ফিচার

পাট-বেতের হাতে তৈরি পণ্যে সফল উদ্যোক্তা মারিয়া

মারিয়া মেহেজাবিন কিপতিয়া অনার্সর ৩য় বর্ষের ছাত্রী। পড়ালেখার পাশাপাশি হয়েছেন হাতে তৈরি দেশীয় পণ্যের উদ্যোক্তা। তিনি দেশীয় পণ্যের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে আধুনিক ফ্যাশন ও সৌখিনতার অনুসঙ্গ করেছেন পাটের তৈরি জুয়েলারি, হাতে তৈরি হোমডেকর পণ্য, বাঁশ ও বেতের বাহারি পণ্যকে। যারা ঐতিহ্যকে ধারণ করেন দেশ ও দেশীয় পণ্যকে ভালোবাসেন তাদের জন্যই মারিয়া মেহেজাবিন কিপতিয়ার কিপ্তু'স ক্রিয়েটিভিটি।

Advertisement

মারিয়া মেহেজাবিন কিপতিয়ার এগিয়ে চলা, প্রতিবন্ধকতা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাজেদুর আবেদীন শান্ত—

জাগো নিউজ: উদ্যোক্তা জীবনের শুরুর গল্প জানতে চাই?মারিয়া মেহেজাবিন কিপতিয়া: আমার উদ্যোগের শুরুটা একদম হুট করেই। করোনার পর বাসায় বসে থেকে একদম বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলাম। তখন মনে হলো নিজের ক্রিয়েটিভিকে কাজে লাগানো যাক। ছোট থেকেই টুকটাক ক্রিয়েটিভ কাজ করতাম শখের বসে। আম্মুর পুরোনো গয়না ভেঙে নতুন করে তৈরি করতাম। তখন মা বলতো, বাহ! সুন্দর হচ্ছে, তুমি এটা নিয়ে কাজ করে এগিয়ে যেতে পারো। ঠিক তখনই ভাবলাম উদ্যোক্তা হবো। ২০২০ সালের কথা। তখনও আমি বেশ ছোট। নিজের ক্রিয়েটিভিকে সবার সামনে তুলে ধরতে নিজের নামের অংশকে কাজে লাগিয়ে ফেসবুক পেজ খুলে ফেললাম। তবু পুরোপুরি সাহস হচ্ছিল না, কীভাবে কি শুরু করবো। মা এবং বড় বোনের সাহায্যে জমানো ৬ হাজার টাকা নিয়ে নেমে পরলাম উদ্যোক্তা হওয়ার যুদ্ধে।

জাগো নিউজ: হাতে তৈরি পণ্য নিয়ে কেন কাজ করছেন? মারিয়া মেহেজাবিন কিপতিয়া: আমি হাতে তৈরি পণ্য নিয়ে কাজ করছি। আমার প্রতিটি পণ্য ইউনিক অর্থাৎ একটি থেকে অন্যটি ভিন্ন, যা অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না এবং এটি কাস্টমারের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়ে তৈরি করা।

Advertisement

আমরা প্রতিটা নারী নিজেকে সাজাতে যেমন পছন্দ করি তার পাশাপাশি ঘর সাজাতেও পছন্দ করি। তাই আমি নারীর সৌখিনতার ১ম ধাপে যে গয়না রয়েছে তা তৈরি করে থাকি এবং সৌখিনতার বসে ঘর সাজাতে সবাই চায় ইউনিক কিছু। তাই আমার উদ্যোগে পরসা সাজিয়েছি এই গুরুত্বপূর্ণ দেশীয়, হাতে তৈরি পণ্যগুলো দিয়ে।

আরও পড়ুন

বিশ্বের সবচেয়ে ভাগ্যবতী নারী, টাইটানিক থেকেও বেঁচে ফিরেছিলেন

আমার হাতে তৈরি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- হ্যান্ডমেড জুয়েলারি, হোমডেকর পণ্য, পাটের তৈরি গহনা থেকে শুরু করে পাটের তৈরি জুয়েলারি বক্স। জুয়েলারি বক্সটি আমার নিজস্ব ডিজাইনের তৈরি এবং আমার পেজের সবচেয়ে বিক্রিত একটি দেশীয় পণ্য।

এখানে আরেকটু বলে রাখি, আমি যেহেতু শরীয়তপুরের মেয়ে, নানু বাড়িতে পাট দেখে বড় হয়েছি, সেই ছোট্ট থেকেই পাট দিয়ে পুতুল বানাতাম এবং সেই থেকেই বড় হয়ে পাট নিয়ে কাজ করার প্রচেষ্টা।

