কবিতা নিয়ে এর আগে এ ধরনের কবিতা প্রকাশ হয়েছে বলে জানা নেই। তাই আশা করি, বইটি সব শ্রেণির পাঠকদের মন জয় করবে, সেই সঙ্গে নৈতিকতায়ও উদ্বুদ্ধ করবে।
ব্রিটিশ উত্তরকাল থেকে বাংলা পাঠ্যপুস্তকে যেসব উপদেশমূলক কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, সেসব কবিতা আমাদের সাহিত্যের এক সোনালি ভান্ডার। সময়ের পরিবর্তনে সেসব কবিতা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। যারা এসব দায়িত্বশীল কাজ করছেন; তারাও ইদানিং পাঠ্যপুস্তকে শিশু মানস গঠনের সহায়ক এসব উপদেশমূলক কবিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করছেন না। আবার হাতের কাছে এসব কবিতা না থাকার কারণেও সহজে যেসব কবিতা হাতের কাছে পাওয়া যাচ্ছে; সেগুলোই পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এককথায় বলা যায়, ষাট-সত্তর-আশির দশক পর্যন্ত বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের স্কুল ও মাদ্রাসার পাঠ্যপুস্তকে যেসব উপদেশমূলক কবিতা মুদ্রিত হয়েছে, নুরুল ইসলাম মানিক অত্যন্ত আন্তরিকতা ও পরিশ্রমের সাথে সেসব কবিতা সংগ্রহ করে সংকলনটি তৈরি করেছেন। তাই একে উপদেশমূলক কবিতার একটি পূর্ণাঙ্গ সংকলন বলা যেতে পারে নিঃসন্দেহে।
Advertisement
‘বাংলা ভাষার চিরায়ত উপদেশমূলক কবিতা’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রকাশনা বিভাগ থেকে। বইটি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ের বিক্রয়কেন্দ্র, বায়তুল মোকাররমের পুস্তক বিক্রয়কেন্দ্র ও দেশের সব জেলার ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে পাওয়া যাচ্ছে।
এসইউ/এমএস