আওয়ামীপন্থি যেসব চিকিৎসক আন্দোলনে আহত ছাত্র-জনতাকে চিকিৎসা সেবা দিতে অস্বীকার ও বাধা প্রদান করেছেন তাদের বিএমডিসির নিবন্ধন বাতিল করাসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বৈষম্যবিরোধী শিক্ষক-চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের মিল্টন হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসকরা। আওয়ামীপন্থি চিকিৎসকরা কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থেকে নানাবিধ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে লিপ্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।
এসময় সংগঠনটির সভাপতি ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. রুহুল কুদ্দুস বিপ্লবসহ অন্যান্য চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘বিগত ১৬ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়ম করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। সুপার স্পেশালাইজড হাসাপতাল প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা কনভেনশন সেন্টার নির্মাণে ভয়াবহ দুর্নীতি করা হয়েছে। ২০০৬ সালের আগে নিয়োগকৃত শিক্ষক, চিকিৎসকদের যে হয়রানি, চাকরি চ্যূুতি, পদাবনতি ও উচ্চ শিক্ষা অর্জনে বাধা প্রদান করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, চিকিৎসা ও গবেষণাকে ধ্বংস করা হয়েছে।’
Advertisement
বৈষম্য বিরোধী চিকিৎসকরা বলেন, ‘প্রায় ২৭৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি না দিয়ে ব্যক্তিগতভাবে এবং সামাজিকভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং তাদের বিপরীতে কম যোগ্যতা সম্পন্ন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে মেধাশূণ্য করা হয়েছে।’
বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসকদের ১০ দফা দাবি১. আহত ছাত্র-জনতাকে যারা চিকিৎসা সেবা দিতে অস্বীকার ও বাধা প্রদান করেছে তাদের তালিকা প্রণয়ন করে বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে হবে। শান্তি সমাবেশে যোগদানকারী ও ফ্যাসিবাদের দোসর সব শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
২. গত ১৬ বছরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সব দুর্নীতি ও অনিয়মের শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে এবং সব কেনা-কাটা, টেন্ডার ও নির্মাণে অনিয়মের তদন্ত করে বিচার করতে হবে।
৩. এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত ফ্যাসিবাদি সরকারের কারণে যে সব শিক্ষক, চিকিৎসকরা চাকরিচ্যুত, পদাবনতি ও বরখাস্ত হয়েছেন তাদেরকে স্ব-স্বপদে বহালের জন্য জোর দাবি জানানো হয়।
Advertisement
৪. বৈষম্যের শিকার সব শিক্ষক, চিকিৎসকদের অতি দ্রুত পদোন্নতি দিয়ে বৈষম্য দূর করতে হবে।
৫. বিগত ৪ আগষ্ট গণঅভ্যুত্থানের চূড়ান্ত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে সাবেক উপাচার্যের একান্ত সচিব এবং সাবেক প্রক্টর এর নেতৃত্বে একদল আওয়ামী সন্ত্রাসী শিক্ষক, কর্মচারী পরিকল্পিতভাবে শাহবাগের আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতাকে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রসহ আক্রমন করে। এদের চিহ্নিত করে ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা ও মামলা দায়ের করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৬. সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত থেকে শুরু করে স্বৈরাচার কর্তৃক নিয়োগকৃত সব প্রো- ভিসি, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার ও প্রক্টরদের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের হিসাব দুদকের মাধ্যমে তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. সুপার স্পেশালাইজড হাসাপাতাল ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা কনভেনশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সে বিষয়ে মন্ত্রণালয় ও বিচার বিভাগের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে।
৮. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম অনতিবিলম্বে পরিবর্তন ও ৫ই আগষ্টের বিপ্লবের চেতনা বিরোধী সব ম্যুরাল সরিয়ে ফেলতে হবে।
৯. এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ১৬ বছরে সংঘটিত সব অনিয়ম, দুর্নীতির ও বৈষম্য তদন্তে একটি শক্তিশালী অভ্যন্তরীন ‘তদন্ত কমিশন' গঠন করতে হবে।
১০. ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে নিয়োগ প্রাপ্ত চিকিৎসদের পদোন্নতি সংক্রান্ত ২০০৮ সালের প্রজ্ঞাপন ২০০৯ সালের ৩৩তম সিন্ডিকেট সভায় বাতিল করা হয়। এ আদেশটি অনতিবিলম্বে বাতিল করে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী চিকিৎসকদের ভূতাপেক্ষভাবে পদোন্নতি দিতে হবে।
এএএম/এসআইটি/জিকেএস