শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনটি। এতে ওই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করতে খোলা মাঠে টিনের ছাউনি তুলে পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন শিক্ষকরা।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭০ সালে জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের আহাম্মেদ মাঝি কান্দি এলাকায় স্থাপিত হয় ৫২ নম্বর পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। এরপর থেকে টিনের ছাউনি দেওয়া পাকা মেঝের ঘরেই চলছিল পাঠদানের কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের একটি ভবনে ছিল পাঁচটি কক্ষ। পাঁচ কক্ষের ভবনটি গত ৫ অক্টোবর সকালে নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকেই পদ্মা সেতুর জন্য অধিগ্রহণ করা সরকারি জমিতে খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান।
বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকেই এখন শ্রেণিকক্ষ বাদে বাইরে বসে ক্লাস করতে হচ্ছে। বৃষ্টি বা রোদ হলে স্থানীয় একটি মাদরাসার রান্না ঘরের নিচে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আশ্রয় নেন। খেলার মাঠ, লাইব্রেরি না থাকায় ও বেঞ্চ সংকটে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় বেঞ্চ, টেবিল, ব্ল্যাকবোর্ডসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ বাধ্য হয়ে উন্মুক্ত জায়গায় রাখতে হচ্ছে। এতে স্কুলের মূল্যবান উপকরণ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রোদ-বৃষ্টিতে সীমাহীন কষ্ট সহ্য করে খোলা আকাশের নিচে ধুলাবালির মধ্যে ক্লাস করে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বৃষ্টির দিনে বিদ্যালয়ে পাঠদান চালু রাখলে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। বই-খাতা ভিজে নষ্ট হয়ে যায়।
Advertisement
বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী পদ্মা নদীর মাঝে অবস্থিত চরপাইনপাড়া এলাকার বাসিন্দা। আর অস্থায়ীভাবে পাঠদান চালু হয়েছে নদীর দক্ষিণ তীরের নাওডোবা এলাকায়। এ কারণে নৌকায় করে পদ্মার প্রায় দুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শিশুদের বিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছে। নদী পারাপারের ভয়ে প্রাক্-প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছেন না অভিভাবকরা।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিশাদুল বলে, ‘খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে খুব কষ্ট হয়। অনেক সময় ঠিকমতো ক্লাস হয় না। বৃষ্টি হলে বই-খাতা ভিজে যায়। আমাদের জন্য নতুন একটি বিদ্যালয় হলে ভালো হয়।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম মিয়া (শান্ত) জাগো নিউজকে বলেন, নদীভাঙনের কবলে পড়ে বিদ্যালয়ের ভবনটি ধসে পড়ে। এরপর থেকে বাধ্য হয়ে নদী পার হয়ে পদ্মা সেতুর অধিগ্রহণ করা সরকারি জমিতে খোলা আকাশের নিচেই পাঠদান করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, অস্থায়ীভাবে একটি টিনশেড করার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে বিদ্যালয়ের ভবনটি করা যাবে।
Advertisement
বিধান মজুমদার অনি/এসআর/জিকেএস