ফিচার

দেশে দেশে যেভাবে পালিত হয় হ্যালোইন

হ্যালোইন, বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী এক উৎসব। পশ্চিমা বিশ্বে বেশ জাঁকজমকতার সঙ্গে পালন করা হয় হ্যালোইন। এই উৎসব ঘিরে থাকে নানান প্রস্তুতি, আনন্দ-আয়োজন। এই ভুতুড়ে উৎসবের ইতিহাস ২০০০ বছরেরও বেশি পুরোনো। অনেকেই ভাবেন, এ দিনটি হয়তো ভূতের মতো সাজতেই পালন করা হয়। আসলে মৃত আত্মাদের স্মরণে পালন করা হয় দিনটি।

Advertisement

হ্যালোইন শব্দের উৎপত্তি ১৭৪৫ সালের দিকে। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে এর উৎপত্তি। হ্যালোইন’ বা ‘হ্যালোউইন’ শব্দটি এসেছে স্কটিশ ভাষার শব্দ ‘অল হ্যালোজ’ ইভ থেকে। হ্যালোইন শব্দের অর্থ ‘শোধিত সন্ধ্যা বা পবিত্র সন্ধ্যা’। নানান রকম ভুতুড়ে সাজে নিজেদের সজ্জিত করেন এই উৎসবে যোগ দিতে। উৎসবের লক্ষ্য মৃতদের স্মরণ করা, এই ব্যাপারটি এক হলেও একেক দেশে এর নাম এবং উৎসব পালনের পদ্ধতিতে ভিন্নতা আছে। যেমন-

অস্ট্রিয়া৩০ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর টানা এক সপ্তাহ ‘অল সোলস উইক’ পালন করা হয় অস্ট্রিয়ায়। এই এক সপ্তাহ পূর্বপুরুষদের মৃত আত্মার উদ্দেশ্যে ঘরের টেবিলের ওপর খাবার, পানি রেখে ল্যাম্প জ্বেলে ঘুমোতে যান অস্ট্রিয়রা। এরপর ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় পালিত হয় অল সেন্টস ডে। এদিন পরিবারের প্রিয়জনদের সমাধিক্ষেত্রে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

জার্মানিজার্মানরা বিশ্বাস করেন হ্যালোউইনের রাতে মৃত অতৃপ্ত আত্মারা নেমে পৃথিবীতে। তাই এই রাতে ছুরি, কাঁচি সব লুকিয়ে ফেলেন তারা। বার্লিনের হ্যালোইন কস্টিউম পার্টির খ্যাতি পৃথিবী জোড়া।

Advertisement

চেক রিপাবলিকচেক রিপাবলিকের হ্যালোউইন উদযাপন কিন্তু অন্য দেশের থেকে একেবারেই আলাদা। বাড়ির ফায়ারপ্লেসের পাশে এ দিন রাতে পরিবারের প্রত্যেক মৃত সদস্যের জন্য চেয়ার সাজিয়ে রেখে ঘুমোতে যান সকলে। তাদের বিশ্বাস, হ্যালোইনের রাতে মৃত সদস্যদের আত্মারা নেমে এসে পরিবারের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটিয়ে যান।

লাতিন আমেরিকালাতিন আমেরিকায় ‘অল সোলস ডে’ পালিত হয় ‘ডে অব দ্য ডেড’ নামে। মেক্সিকো ও স্পেনে নভেম্বর মাসের প্রথম দু’দিন পালিত হয় মৃতদের দিন। এই দু দিন মৃতদের সমাধিক্ষেত্রে শ্রাদ্ধা জানানোর পরই সবাই মেতে ওঠেন উৎসবে। উৎসবের এই রীতি প্রায় হাজার বছরের প্রচীন।

