আইন-আদালত

জামায়াতের নিবন্ধন: খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

Advertisement

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

জামায়াতের নিয়োগ পাওয়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আদালতে আজ জামায়াতের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক।

Advertisement

এর আগে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের চেম্বার জজ আদালতে বিষয়টি উপস্থাপন করা হলে তা আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ধার্য করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সেটি তালিকায় ওঠে। আদালতে ওইদিন জামায়াতের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির ও ব্যারিস্টার ইমরান আব্দুল্লাহ সিদ্দিক।

আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ হিসেবে খারিজ হওয়া আপিলটি পুনরুজ্জীবিত করতে আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্টে আবেদন করা হয়।

আরও পড়ুন জামায়াতে ইসলামীকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল আ’লীগ সরকার জামায়াত ক্ষমতায় এলে নারীদের গৃহবন্দি করে রাখা হবে না: আমির

রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে দেওয়া নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল গত বছরের ১৯ নভেম্বর খারিজ করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। আপিলকারী পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় ওইদিন আপিল বিভাগ ওই আদেশ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) দেন। আপিলটি পুনরুজ্জীবিত চেয়ে দলটির পক্ষ থেকে সেক্রেটারি জেনারেল আবেদন করেন, যা ২ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।

আদালতে ওইদিন আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সেদিন তিনি বলেন, আপিল পুনরুজ্জীবিত চেয়ে করা আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন চেম্বার জজ আদালত। পুনরুজ্জীবিত চেয়ে করা আবেদন মঞ্জুর হলে আপিলের ওপর শুনানি হবে।

Advertisement

এর আগে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট করেন সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ।

একই সঙ্গে আদালত এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেন, যা পরবর্তী সময়ে আপিল হিসেবে রূপান্তরিত হয়। এর আগে রায় ঘোষণার পরপরই তা স্থগিত চেয়ে জামায়াত আবেদন করে, যা ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট খারিজ করে দেন আপিল বিভাগের তৎকালীন চেম্বার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গত ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

এরপর জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে জারি করা প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের গত ২৮ আগস্ট জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর অঙ্গসংগঠনের সন্ত্রাস-সহিংসতার সঙ্গে সম্পৃক্ততার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এতে আরও বলা হয়, সরকার বিশ্বাস করে, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরসহ এর অঙ্গসংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত নয়। তাই সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ১৮(১) ধারার ক্ষমতাবলে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গসংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা সংক্রান্ত ১ আগস্টের প্রজ্ঞাপন বাতিল করলো।

এফএইচ/ইএ/জেআইএম