সাহিত্য

স্বপঞ্জয় চৌধুরীর একগুচ্ছ কবিতা

একটি মুঠোবদ্ধ হাত

তুমি ও তোমরা আমার মুঠোবদ্ধ হাত দেখে ভাবলে আমি স্বার্থপর।হাতের মুঠোয় রেখেছি অনাহুত ভবিষ্যৎ, অদেখা ঐশ্বর্যআমার ঘাম দেখে হাসলে,রক্ত দেখে হাসলে ভাবলেএমনটি তো হবার কথা।বহুবার বলেছো হাতের মুঠো খুলতে আমি খুলিনি, ভেবেছো আমি লুট করে নিয়েছিতোমার অস্তিত্ব, অনাগত সময়, সুখ, সমৃদ্ধিসব আমার হাতের মুঠোয় আমি এক লোভী, স্বার্থপরতোমার কাপড়ে বুনছি আমার নকশিকাঁথাএকদিন তুমি আমার হাত খুলতে পারলেআমি আর বাধা দিতে পারলাম নাবাধা দেয়ার শক্তি যে আমার নেইএই দেখো রিক্ত আমার হাততুমি আমার হাতের তালুতেভালোবাসা ছাড়া কিছুই খুঁজে পেলে না।

Advertisement

****

যুগান্তরকাল

ইতিহাসের বইয়ের পাতা থেকে এখানে প্রতিদিন বুক মেলে দাঁড়িয়ে থাকে পলাশীর প্রান্তর।আকাশের মেঘগুলো এঁকে ফেলে যোদ্ধার ছবি অলেখা কথাগুলো যা বাদ পড়ে গেছে ইতিহাস থেকে। সোনালি খঞ্জরে মাখা রক্তের দাগ মুছে গেছে জানি, ঘোড়ার চিহি চিহি ডাক এখন আর শুনি না হয়তো। যান্ত্রিক সভ্যতাকে গায়ে মেখে হয়ে উঠি কৃত্রিম নাগরিক। আমার নগর জুড়ে দেখি ফসিলের কান্না। রাতের আঁধার থেকে ভেসে আসে মৃতদের ক্রন্দন। দুঃসহ কাতরতায় হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকা ধর্ষিত নারী খামচে ধরে আছে পতাকা। সাদা বিছানার চাদর রঞ্জিত হয়ে ওঠে কাঁচা রক্তে।আমি আবার ইতিহাস লিখবো বিজয়ী এবং বিজেতার। আমি আবার ইতিহাস লিখবো জন্মকে ঢেলে সাজাবো। কদমের পাপড়িতে ভরে দেব রাজপথ।যে শিশুকন্যা হরিণীর মতো চাতক চোখে চেয়ে থাকে সরু পথের দিকে। তার জন্যে বাবা কিনতে গেছে ছবি আাঁকার কাগজ, স্বপ্নের মলাট। প্রহর চলে যায় চোখে ভেসে ওঠে ঘোলাটে মলাট;প্রতারিত সময়ের দেয়ালে ঝুলে থাকে বাবার স্কেচ।আমি আবার ঢেলে সাজাবো পথের কবিতা। যে পথে শুধু পথিকের পদচ্ছাপ থাকবে। যে পথ থেকে আমি আর কখনো কুড়াবো না গৃহহীন ভাসমান মানুষের ক্রন্দন। যে পথ থেকে আমি আর কুড়াবো না ভেঙে যাওয়া কাচের মতো স্বপ্নের টুকরো। আহত শিশিরের গা থেকে মুছে যেতে দেব না শিউলির দাগ। এমন এক যুগান্তরকাল চাই যেখানে পথ থেকে পথে, দেশ থেকে দেশে, যুগ থেকে যুগে প্রতিটি মানুষের হাতে খাবারের পাশাপাশি থাকবে একটি করে শুভ্র গোলাপ নয়তো সদ্য বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া একরাশ কদম ফুল।

****

Advertisement

অবিমিশ্রিত চিন্তার দেওয়াল

চিন্তার দেওয়াল জুড়ে বাসা বেঁধেছে অচিন আশ্রমপ্রত্যহ জলকেলি করতে করতে সে দৃশ্য আঁকে আমি তার দিকে চেয়ে থাকি ভগ্ন হৃদয় থেকেকার যেন অস্পষ্ট আওয়াজ ভেসে আসেসে কি মা নাকি প্রেয়সী- নিদারুণ বিরান প্রহরে ভাসছে কারো মুখআমার অবিশ্রিত চিন্তার দেওয়াল জুড়ে তার পদচারণএসো ভিন শতাব্দি থেকে আত্মার কোমলতা ছেড়েবিলিন হও আমার মস্তিষ্কের নিউরনে চারিদিকে মুখোশ মিছিলপাগুলো এগিয়ে যাচ্ছে কেবলই এগিয়ে যাচ্ছে-

****

অনাবিষ্কৃত শীৎকার

বোতলবন্দি হয়ে আছে আমাদের কথাগুলো,কী এক অদ্ভুত শীৎকারে মাছবন্দি হয়ে আছি দুজন, মেঝের টাইলসে শুয়ে আছে খালি ওষুধের খোসা

মাতৃত্বের দাগ- তোমার উদোরএকটা আউট মডেলের ট্যাম্পু ভাঙা গ্যারেজে কর্কশ আওয়াজ তুলছে-ওগো আলাদিন থামাও তোমার রুটি রুটি নাচ

Advertisement

বাজারে উচ্চমূল্য, নকল পুষ্পে ঝড়ছে ফুসরৎধোঁয়ার আব্রু থেকে বেরিয়ে আসছে আব্বুর হাতবোতলের ছিপি খুলে দেখলামএকটা সমুদ্র চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে।

এসইউ/জিকেএস