রাজনীতি

সেনাকুঞ্জে যাচ্ছেন কি খালেদা জিয়া?

আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সশস্ত্র বাহিনী দিবস। দিবসটি ঘিরে সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ থেকে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। যদিও তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। সে কারণে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারবেন কি না সেটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অনেকে বলছেন, এ অনুষ্ঠানে দীর্ঘদিন পর খালেদা জিয়ার উপস্থিতি ইতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করবে।

Advertisement

একজন বীর উত্তমের স্ত্রী বা বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে বিগত সময়ে একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার সামরিক কর্মকর্তা এ দিবসের আমন্ত্রণ জানালেও এবার লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদমর্যাদার দুজন কর্মকর্তা সস্ত্রীক সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমন্ত্রণপত্র দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (১৯ নভেস্বর) রাতে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএসএম কামরুল আহসান এ আমন্ত্রণপত্র বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে পৌঁছে দেন।

আরও পড়ুন:

Advertisement

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের আমন্ত্রণ পেলেন খালেদা জিয়া খালেদা জিয়া কি রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারবেন? ‘খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না’ এমন মুচলেকা ছিল না

বিএনপির দলীয় সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার পাশাপাশি ২০০৯ সালের পর এবারই প্রথম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এবছর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে মোট ২৬ জন আমন্ত্রণ পেয়েছেন। এর মধ্যে আরও রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান এবং অন্য পদমর্যাদার সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা। বিগত সময়ে দলীয়ভাবে এত সংখ্যক নেতা আমন্ত্রণ পেতেন না।

খালেদা জিয়ার পাশাপাশি ২০০৯ সালের পর এবারই প্রথম বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এবছর সশস্ত্র বাহিনীর দিবসের অনুষ্ঠানে মোট ২৬ জন আমন্ত্রণ পেয়েছেন।-বিএনপি

দলটির নেতাকর্মীরা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যদি তার স্বাস্থ্যগত জটিল পরিস্থিতি এড়িয়ে যোগ দিতে পারেন তাহলে হয়তো নতুন কিছু ঘটতে পারে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জাগো নিউজকে বলেন, ২০০৯ সালে সবশেষ সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে যোগ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। তবে এবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন কি না সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।

Advertisement

স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেনের বরাত দিয়ে শায়রুল কবির জানান, সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএসএম কামরুল আহসান সস্ত্রীক খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমন্ত্রণপত্র দিয়ে গেছেন।

খালেদা জিয়া অতীতে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে আমন্ত্রণ পেতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া যদি যান তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি সবার মধ্যমণি হবেন।- লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান

খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ করার বিষয়ে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান জাগো নিউজকে বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অতীতে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে আমন্ত্রণ পেতেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এবার ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের পতন ঘটেছে এবং নতুন সরকার হয়েছে। এবারের সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়া যদি যান তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি সবার মধ্যমণি হবেন। তিনি সবসময়ই সবার মধ্যমণি ছিলেন।

আরও পড়ুন:

পাঠ্যবইয়ে ফিরছেন জিয়া-খালেদা, থাকছেন শেখ মুজিব-হাসিনাও ‘কারাবাসে অভ্যস্ত’ হয়ে উঠেছেন খালেদা জিয়া

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমন্ত্রণ পেতেন। তাকে ঘিরে মানুষের মধ্যে আবেগ রয়েছে। তিনি যদি আগামীকালের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে যান তাহলে প্রশাসনসহ সর্বস্তরে ইতিবাচক বার্তা যাবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ম্যাডাম অসুস্থ। তিনি যাবেন কি যাবেন না সেটা চিকিৎসকদের ওপর নির্ভর করছে। যেহেতু যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত না, সুতরাং সে বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে পারি না।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমন্ত্রণ পেতেন। তাকে ঘিরে মানুষের মধ্যে আবেগ রয়েছে। তিনি যদি অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে যান তাহলে প্রশাসনসহ সর্বস্তরে ইতিবাচক বার্তা যাবে।- গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ব্যাপারে বিশেষ করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতারা দ্বিমত পোষণ করে কথা বলছেন। ধারণা করা হচ্ছে, খালেদা জিয়ার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিতি রাজনীতির মাঠে ভিন্ন বার্তা দেবে।

১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের সূচনা করেছিল। সেই দিনটা সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালন করা হয় প্রতি বছর।

কেএইচ/এসএনআর/এমএস