কৃষি ও প্রকৃতি

কুষ্টিয়ায় বিষমুক্ত সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের

কুষ্টিয়ায় বিষমুক্ত সবজি চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে (আইপিএম) কম খরচে বেশি উৎপাদন হওয়ায় সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। কীটনাশকের বদলে জৈব বালাইনাশক ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার, উপকারী পোকামাকড় সংরক্ষণ এবং পরিচ্ছন্ন এই চাষাবাদ পদ্ধতিতে সাশ্রয়ী খরচে উৎপাদন বেশি হয় বলে জানান কৃষকেরা।

Advertisement

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে প্রায় ১০০ একর জমিতে বিষমুক্ত সবজি চাষ হচ্ছে। কৃষি বিভাগের কারিগরী সহায়তা ও পরামর্শে টমেটো, বেগুন, শিম, লাউ, পটোল, লালশাকসহ প্রায় ১৫ ধরনের বিষমুক্ত সবজি চাষ করা হচ্ছে।

সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের বারুইপাড়া গ্রামের কৃষক আসাদুজ্জামান জানান, তিনি কীটনাশক ছাড়াই সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে (আইপিএম) ৪৬ শতক জমিতে বিষমুক্ত টমেটো চাষ করছেন। এ পদ্বতিতে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম। বাজারে বিষমুক্ত সবজির ব্যাপক চাহিদা থাকায় তারা লাভবান হচ্ছেন।

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘টমেটো চাষ করে এত লাভ হবে, কখনো ভাবিনি। সামনের মৌসুমে আরও বেশি জমিতে টমেটো চাষ করবো। এ টমেটো বিষমুক্ত। টমেটোর জমিতে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। ফল ও ডগা ছিদ্রকারী পোকার জন্য টমেটো গাছে সবচেয়ে বেশি বিষ প্রয়োগ করতে হয়। কীটনাশকের বদলে জৈব বালাইনাশক ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদের ব্যবহার করায় সবজি চাষে বিষ প্রয়োগ করতে হয়নি। এর আগে প্রতি সপ্তাহে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকার বিষ প্রয়োগ করতে হতো।’

Advertisement

আরও পড়ুন সোনারগাঁয়ে ফুলকপি চাষে স্বাবলম্বী আসাদুল্লাহ গাইবান্ধায় শীতকালীন সবজি চাষে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৪৬ শতক জমির টমেটো থেকে খরচ বাদে কমপক্ষে ১ লাখ টাকা লাভ হবে বলে তিনি আশা করছেন।

একই এলাকার কৃষক আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘২৫ শতক জমিতে পটোলের চাষ করছি। আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহারে আগের চেয়ে খরচ কমেছে। ফলে লাভ বেশি হচ্ছে।’

সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনয়নের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার সাইদুর রহমান বলেন, ‘পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে বিভিন্ন সবজি চাষ হচ্ছে। এখানে সম্পূর্ণ আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহার করেই প্রায় ১৫ ধরনের সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। নিরাপদ উপায়ে এসব সবজি চাষের জন্য কৃষকদের মোটিভেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন কৃষক সমাবেশের মাধ্যমে আধুনিক জৈবপ্রযুক্তি সম্পর্কে জানানো হচ্ছে এবং জনগণকেও সচেতন করা হচ্ছে।’

কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামান বলেন, ‘সবজি ক্ষেতে পোকা দমনে যেসব কীটনাশক ব্যবহার করা হয়, তা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এ কারণে কৃষকদের কীটনাশক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করে বিষমুক্ত ও স্বাস্থ্যবান্ধব সবজি চাষে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বিষমুক্ত সবজি চাষে কৃষি বিভাগের সঙ্গে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছে। প্রথম অবস্থায় কৃষকদের এ চাষ পদ্ধতিতে চাষে আগ্রহী করতে বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু উৎপাদনে সাফল্য দেখে উপজেলার কৃষকেরা দিন দিন এ পদ্ধতিতে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।’

Advertisement

আল-মামুন সাগর/এসইউ/এএসএম