সারাদেশেই জনপ্রিয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আম। এমনকি বিশ্ববাজারেও সুনাম কুড়িয়েছে বহুবার। তবে এ আম পাওয়া যেত শুধু মৌসুমেই। তবে কিছু ব্যতিক্রমী আম চাষির উদ্যোগে আমের মৌসুম শেষেও মিলছে জিআই সনদপ্রাপ্ত এ আম। কৃষি বিভাগ বলছে, এ সময়ে খিরসাপাত (হিমসাগর) আম ধরানো গেলে সিজনের তিনগুণ হবে আমের দাম। চাঙা হবে জেলার অর্থনীতি। লাভবান হবেন চাষিরা।
Advertisement
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার ৪ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত বছর ছিল ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। এখন আমের মৌসুম প্রায় শেষ পর্যায়ে।
আম চাষিরা বলছেন, খিরসাপাত (হিমসাগর) আম উৎপাদন হয় মূলত মে মাসে। এটি একটি সিজিনাল আম। আর এই আমের সুনাম ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়েই। তবে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকজন চাষি আগস্ট মাসে এ আম গাছে ধরিয়েছেন। এটি ভালো খরব। এটি যদি বাণিজ্যিক আকারে করা যায়, তবে লাভবান হবেন চাষিরা। কারণ সিজনের চেয়ে তিনগুণ বেশি দামে বিক্রি হবে এ আম।
সম্প্রতি জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ভাঙ্গাব্রিজ এলাকার আম চাষি সজিব আলীর বাগানে গিয়ে দেখা যায়, কাটিমন আমের মাঝে মাঝে ঝুলছে ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে সনদপ্রাপ্ত খিরসাপাত আম। আর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এমনকি বাগানেই ১৩-১৫ হাজার টাকা মণ দরে কিনে নিতে চাইছেন ক্রেতারা।
Advertisement
সজিব আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘৩ বছর আগে ৪ বিঘা খিরসাপাত আমের বাগান বর্গা নিয়ে চাষ শুরু করেছিলাম। পরে খিরসাপাত আমের দাম না পেয়ে জাত পরিবর্তন করে কাটিমন করা হয়। এখন কাটিমন আম গাছে ধরে আছে। এরই মধ্যে দেখছি কিছু কিছু গাছে খিরসাপাত আমের জাতের ডাল থেকে গেছে। ডালগুলোতে এখন আম এসেছে।’
আরও পড়ুনলেবু চাষ করবেন যেভাবেমাদারীপুরে ১২ একর জমিতে ড্রাগন চাষে সফল সজীবতিনি আরও বলেন, ‘কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে শেষ মৌসুমেও আম হয়েছে। প্রথমে দেখে বিশ্বাস হচ্ছিল না। আমগুলোর দাম অনেক। ১২-১৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এ সময় যদি খিরসাপাত আম ধরানো যায়। সিজনের থেকে প্রায় তিন-চার গুণ বেশি দামে বিক্রি করা যাবে। পরীক্ষামূলকভাবে এটি করে দেখছি। আশা করছি অসময়েও উৎপাদন করতে পারবো।’
আনারুল নামের এক আম চাষি বলেন, ‘আমাদের বাগানের পাশেই এই আম বাগান। কাটিমন গাছের জাতের সঙ্গে সঙ্গে খিরসাপাত আমও হচ্ছে, তাই দেখতে এসেছি। আমার সিজনাল আমের গাছ আছে কিন্তু আম ধরে না। তাই জাত পরিবর্তন করতে চাচ্ছি।’
শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম বলেন, ‘আগে চাষিরা জানতো না এ সময়ে খিরসাপাত আম উৎপাদন করা যায়। খিরসাপাত গাছে কাটিমন জাতের ডাল গ্রাফটিং করা হয়েছিল। পূর্বের ডালের শিকড় বের হয়ে আম ধরছে। আর কলম করা ডালে তো কাটিমন আম আছেই। তাই চাষিরা এখন পরীক্ষামূলক ভাবেই খিরসাপাত অসময়ে ধরানোর চেষ্টা করছে। এ পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে আম সেক্টরকে আরও এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। তবে এগিয়ে আসতে হবে কৃষি বিভাগকে।’
Advertisement
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ পলাশ সরকার বলেন, ‘কয়েক বছর থেকে অসময়ে আশ্বিনা আম উৎপাদন হচ্ছে। তবে খিরসাপাত এখনো বাণিজ্যিকভাবে হয়ে ওঠেনি। তবে চাষিরা ব্যাপক চেষ্টা করছেন। মূলত সিজনে আমের মুকুল ভেঙে দিয়ে কিছুদিন পরে প্যাকলোবিউটাজল নামক রাসায়নিকের মাধ্যমে অসময়ে আমের মুকুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছেন চাষিরা।’
সোহান মাহমুদ/এসইউ/জেআইএম