পর্যটকদের পদচারনায় মুখর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম নিদর্শন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার নাপিত্তাছড়া ঝরনা। অন্যান্য ঝরনার চেয়ে এ ঝরনার সৌন্দর্য বেশ ভিন্ন। এতে পর্যটকও বেড়ে চলছে সেখানে। এখন বৃষ্টির পানিতে ঝরনা ফিরে পেয়েছে ভরা যৌবন! তাই তো প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে যাচ্ছে শত শত পর্যটক।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্ষায় এই ঝরনা তার পুরো সৌন্দর্যটুকু মেলে ধরে। যাওয়ার পথের ছড়া থেকে শুরু থেকে ঝরনার উৎপত্তিস্থল পর্যন্ত স্বচ্ছ পানিতে ভরা। মাঝে মধ্যে ছোট-বড় পাথর বেয়ে যেমন পথচলা কিছুটা কষ্টকর, তেমনই আনন্দ পাওয়া যায়।
নাপিত্তাছড়া ঝরনার নাম শুনলে হয়তো একটু অদ্ভুত মনে হতে পারে। তবে এই অদ্ভুত নামের ঝরনাটিতে আছে চমৎকার ট্র্যাকিং আর প্রকৃতি দেখার অপার সুযোগ। দেশের যে কোনো স্থান থেকে মিরসরাইয়ের নয়দুয়ার এলাকায় নেমে লোকজন ছুটছে পূর্বদিকে পাহাড়ে।
সেখানকার কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে ঝরনা দেখতে যাওয়ার রাস্তা প্রয়োজনে গ্রাম থেকে একজন গাইড নিয়ে নিতে পারেন। ৪০০-৫০০ টাকায় ৪/৫ ঘণ্টার জন্য গাইড সঙ্গে রাখা ভালো। সেখানে মোট ৪টি ঝরনা আছে।
Advertisement
টিপরাখুম ঝরনা, কুপিটাকুম ঝরনা, মিঠাছড়ি ঝরনা ও বান্দরখুম ঝরনা। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ হেঁটে কিছুটা ক্লান্ত হবেন। তবে যত যাবেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য দেখে মন জুড়িয়ে যাবে আপনার। বড় বড় পাথর আর পানি সঙ্গে বিশাল পাহাড়ের খাদ। দু’পাশে পাহাড় আর মাঝখানে সরু রাস্তা।
মাঝে মধ্যেই বড় বড় পাথর অতিক্রম করতে হবে, কখনো ছোট ছোট পানির গর্ত। আবার কখনো উঠতে হবে পাহাড়ে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির দেখা মিলবে পুরো পথজুড়েই। প্রথম যে ঝরনাটি দেখবেন, তার নাম টিপরাখুম। এই ঝরনার পানি খুব স্বচ্ছ নয়।
এর প্রায় ১০-২০ মিনিট যাওয়ার পর দ্বিতীয় ঝরনা কুপিকাটাকুম। এর সৌন্দর্য বিমোহিত করবে আপনাকে। ঝরনার সামনের পানির অংশটা বেশ গভীর। ঝরনার একদম সামনে যেতে আপনাকে সাঁতার কাটতে হবে। ঝরনার পানি বেশ ঠান্ডা। প্রখর তাপের মধ্যেও আপনাকে স্বস্তি দেবে।
আরও পড়ুন
Advertisement
মিঠাছড়ি ঝরনাতে যাওয়ার সময় পাহাড়ের খাঁড়া ঢাল বেয়ে ওপরে উঠতে হবে। তাই যাদের ট্র্যাকিং করার অভিজ্ঞতা নেই তাদের সতর্ক থাকতে হবে। ২০ মিনিটের মধ্যেই মিঠাছড়ি ঝরনাতে পৌঁছে যাবেন। ঝরনাটির উচ্চতা বেশ। ঝরনার পানি ভাগ হয়ে দুদিকে ভাগ হয়ে যায়। নিজের চোখে না দেখলে বোঝানো মুশকিল। বর্ষার সময় এ সৌন্দর্য অতুলনীয়।
এরপর প্রায় ৪০-৪৫ মিনিট ঝিরি পথ হাঁটার পর পেয়ে যাবেন বান্দরকুম। এই ঝরনা বাকি তিনটার থেকে আরও বেশি উঁচুতে। ঝরনাতে যাওয়ার ঝিরি পথটাও অনেক সুন্দর। বর্ষার সময় এই ঝরনা দেখতে আসাই ভালো। তাহলে ঝরনার সর্বোচ্চ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
চট্টগ্রাম শহর থেকে ৭ বন্ধুসহ ঘুরতে আসেন সরকারি কমার্স কলেজের ছাত্র আরাফাত হোসেন। তিনি জানান, মিরসরাই উপজেলার অন্যান্য ঝরনা দেখা হয়েছে। নাপিত্তাছড়া দেখা বাকি ছিল। এবার কলেজ বন্ধ থাকায় বন্ধুরা মিলে নাপিত্তাছড়ায় আসলাম। চমৎকার ঝরনা। বিশেষ করে বর্ষার পানি ঝরনার সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়েছে।
মিরসরাই উপজেলার ফেনাপুনি এলাকা থেকে কয়েকজন বন্ধু মিলে ঘুরতে যাওয়া শিহাব শিবলু বলেন, ‘নাপিত্তাছড়া ভ্রমণের আনন্দ বললে প্রথমেই বলতে হবে ট্র্যাকিংয়ের কথা। বড় বড় পাথর আর পাহাড়ের গহিনে যাওয়াটা সহজ বিষয় না। সঙ্গে অপূর্ব প্রকৃতি আর অপরূপ ঝরনা। আমরা সব বন্ধুরা মিলে সারাদিন অনেক মজা করেছি।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নয়দুয়ারিয়া বাজারে বেশ কয়েকটি বাস, মাইক্রো, হাইস, নোহা দাঁড়িয়ে আছে। সব গাড়ির যাত্রীর গন্তব্য নাপিত্তাছড়া ঝরনা। এছাড়া অনেক পর্যটক লোকাল বাসযোগে এসে নেমে ঝরনায় ছুটে যাচ্ছেন। কাঁধে ব্যাগ, হাতে ছোট একটি কঞ্চি নিয়ে ছুটছেন তারা। কেউ কেউ গাইড নিয়ে যাচ্ছেন। আবার দুপুর হওয়ার পর থেকে অনেক পর্যটক ঝরনা থেকে ফিরে যাচ্ছেন আপন নীড়ে।
নাপিত্তাছড়ায় কীভাবে যাবেন?
দেশের যে কোনো স্থান থেকে যে কোনো গাড়ি যোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে মিরসরাই উপজেলার নয়দুয়ারিয়া বাজারে নামতে হবে। চট্টগ্রাম শহরের দিক থেকে আসলে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা পার হয়ে পূর্বপাশে যাবেন। এরপর পূর্বপাশের রাস্তা দিয়ে ছোট গাড়ি কিংবা পায়ে হেঁটে ঝরনার দিকে যেতে হবে।
থাকবেন ও খাবেন কোথায়?
মিরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া বাজারে দুটি আবাসিক হোটেল ও সীতাকুন্ডে আরেও কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে। খাওয়ার জন্য ঝরনার রাস্তায় কিছু বাংলা হোটেল আছে। তবে ঝরনা এলাকা থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে আছে বিখ্যাত ড্রাইভার হোটেল।
জেএমএস/এমএস