সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারপতির অসদাচরণের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত ও তাকে অপসারণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে তৈরি আইনের যে খসরায় মন্ত্রিসভা সায় দিয়েছে, সে বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক বলেছেন, সংসদ সদস্যের সবাইতো পাগল হয়ে যাবে না। যদি সবাই পাগল হয়ে যায় তাহলে আমরাও সবাই পাগল হয়ে যাবো। সংসদ সদস্যদের এতটা ইররেসপনসিবল (দায়িত্বহীন) ভাবার কোনো কারণ নেই। যদি সংসদ সদস্যদের ওপর আস্থা না থাকে তাহলে কি বিদেশ থেকে ভাড়া করে সংসদ সদস্য নিয়ে আসবো? মঙ্গলবার আইন কমিশনের নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিচারপতি খায়রুল হক। তদন্ত কমিটিতে কারা কারা থাকবেন সে বিষয়ে খায়রুল হক বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতিকে রাখা হয়েছে তার নিরপেক্ষতার জন্য। অ্যাটর্নি জেনারেল বা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান থাকবেন। এছাড়া সমাজের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে তদন্ত কমিটিতে রাখার কথা বলা হয়েছে। আর এখানে দুই তৃতীয়াংশের মতামতের ভিত্তিকে সব কিছু হবে। তদন্তে কিছু না পাওয়া গেলে বাদ যাবে। আর পাওয়া গেলে জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। আবার সংসদ যদি মনে করে দোষ করলেও শাস্তি দেবো না, সেটাও পারেন।’ খসড়ায় প্রধান বিচারপতি মতামত দেননি- সাংবাদিকরা এমন প্রসঙ্গ তুললে তিনি বলেন, ‘সংবাদপত্র মারফত জেনেছি। খসড়াটি সুপ্রিম কোর্টের জাজদের কাছে দেয়া হয়েছে। তারা মতামত দিয়েছেন কি দেননি সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবো না।’এ আইন হলে বিচার বিভাগ সংসদের মুখোমুখি হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংসদ-বিচার বিভাগ মুখোমুখি হওয়ার কারণ নেই। পাকিস্তান ছাড়া বিশ্বের সব দেশে বিচারকদের অপসারণ আইন আছে। তাই আমরা মনে করেছি, আমাদের দেশেও থাকা দরকার। দেশের মালিক জনগণ। তাদের কথা চিন্তা করতে গেলে মনে হয় একটা জবাবদিহিতা থাকা উচিৎ।’এ আইনের প্রয়োজনীয়তার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ব্যতীত কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অপসারণ আইনটা করা খুবই দরকার। তাহলে সবার জন্য ভালো। যদি কোনো বিচারক অপরাধ করেন তখন একজন পুলিশের পক্ষে বিচারকের বিরুদ্ধে কিছু করা সাহসের ব্যাপার। সাহস না পেলে অবিচার হয়ে যাবে।’এ আইন পাস হলে বিচারকদের ওপর কোনো মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব পড়বে কি না- এর জবাবে তিনি বলেন, ‘এডমান্ড বার্কের ভাষায় বিচারকদের মন পাথরের মতো। সুতরাং কোনো প্রভাব পড়বে না। একজন বিচারকের জন্য এসব বিষয়ে কিছু আসে যায় না।’ তদন্ত কমিটিতে কর্মরত বিচারকদের রাখা হয়নি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, ‘সিটিং জাজ (কর্মরত বিচারক) ইচ্ছে করে রাখিনি। বিচারকদের বিব্রত করতে চাইনি। কারণ একজন কলিগ (সহকর্মী) জাজের বিরুদ্ধে এমব্রেসিং (বিব্রতকর) পরিস্থিতিতে ফেলতে চাইনি। আপনারা বিভিন্ন সময় বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত করে কী করবে। তাই বিতর্ক এড়াতে এতো চেষ্টা।’বিচারক নিয়োগে নীতিমালা নেই অথচ অপসারণ নিয়ে আইন হচ্ছে কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়োগেও নীতিমালা হওয়া উচিৎ। চাইলে আমরা অবশ্যই বানিয়ে দেবো। এফএইচ/এনএফ/আরআইপি
Advertisement