সাহিত্য

আতিক মেসবাহ লগ্নর চারটি কবিতা

নির্লিপ্ত প্রতীক্ষা

Advertisement

ক্লান্ত চোখে আসন পেতে বসে ঘুম।দেহ জিরোয়, মন উপসর্গহীন,ছেলেটি আসবে বলেপরাজয়ের সাথে বিদ্রোহ করে জেগে আছে মেয়েটি।

নিস্তব্ধতায় সুনসান রাত,হুইসেলের শব্দে চোরের সতর্কতা,মনের দরজায় চাপা শিকলের বাধা,ছেলেটিকে জড়াবে বলে,উত্তাপ-আয়েশের নেশায় সাড়ে তিন হাতের দেহ।

ছেলেটি কবে আসবে, নাকি আসবে না,মরীচিকার মোহে ভরা আশ্বাসের বিশ্বাসেবাতায়নপাশে ভেসে ওঠে প্রশ্বাসেরা,স্মৃতিরা কালো হয়, আলোরা হারিয়ে যায়,জেগে থাকে স্বপ্নেরা, অভিযোগের পাহাড়ে।সব স্বপ্নই তো অশান্তির প্রসূতি।

Advertisement

****

নির্ঝর মৌনতা

আবেগেরা ঝরে, বিশ্বাসেরা লুকোয়,অবিশ্বাসের আলখাল্লায় ঢেকে যায় শরীর,জেগে ওঠে লজ্জারা, ভেসে ওঠে ক্ষোভঅপ্রেমিকের প্রেম জমে, ঘন হয়,পবনভরা আকাশে নিঃশেষ হয় মেঘ।চিনিখেকো পিঁপড়ার মতোজড় হয়ে আসে অভিযোগেরা।

বিচারকের পদতলে মৌনতার কপাল ঠুকেত্রস্ত পাখির মতো ডানা ঝাঁপটায় দেহ।দিনগুলো ফিরবে ভেবে, সুদিন আসবে বলে,ভুলগুলো ফুল হবার বাসনায়জেগে আছে তিন চোখের মন।এক অহর্নিশ নৈরাশ্য-প্রসূত আত্মার অভিমানেবেঠিক দণ্ডের আত্মহনন।আলতারঙা হৃদয়ের রক্তক্ষরণেকত না-বলা প্রত্যাশারা বেঁচে আছেআগামীর সূর্য দেখবে বলে;সে রাত কি কখনো শেষ হয়?নাকি সমাগত বাস্তবতার উত্তপ্ত বুদবুদেঅস্তিত্বহীন সব কল্পলোকের পসরা।

Advertisement

****

নিরাশ্বাস অপেক্ষা

ষোড়শীর বুকে কামনার তরঙ্গ,হৃদয়ের চাওয়ায় মোহের ক্ষুধা,ছেলেটি ডাকছে, মেয়েটি ইতস্তত,লজ্জার মাথা খেয়ে নিয়েআজন্ম ঐশ্বর্যের সঁপে দেওয়া সুখময় কলঙ্ক,নাকি মনকে শেকলে বেঁধেদ্বিধাবিভক্ত চিন্তার জগদ্দল সমাজকেস্বজাতির শব্দে শিল্পচ্যুত করেনির্লিপ্ত হয়ে অপেক্ষা করবেকোনো এক নিয়তির লেখা পুরুষের!সব পুরুষই তো ছদ্মবেশী ধর্ষক।

****

নিঃসংকোচ প্রতিবাদ

কালোকে ছেড়েছিলে অকালে,বেঁচে থাকার প্রয়োজনে ধরেই নিয়েছিলে,নিস্তব্ধ রাতের তিমিরের বেদিতেমন খারাপের পুষ্পার্ঘ সঁপেদুঃখের সাথে আলোচনা সেরেবদলে নিবে জীবনের পথ।উল্টো, জীবন সমরের তপ্ত ভূমিতেদুর্গন্ধই ধরে বসল জীবনের হাল।বদলানো পৃথিবী, মানুষের মুখ,মুখের মুখোশ, মুখোশের অবয়বসবই তো ধরে বসল;উপড়ে নিলো ভালোবাসা, সম্ভাবনা,বেঁচে থাকার শুভ সংবাদ।

কাঁটাতারের শান্তি চুক্তির ভেদ ভেঙেবিনিময়ে ভিজেছিল অধরের ছাপ।পারস্পরিক শিহরণের আদান-প্রদানেজেকে বসেছিল জীবনের উত্তাপ।সে উত্তাপের ফিকে ঠোঁট আজউষ্ণতা বিনাকারে হিম, প্রাণহীন।জীবনভর আলিঙ্গন ক্ষুধার বক্ষজুড়েসে এক শূন্যতার আর্তনাদ,বার্ধক্যের সংজ্ঞাহীন ফিকে রেখাপাত।

সায়াহ্নের গোধূলি আসবে বলে,কালো মেঘেও ছিল প্রত্যাশার নবপল্লব,সমস্বরে ধ্বনিত ছিল—‘ভালোবাসা দে বাটপার’।উপলব্ধির ঝুলিতে বাজেয়াপ্ত পঙক্তি—‘ভালোবাসার চেয়ে বড় কোন ক্ষুধা নেই,প্রেমের চেয়ে বড় কোন তৃষ্ণা নেই,সুষম বণ্টনে প্রেমের আকাল কাটুক’।

এসইউ/এএসএম