আরও পড়ুন বাস নম্বর ৩৭৫-এর রহস্য আজও অজানা

জাপানজাপানে এই উৎসব ‘ফেস্টিভ্যাল অব হাঙ্গরি গোস্টস’। তবে জাপানে ভূতেদের উৎসব অক্টোবর-নভেম্বরে নয়, চলে গোটা গরমকাল জুড়েই। এই সময় সারা রাত আগুন জ্বালিয়ে রাখেন জাপানিরা। এই সময় সারি সারি লাল কাগজ বা কাচের তৈরি লণ্ঠনে সেজে ওঠে রাস্তার দু পাশ।

চীনচীনা বছরের শেষে পালিত হয় ‘তেঙ্গ চেইহ’, যার অর্থ হলো লণ্ঠন উৎসব। বিভিন্ন পশুপাখির আকারে তৈরি লাল, হলুদ, সবুজ কাগজ বা কাচ দিয়ে তৈরি করা হয় সেই লণ্ঠনগুলো। এই ‘তেঙ্গ চেইহ’ উৎসবের সময় জাপানের মতোই লণ্ঠন জ্বালিয়ে অশুভ শক্তি দূর করে চীনারা।

Advertisement

ভারতপ্রতিবেশী দেশ ভারতেও এই দিবস পালন করা হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কালীপূজা, অর্থাত্ দীপান্বিতা অমাবস্যার আগের রাতে ভূত চতুর্দশী পালন করেন। চৌদ্দ পুরুষের উদ্দেশে এ দিন সারারাত জ্বালানো হয় ১৪টি প্রদীপ। খাওয়া হয় ১৪ শাকও।

বেলজিয়ামবেলজিয়ামে কিছু গ্রাম হ্যালোইন উদযাপন করে যখন অন্য গ্রামগুলো অল সেন্টস ডে উদযাপনের দিকে মনোনিবেশ করে। হ্যালোউইনের রাতে, একজন বেলজিয়ানকে মৃত আত্মীয়ের স্মরণে একটি মোমবাতি জ্বালাতে হয়।

কানাডাকানাডায়, হ্যালোইন উদযাপন শুরু হয়েছিল স্কটিশ এবং আইরিশ অভিবাসীরা ১৮০০ এর দশকে যখন এখানে আসেন। কানাডা সক্রিয়ভাবে হ্যালোউইন উদযাপন করে প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর সাজসজ্জা, কস্টিউম পার্টি এবং ট্রিক-অর-ট্রিটিং করে।

আয়ারল্যান্ডহ্যালোইন আয়ারল্যান্ডে উদ্ভূত বলে মনে করা হয়। আয়ারল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে হ্যালোইন উদযাপনের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। তবুও আইরিশদের হ্যালোইন এখনো ভিন্ন ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এদিন শিশুরা নক-এ-ডলি নামে পরিচিত একটি খেলা খেলে। হ্যালোইনের রাতে শিশুরা তাদের প্রতিবেশীদের দরজায় কড়া নাড়ে এবং দরজা খোলার আগেই পালিয়ে যায়। আইরিশরা হ্যালোউইনে একটি কার্ড গেম খেলে যার মাধ্যমে বাচ্চারা একটি কার্ড বেছে নেবে এবং এতে যে পুরস্কার দেওয়া আছে তা গ্রহণ করবে। আইরিশরা ঐতিহ্যগতভাবে এই দিনে বার্নব্র্যাক নামে একটি ফ্রুটকেক খায়। বার্নব্র্যাকের কেকের ভেতরে একটি ট্রিট বেক করা আছে এবং যে ট্রিটটি ভেতরে রয়েছে তার উপর নির্ভর করে যে এটি গ্রহণ করবে তার ভবিষ্যৎ বলে দেবে।

আরও পড়ুন যে দেশে পোকামাকড়, সাপ কিছুই নেই টাক মাথা পুরুষের ব্যক্তিত্বে পরিবর্তন আনে

সূত্র: হিস্টোরি ডটকম, ইন্টারপ্রো

কেএসকে/এএসএম