Advertisement

জাগো নিউজ: এই কাজে কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন? মারিয়া মেহেজাবিন কিপতিয়া: নিত্যনতুন হাতে তৈরি সবার সেরা পণ্য বানিয়ে ক্রেতাকে আকর্ষিত করে এই প্ল্যাটফর্মে টিকে থাকাটা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সবাই কাজ করছে, সেই জায়গা থেকে নিজের কাজ সবার মাঝে তুলে ধরতে আমাকেও চেষ্টা করতে হয়েছে সবার থেকে আলাদা কিছু করার। রাতদিন শ্রম দিয়েছি নিজস্ব ডিজাইনের দেশীয় পণ্য তৈরি করতে। এছাড়াও চাকরি করার চাইতে উদ্যোক্তা হওয়াটা বেশি সম্মানের এবং বেশি শান্তি এই বিষয়টা পরিবারকে বুঝিয়ে এই প্ল্যাটফর্মে কাজ করাটা ছিল সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের।

জাগো নিউজ: কাজ করতে গিয়ে কোনো প্রতিবন্ধকতায় পড়েছেন কি না? মারিয়া মেহেজাবিন কিপতিয়া: আপনি পৃথিবীতে যে কাজই করেন না কেন, প্রতিবন্ধকতা আসবেই। প্রথম প্রতিবন্ধকতা মেয়েরা কিছু করতে পারবে না, দ্বিতীয় প্রতিবন্ধকতা পাড়া প্রতিবেশীর কাছ থেকে পেয়েছি, তারা প্রায়ই মাকে বলতো মেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছেন কি অনলাইনে গয়না বিক্রি করতে। মা-বাবা পুরো পরিবার এবং হাজব্যান্ড পাশে ছিল বলেই এই সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উদ্যোক্তা জীবনে টিকে আছে।

জাগো নিউজ: কেনো মানুষ আপনার পণ্য কিনবে? মারিয়া মেহেজাবিন কিপতিয়া: অনলাইন এবং অফলাইন সবখানেই হাতে তৈরি পণ্য পাওয়া যায় কিন্তু ক্রেতাকে পণ্য কেনার আগে দেখতে হবে পন্যের মান যথাযথ কি না? আমার পাঁচ বছরের উদ্যোক্তা জীবনে সবসময় চেষ্টা করেছি কাস্টমারের সাধ্যের মধ্যে চাহিদা অনুযায়ী কাজ করার।

আমার অনলাইন পেজ থেকে পণ্য কিনবে তার প্রথম কারণ আমি ক্রেতার পছন্দের পণ্যটি সঠিকভাবে সঠিক দামে হাতে পৌঁছে দিব। আমার থেকে ক্রেতা কেনাকাটা করবে কারণ পন্যের গুণগত মান ঠিক থাকবে, ঘরে বসে তার পছন্দের পণ্যটি হাতে পেয়ে যাবে, পণ্য পছন্দ না হলে রিটার্ন করে দিবে এবং ক্রেতাকে এক টাকাও অগ্রিম পেমেন্ট করতে হবে না।

জাগো নিউজ: আপনার অনুপ্রেরণায় কে ছিলেন? মারিয়া মেহেজাবিন কিপতিয়া: আমার অনুপ্রেরণায় ছিলেন আমার মা। মাকে দেখে সবসময় মনে হয়েছে নিজের কিছু একটা করা উচিত। নিজের শখের কাজটিকে নিজের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা উচিত। মা সাহস দিয়েছিলেন এবং মায়ের অনুপ্রেরণা পেয়েছি বলে হয়তো আজ কিছুটা সফল। তবে আমার উদ্যোগ যখন বড় হতে শুরু করলো তখন আমার বাবাও আমাকে অর্থনৈতিকভাবে সাপোর্ট করেছে।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?মারিয়া মেহেজাবিন কিপতিয়া: হাতে তৈরি দেশীয় পণ্যের ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সমন্বয়ে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে যতভাবে কাজ করার সুযোগ আছে আমি করতে চাই। নতুন নতুন কাস্টমাইজড এবং নিজস্ব ডিজাইন আনার মাধ্যমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে চাই।

অনলাইনে আরও বেশি পরিচিতি লাভ করে ক্রেতাদের সুবিধার জন্য অফলাইনে একটা শোরুম রাখতে চাই। যেখানে আমার তৈরি দেশীয় পণ্যের সমাহার থাকবে যা থেকে ক্রেতারা দেখে খুব সহজেই ক্রয় করতে পারবে। আমার মূল পরিকল্পনা আমি একটি দেশীয় পণ্যের শোরুম দাঁড় করাব যেখানে সুবিধাবঞ্চিত মানুষ কাজ করতে পারবে।

আরও পড়ুন

‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’ সেলের পেছনের করুণ ইতিহাস জানেন কি? মিশরীয়দের হাতেই তৈরি হয় প্রথম কেক

কেএসকে/এমএস