জাতীয়

চা শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতে শ্রম আইনের ধারা সংস্কারের দাবি

চা শ্রমিকদের বাসস্থান, গ্র্যাচুইটি এবং নৈমিত্তিক ছুটির সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর সংশ্লিষ্ট ধারা সংস্কারের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর তোপখানার একটি হোটেলে সলিডারিটি সেন্টার আয়োজিত ‘চা শিল্পের শ্রমিকদের জন্য প্রয়োজনীয় আইনি সংস্কার’ শীর্ষক এক অংশীজন সভায় তারা এ আহ্বান জানান।

সভায় উপস্থাপিত দাবিগুলো হলো চা শ্রমিকদের জন্য গ্র্যাচুইটি নিশ্চিত করতে শ্রম আইনের ধারা ২৮ সংশোধন, নৈমিত্তিক ছুটির বিধানে ধারা ১১৫ সংশোধন, মজুরিসহ বাৎসরিক ছুটি নিশ্চিতে ধারা ১১৭ সংশোধন, চা শ্রমিকদের বাসস্থান নিশ্চিতে উচ্ছেদ সংক্রান্ত ধারা ৩২ সংশোধন, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের শ্রম আইন সংস্কার কমিটি ও জাতীয় ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদে অন্তর্ভুক্ত করা, স্থায়ী ও অস্থায়ী চা শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করা, চা শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির সঠিক হিসাব উপস্থাপন, চা ইউনিয়নের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সেফটি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা, চা বাগান বন্ধের সময় স্বাস্থ্যসেবাসহ চা শ্রমিকদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করা এবং বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন এবং বাংলাদেশীয় চা সংসদের মধ্যে যৌথ দর কষাকষির মাধ্যমে চুক্তি বাস্তবায়ন।

অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সাংবাদিক হাবিবুর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন সলিডারিটি সেন্টারের প্রোগ্রাম অফিসার খন্দকার শাফিন হাবিব।

Advertisement

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী বলেন, ‘সকল শ্রমিক গ্র্যাচুইটির জন্য যোগ্য না হওয়া একটি বৈষম্যমূলক আইনের নিদর্শন। এগুলো নিপীড়নমূলক আইন। চা শ্রমিকদের অন্যান্য শিল্পের শ্রমিকদের সমান অধিকার ভোগ করা থেকে যে সকল ধারা বাধা দেয় তা সংশোধনে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।’

চা শ্রমিকদের অবহেলার কথা উল্লেখ করে উদ্বোধনী বক্তব্যে সলিডারিটি সেন্টারের ডেপুটি কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মনিকা হার্টসেল বলেন, ‘যদিও চা শ্রমিকরা বাংলাদেশ শ্রম আইনের আওতাধীন, তারা অন্যান্য শিল্পের শ্রমিকদের মতো একই সুরক্ষা ভোগ করে না। বৈষম্যহীন আন্দোলনের চেতনায়, সবচেয়ে প্রান্তিক শ্রমিকগোষ্ঠী সম্পর্কে আরও বিস্তৃতভাবে চিন্তা করার এখনই সুযোগ।’

সলিডারিটি সেন্টারের কান্ট্রি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর একেএম নাসিম বলেন, ‘চা খাতের শ্রমিকরা ঐতিহাসিকভাবেই অবহেলিত। চা শ্রমিকদের বিষয়ে আলোচনা এবং কাজ প্রায়ই বিক্ষিপ্ত এবং বিচ্ছিন্ন। চা শ্রমিকদের সাথে তাদের জীবন ও জীবিকার সকল দিক সম্বন্ধে ব্যাপকভাবে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। চা শিল্পকে একটি টেকসই এবং প্রাণবন্ত খাত হিসেবেও বিবেচনা করতে হবে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দাসপ্রথার আমলেও শ্রমিকের মজুরি একটি মীমাংসিত বিষয় ছিলো। দুইশ বছরের পুরোনো শিল্প হয়েও চা শিল্পে এখনো এই সমস্যার সমাধান হয়নি। নিয়োগকর্তা বা সরকারের বাণিজ্য পরিচালনার ব্যর্থতার ভার শ্রমিকরা বহন করতে পারে না। একজন চা শ্রমিকের সন্তানও চা শ্রমিক হবে এমন প্রথার অবসান ঘটাতে হবে। তাছাড়া তাদের জীবনমান কখনো উন্নত হবে না।’

Advertisement

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল, ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ পরশ কালিন্দী, শ্রম মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রাজা মিয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব তরফদার সোহেল রহমান, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া, বাংলাদেশ লেবার বার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মহসিন মজুমদার, বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের শ্রম কমিটির আহ্বায়ক তাহসিন আহমেদ চৌধুরীসহ অনেকে।

এসআরএস/বিএ/জিকেএস